ঢাকা, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস 

সশস্ত্র বাহিনী আমাদের গর্ব ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক

২০২৩ নভেম্বর ২০ ১৬:১৯:০৮
সশস্ত্র বাহিনী আমাদের গর্ব ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


২১ নভেম্বর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৩ । বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশমাতৃকার সেবার পাশাপাশি বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রেখে যাচ্ছেন। শৃঙ্খলা ও আন্তরিকতা হচ্ছে পেশাগত উৎকর্ষ ও নিজেকে আদর্শ সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি-এ কথা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ভালো করেই জানেন। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদানের কথা স্মরণ করেই ২১ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় সেনা-নৌ-বিমান-এই তিন বাহিনী ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালন করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদানকে স্মরণ করলে আমরা দেখতে পাই, সাত বীরশ্রেষ্ঠের সবাই সামরিক ব্যক্তি। বীর-উত্তমদের মধ্যে একজন ছাড়া আর কোনো বেসামরিক ব্যক্তি নেই। মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার অনেকেই অবসরের পরও দেশকে নানা ক্ষেত্রে সেবা দিচ্ছেন। তবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আরো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমান বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একটি পরিচিত ও আস্থার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্যোগময় পরিবেশে শান্তি স্থাপন করে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তাই এইদিনে আমরা সকল সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সম্মান জানাই যারা যুদ্ধ ও শান্তির সময়ে দেশের সেবা করেছেন এবং করে চলেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সাহসী আত্মত্যাগের ঋণ আমরা কখনোই শোধ করতে পারব না। যারা মুক্তিযুদ্ধে তাদের জীবন হারিয়েছেন এবং যারা শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেসব বীর সেনানী এবং তাদের পরিবারের সদস্য এবং প্রিয়জনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।স্বাধীনতার পর ১৯৮০ সাল থেকে ২১ নভেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এর আগে ২৫ মার্চ সেনাবাহিনী, ১০ ডিসেম্বর নৌবাহিনী এবং ২৮ সেপ্টেম্বর বিমানবাহিনী স্বতন্ত্রভাবে তাদের নিজস্ব বাহিনী দিবস পালন করত। কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে উদ্‌যাপন বাদ দিয়ে ১৯৮০ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মুক্তিযুদ্ধে গোটা সশস্ত্র বাহিনীর যে অসাধারণ লড়াই আর ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে, তাকে স্মরণ রাখতে এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অবদানকে দেশের আপামর জনগণের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয়।

৫২ বছর আগে ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের 'এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম' ভাষণ থেকে জাতি হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। ২১ নভেম্বর ১৯৭১ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন দেশকে শত্রুমুক্ত করতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর বীর সেনানীরা মুক্তি পাগল বাঙ্গালীর সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যৌথভাবে আক্রমণের সূচনা করেছিলেন। বাংলার আপামর জনতা আর সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের সম্মিলিত ও পরিকল্পিত আক্রমণে মুক্তিযুদ্ধে যোগ হয় এক নতুন মাত্রা। এভাবেই দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বরে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ০৩ জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১ হাজার ৫৩৩ জন সেনাসদস্য শাহাদত বরণ করেন এবং ২৯১ জন সেনাসদস্য খেতাবপ্রাপ্ত হন।

২০১৭ সালে আইনমন্ত্রী এক সাংসদ সদস্য'র প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা দুই লাখ চার হাজার ৫৯৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার ১২৫ জন সেনাবাহিনী। ২৫ হাজার ৮১ জন নৌবাহিনীর এবং ১৭ হাজার ৩৯০ জন বিমান বাহিনীর সদস্য আর এই তিন বাহিনীতে প্রায় ২১ হাজার বেসামরিক ব্যক্তি কাজ করছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীতে ১৩ হাজার ৪০৮, নৌবাহিনীতে তিন হাজার ৮০০ এবং বিমান বাহিনীতে ৩ হাজার ৬৮৬ জন বেসামরিক ব্যক্তি আছেন।

দিনটি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত টার্নিং পয়েন্ট। বাংলাদেশ ও ভারতের সেনা সদস্যদের নিয়ে গড়া মিত্র বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

এরপর থেকে প্রতিবছর দিনটিকে স্মরণ করে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হয়। আগে তিন বাহিনী ভিন্ন ভিন্নভাবে দিবসটি পালন করলেও আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে সম্মিলিতভাবে দিবসটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।

১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ সালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় (বর্তমানে মুজিবনগর) বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি), তাজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধানমন্ত্রী করে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন করা হয়।

মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি করা হয়। তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাঠপর্যায়ে সকল ইউনিটসমূহ একত্রিত হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

রণকৌশল হিসেবে বাংলাদেশকে ১১ সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি সেক্টরে একজন জ্যেষ্ঠ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গেরিলা যুদ্ধের জন্য গণবাহিনী সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে গড়ে উঠেছিল।

নিয়মিত যুদ্ধের জন্য সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, ইপিআর, পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটি নিয়মিত বাহিনী গড়ে ওঠে; যা তিনটি বিগ্রেডে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- (১) জেড ফোর্স, (২) এস ফোর্স ও (৩) কে ফোর্স।

বাংলাদেশ ফোর্সেসের অধীনে ১১ সেক্টর ও তিনটি বিগ্রেড ৪ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী গঠনের পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানি হায়নাদের বিরুদ্ধে প্রবল যুদ্ধে তাদেরকে কাবু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর গৌরব শুধুমাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় বাংলাদেশেও সমানভাবে অবদান রেখে চলেছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্বে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশকেই সম্মানিত করেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে শুধু সেসব দেশে শান্তি ফিরিয়েই আনেনি, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রসহ পুনর্বাসন ক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যার জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

১৯৯৭ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি করার পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে অনেক সদস্য জীবন দিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে এলিট ফোর্স র‍্যাবের সদস্য হয়ে রেখে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের নেতৃত্ব দিয়ে সীমান্তকে সুরক্ষা দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

যে কোনো দুর্যোগেই- সেটা প্রাকৃতিক কিংবা মানুষ সৃষ্ট হোক সেসব দুর্যোগে এখনও জনগণের আস্থা ও ভরসার নাম সশস্ত্র বাহিনী। ঘূর্ণিঝড়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে উদ্ধার, ত্রাণ তৎপরতা ও পুনর্বাসনে সামনের কাতারে এসে দাঁড়ায় সশস্ত্র বাহিনী সদস্যরা।

পদ্মাসেতু, জাতীয় মহাসড়ক, ফ্লাইওভার, হাতিরঝিল, মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেসসহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনাসমূহ তৈরিতে রেখে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আমাদের গর্ব ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশেও সংকটের সময় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে বারংবার।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্য সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৮৮ সাল থেকে সেনাবাহিনী, ১৯৯৩ সালে নৌ ও বিমানবাহিনী, ১৯৮৯ সাসে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষী পরিবারের সদস্য হন। জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের ৫৪টিতেই বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, নামিবিয়া, কঙ্গো, উগান্ডা, হাইতি, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, তাজিকিস্তান প্রভৃতি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল।

সশস্ত্র বাহিনী নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবেলা করে জনগণের মধ্যে আস্থা অর্জন করেছে। তার অন্যতম উদাহরণ মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে শারীরিক দূরত্ব ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে কাজ করা।

করোনা মহামারিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে জনগণের পাশে দাঁড়ায় সশস্ত্রবাহিনী। করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ১৬ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্দেশনা নিয়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি সদস্য মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান।

স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে লকডাউন কার্যকর, ত্রাণ সহায়তা, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ করোনা মোকাবেলায় রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পেশাগত দায়িত্ব পালনের সঙ্গেসঙ্গে দেশ ও জাতির উপর অর্পিত দায়িত্বও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করে আসছে। ছবিসহ ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরি করে দেশে-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব সময়ই দুর্গত মানুষের পাশে থেকেছে। ২০০৭ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালে আইলা এবং অতিসম্প্রতি আম্ফানের সময় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা হয়েছে জনগণের কাছে প্রশংসিত। আর বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পরপরই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। দেশের প্রথম প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই তৈরি হয় একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা নীতি ও সশস্ত্র বাহিনী। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও তাদের কার্যক্রমের সাফল্য গাথা বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হবে এই দিবসটি উদযাপনের তাৎপর্য। ২১ নভেম্বরের তাৎপর্য সমুন্নত রাখতে সম্মিলিত দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালনের পেছনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সক্রিয়। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর অবদানকে সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয় এ দিবসটিতে।

পরিশেষে বলতে চাই, জাতির জনকের অনেক স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ বিশ্ব অঙ্গনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হবে। তাই পাহাড়সম সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রারম্ভেই সেনাবাহিনীর মর্যাদার প্রতীক মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করলেন। প্রথম অফিসার ব্যাচের পাসিং আউট প্যারেডে উপস্থিত হয়ে সালাম গ্রহণ করলেন। তারপর ভাষণে বললেন, ‘তোমরা আমার সন্তান, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, তোমাদের মনে যেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেন্টালিটি না আসে, তোমরা হবে আমার জনগণের সেনাবাহিনী।’

বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আর একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দেখা অত্যন্ত গর্বের, আনন্দের এবং সৌভাগ্যের বিষয়। আধুনিক যুগের প্রারম্ভে বিশ্ব অঙ্গনে যেসব সেনাপতির নাম এখনো সমুজ্জ্বল তাঁর মধ্যে সম্রাট নেপোলিয়ন অন্যতম। বন্দি অবস্থায় নির্জন সেন্ট হেলেনা দ্বীপ থেকে জীবনের শেষ প্রান্তে ছেলেকে এক চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, পৃথিবীতে দুটি শক্তি আছে। প্রথমটি চেতনার শক্তি, আর দ্বিতীয়টি অস্ত্রের শক্তি। শেষ বিচারে সব সময় চেতনায় মহিমান্বিত শক্তির কাছে অস্ত্র শক্তির পরাজয় ঘটেছে। আমাদের একাত্তরও তার উজ্জ্বল উদাহরণ। সুতরাং অফুরন্ত শক্তির জায়গা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সমৃদ্ধ থাকবে—সেটাই জনমানুষের প্রত্যাশা। সব বাহিনীর সব সদস্যকে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অভিনন্দন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক।