প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত
ভালো নেই বাঁশ-বেতের কারিগররা, হারিয়ে যাচ্ছে শিল্প
২০২৩ অক্টোবর ১০ ২০:১০:৫৭![ভালো নেই বাঁশ-বেতের কারিগররা, হারিয়ে যাচ্ছে শিল্প](http://www.u71news.com/article_images/2023/10/10/IMG_20231010_10275175.jpg)
রিপন মারমা, রাঙ্গামাটি : পাহাড়ে ভালো নেই বাঁশ-বেতের কারিগররা, হারিয়ে যাচ্ছে শিল্প। রাঙ্গামাটি দশটি উপজেলা গুটি কয়েক পরিবারের মানুষ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন রাঙ্গামাটি পাহাড় থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও ঐতিহ্যবাহী বেতশিল্প। বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর আর তেমন নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থলি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করলেও এখন বিলুপ্তির পথে এ শিল্পটি।
একসময় বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। এখন সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে চিরচেনা সেই চিত্র। এরপরেও রাঙ্গামাটি কাপ্তাই, জুরাছড়ি, লংগদু, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী, কাউখালি,বরকল, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, উপজেলার গুটি কয়েক পরিবারের মানুষ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। কাপ্তাই উপজেলা বিভিন্ন সরেজমিনে এলাকা গিয়ে দেখা গেছে, অল্প কিছু পরিবার বাপ দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করছেন। বাঁশের দাম বেশি থাকায় লাভ তো দূরের কথা বাঁশের কেনা দামই উঠছে না। তবুও বাপ দাদার চিরচেনা পেশাকেই আঁকড়ে ধরে জীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন। তবে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
কাপ্তাই ইউনিয়ন ব্যাঙছড়ি মারমা পাড়ার গ্রামের হেডম্যান সুইচিংমং মারমা বলেন, এটা আমাদের আদি পেশা। এখন আগের মতো লাভ নেই। তবুও আমরা বাপ দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে থরুন বানিয়ে টুকটাক বিক্রি করছি। বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন টিকে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। লাভ কম হলেও এ পেশায় বেঁচে থাকতে চাই।’ একই গ্রামের সুইখ্যাই মারমা বলেন, এই কাজ হলো বসা কাজ। আমি অন্য কোনো কাজ জানি না। তাই বাধ্য হয়েই বাপ দাদার পেশাতে আছি। তবে আগের মতো লাভ নেই। বাঁশের অনেক দাম। আবার প্লাস্টিকের জিনিস পত্রের কারনে এখন আর বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র নিতে চায় না।’কার্বারী মংসুইহ্লা মারমা বলেন, একসময় বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। এদিকে, এখন আর যেখানে সেখানে দেখা মেলে না আর বাঁশ ও বেত ঝাঁড়। তাছাড়াও প্লাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্যের পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ এখন সেগুলোর ওপর।
এক সময় গ্রামীণ জনপদে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থালী ও সৌখিন পণ্যসামগ্রী। বাড়ির পাশের ঝাঁর থেকে তরতাজা বাঁশ-বেত কেটে তৈরি করতেন হরেক রকমের পণ্য। এসব নিজেদের ব্যবহারের পাশাপাশি, বাজারে বিক্রি করে চলতো তাদের জীবন-যাপন।
তবে এখনো গ্রামীণ উৎসব ও মেলাগুলোতে বাঁশ ও বেতের তৈরি খোল, চাটাই, খোলুই, ধামা, টোনা, মোড়া, দোলনা, বুক সেল্ফ কদাচিৎ চোখে পড়ে। রাঙামাটি বনরুপা বাজারে বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা সান্তনা চাকমা বলেন, বেত শিল্পের দুর্দিনে হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার বেতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছেন। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও পূর্ব পুরুষের হাতেখড়ি এই পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি তারা।প্রতিদিন তাদের তৈরি কিছু পণ্য দোহার, রাজস্থলী ও বিলাইছড়ি গ্রাম-গঞ্জে নিয়ে ফেরি করলে কিছু সৌখিন মানুষ আছে তাদের পণ্য কেনেন। বেলা শেষে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে খাবার কিনে বাড়ি ফেরেন তারা। এভাবেই তাদের জীবন-জীবিকা চলে। বর্তমান দ্রব্যমূল্য বেশি হওয়ায়, স্বল্প আয়ের এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সবমিলিয়ে বাঁশ-বেতের জিনিপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন সংকটে পড়েছেন কারিগররা অপরদিকে মানুষ হারাতে বসেছে প্রাচীন ঐতিহ্য। এভাবে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে গেলে আগামী প্রজন্ম এগুলোর সম্পর্কে জানতে পারবে না। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বাঁশ-বেতের উৎপাদন বাড়িয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো টিকিয়ে রাখা হোক এমনটাই দাবি সচেতন মহলের
(আরএম/এএস/অক্টোবর ১০, ২০২৩)