ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » অর্থ ও বাণিজ্য » বিস্তারিত

শিল্পমন্ত্রীর উষ্মা

বন্ধ সরকারি কারখানায় এখন মাথাভারী প্রশাসন, যারা বসে বসে খাচ্ছে

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৮:১৪:৩৪
বন্ধ সরকারি কারখানায় এখন মাথাভারী প্রশাসন, যারা বসে বসে খাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার : চিনিকলসহ যেসব সরকারি কল-কারখানা এবং সেগুলোর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে, সেগুলোতে বিনিয়োগ করতে বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের চিনিকলসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বিশাল জায়গা নিয়ে রয়েছে। পঞ্চগড় থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় এসব কল-কারখানা আছে, যার অনেকগুলো এখন বন্ধ। মেশিনগুলো পুরোনো হয়ে গেছে, আমরা সেগুলোর আধুনিকায়ন করতে পারিনি। সেখানে এখন মাথাভারী প্রশাসন, যারা বসে বসে খাচ্ছে। এগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আপনারা নেন। এখানে বিনিয়োগ করুন। আমার দেশের যারা বিনিয়োগকারী আছেন, তাদেরকে আমি স্বাগত জানাই।’

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী ‘নবম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো-২০২৩’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) ও রেইনবো এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (রিমন) এ প্রদর্শনীর আয়োজক।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘এসব কল-কারখানায় বিনিয়োগের জন্য আমরা আপনাদের সব ধরনের সুবিধা দেবো। প্রধানমন্ত্রীও চান দেশি বিনিয়োগকারীরা এসব প্রতিষ্ঠান নেবেন, সেগুলো চালাবেন। এগুলো যেন পড়ে না থাকে।’

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক ফল হচ্ছে, অনেক শস্য আছে। আপনারা এগুলো ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করুন, উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা নিন। ইউরোপসহ বিভিন্ন বাজার ধরতে আমাদের সব ধরনের সহায়তা থাকবে। এ খাত অনেক সম্ভাবনাময়, বড় বিনিয়োগগুলো এ খাতে করুন।’

তিনি বলেন, ‘এ সরকার ব্যবসাবান্ধব। আর আপনাদের জন্য শিল্পমন্ত্রণালয় সব সময় খোলা। ট্যারিফসহ সব ধরনের সহায়তা আমরা দেবো। আমাদের রাস্তাঘাট, কার্গো পরিবহনসহ এয়ারপোর্ট উন্নত হচ্ছে। আপনাদের জন্য এগুলো বড় সুযোগ, কাজে লাগান।’

বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন/ ছবি- মাহবুব আলম

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘অনেক সময় ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হন। তবে তাদের কোনোরকম অসম্মান করার ইচ্ছে সরকারের নেই। কখনো কখনো অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হয়ে যায়। তবে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের যে চরিত্র রয়েছে সেটা অসাধু ব্যবসায়ীদের থেকে আলাদা। অসাধু কিছু চোরাকারবারি রয়েছেন, যাদের জন্য প্রকৃত ব্যবসায়ীরা অনেক সময় হয়রানির শিকার হন। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের আমরা শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি।’

এ সময় সার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাসের কারণে সারের কিছুটা সংকট হয়েছিল। সেটা এখন থাকবে না। ঘোড়াশাল-পলাশসহ বিভিন্ন সর কারখানা শিগগির চালু করা হচ্ছে। আমরা এখন এগুলো চালু রাখতে পারলে আমাদের সার আমদানির প্রয়োজন হবে না।’

অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্টোনিও আলেসান্দ্রো, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনিস উদ দৌলা, মেলা কমিটির চেয়ারপারসন ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী, বাপার সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক, সাবেক সহ-সভাপতি শোয়েব হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ইতালির রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘ইতালি বাংলাদেশকে আরও উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা দেবে। আর বাংলাদেশ আরও উন্নতমানের খাবার তৈরি করে ইতালির বাজারে তাদের রপ্তানি বাড়াবে।’

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের জন্য আরও যুগোপযোগী নীতি প্রয়োজন। কীভাবে তারা আরও স্বচ্ছন্দে ব্যবসা করতে পারে সেটা দেখতে হবে। এখনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকারও সে বিষয়গুলো নিয়ে এখন আগের থেকে বেশি কাজ করছেঅ শিগগির এই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করি।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘এ সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় রপ্তানিতে আমরা ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাচ্ছি। আমার মনে হয় না পৃথিবীর কোনো দেশে এই সুযোগ রয়েছে। আমরা সে সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছি। যে কারণে আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আগামীতে আরও সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ব্যবসায়ীরাও সেটার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন।’

তিন দিনব্যাপী নবম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে, যা সবার জন্য উন্মুক্ত। এ মেলায় প্রদর্শনী ছাড়াও কারিগরি সেশনে দেশ-বিদেশে এ খাতের সঙ্গ যুক্ত বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গ দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ম্যাচিং সেশনের ব্যবস্থা থাকছে এ মেলায়।

এ মেলায় ভারত, চীন, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, স্লোভেনিয়াসহ প্রায় ২০টি দেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের পণ্য এবং সেবা প্রদর্শন করছে। এই মেলার সঙ্গে ১১তম অ্যাগ্রো বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৩ এবং ইনডিয়েন্ট এক্সপো ২০২৩ নামে আরও দুটি মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৫ সাল থেকে এসব মেলার আয়োজন করে আসছে বাপা।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩)