ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » কৃষি » বিস্তারিত

হাওর পাড়ের সফল কৃষক মানিক দাস

শুধু খিরা বিক্রি করেই বছরে আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা

২০২৪ এপ্রিল ২০ ১৭:২৬:০১
শুধু খিরা বিক্রি করেই বছরে আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : হাওর তীরের সফল কৃষক মানিক চন্দ্র দাস। ২৫ বছর ধরে সম্পৃক্ত কৃষি কাজে। ভাগ্য বদলের আশায় ৯৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশ কাতারে গিয়েছিলেন। সেখানে ৩ বছর কাজ শেষে ১৯৯৬ সালে ফিরে আসেন নিজের গ্রাম শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বৌলাশীর এলাকার হাওর-পাহাড় আর চাবাগান বেষ্টিত কান্দিপাড়া গ্রামে। গ্রামে ফেরার পর পরিবারের সক্ষমতা বাড়াতে মনযোগ দেন কৃষিতে। অবশ্য প্রবাসে যাওয়ার আগেও তিনি জড়িত ছিলেন কৃষিতে। এখন নিজের পৈত্তিক কৃষি জমিতে বছর জুড়ে নানা জাতের শাক-সবজি চাষ করেন তিনি। শুধু খিরা বিক্রি করেই আয় করেন ৩ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে হাওর তীরের কান্দিপাড়া এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা হয় এই কৃষকের সাথে। এসময় ওই এলাকার কৃষি আর কৃষকদের প্রসঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় তাঁর সাথে। সেখানে মানিক চন্দ্র দাস এর সাথে নিজের দুই ছেলে সহ অন্য আরেক শ্রমিক মিলে ক্ষীরা উত্তোলনের কাজ করছিলেন। কাজের ফাঁকেই কথা বলছিলেন এই প্রতিবেদকের সাথে। তিনি জানান, কৃষি ক্ষেতের আয়-উপার্জন থেকেই চলে তাঁর সংসার। আক্ষেপ করে বলেন, ঘাম-শ্রম আর অর্থে ফলানো কৃষি পণ্য যে দামে পাইকাররা ক্রয় করেন তার থেকে তিনগুণ বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন তাঁরা। এতে করে কৃুষকরা পাননা প্রকৃত মূল্য। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহ সরকারিভাবে কোন সহায়তা পাননা বলেও দাবি করেন তিনি।

ওই এলাকার একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত দুই বছর খড়ার কবলে পড়ে তাঁরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কোন ধরণের সহযোগিতা করেনও না, কখনো আসেনও না। বিজ সহ সরকারি কোন সহায়তাও পাননা এখানকার কৃষকরা। বিজ সহ সবকিছু শ্রীমঙ্গল থেকেই সংগ্রহ করতে হয় তাদের।

মানিক চন্দ্র দাস বলেন, শসা ফলনে খরচ বেশি হলেও প্রতি কিয়ার ক্ষীরা ফলনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। প্রতিদিন অন্তত ৭ মণ ক্ষীরা উত্তোলন করা যায়। প্রতি কেজি খিরা বিক্রি হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। তবে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ক্ষীরা বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। সব মিলিয়ে খরচ বাদে প্রতিদিন ৬ হাজার টাকার ক্ষীরা বিক্রি সম্ভব হয় বলে জানান এই কৃষক।

মানিক চন্দ্র যে জমিতে ক্ষীরা রোপন করেছেন সেখানে ৩৭ শতক জমি রয়েছে। হাইল হাওর পাড়ের ওই কৃষি জমিগুলো এককালে হাওরেরই অংশ ছিলো। তবে কৃষি উপযোগি ছিলোনা। নাব্যতা সঙ্কটের কারণে পলি জমে সৃষ্টি হয় চর। সেই থেকে ওই এলাকার কৃষকরা বছর জুড়ে নানা জাতের শাক-সবজি চাষ করে আসছেন। ওই এলাকায় মানিক চন্দ্র দাস এর মতো আরও অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন কৃষক রয়েছেন খিরা চাষের সাথে যুক্ত। শুধু কান্দিপাড়া গ্রাম নয়, হাওপাড়ের আশপাশের বৌলাশী, যাত্রাপাশা সহ পুরো মির্জাপুর ইউনিয়নে ক্ষীরা সহ বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ করছেন প্রায় শতাধিক কৃষক।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা রিংকু লাল এস জানান, মির্জাপুর ইউনিয়নে সর্বমোট ১৬৪ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি উৎপাদন হয়।

কৃষকদের কাছ থেকে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনিয়ের কৃষকরা প্রতিদিন প্রায় ৭ শ মণ ক্ষীরা উত্তোলন করেন। উত্তোলন করা এসব ক্ষীরা জেলার সীমানা পেড়িয়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

পুরো কান্দিপাড়া গ্রামের পাশের হাওর তীরে শতশত একর কৃষি জমিতে কাঁচা মরিচ, মিষ্টি লাউ, কুমড়া, পানি লাউ, লাল শাঁক, কচুর লতি, সিম, ঢেঁড়শ, মুকি, শসা, ক্ষীরা সহ নানা জাতের সবজি চাষ করে আসছেন এখানকার কৃষকরা। টাটকা এসব শাক-সবজি পুরো জেলা জুড়ে এখান থেকে পাইকাররা নিয়ে যান।

কৃষকরা জানান, ফসলের মাঠ জুড়ে পোঁকা-মাকড়ের উপদ্রব থাকলেও তা প্রতিরোধে এখানকার কৃষকরা ক্ষতিকারক কোন কিটনাশক ব্যবহার করেন না। ফলে এখানকার উৎপাদিত শাক-সবজি বেশ নিরাপদ।

মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিসলু আহমেদ চৌধুরী জানান, আমাদের এলাকা কৃষির জন্য বেশ সম্ভাবনা। তবে এখানকার কৃষি উৎপাদনে সবচেয়ে বড় সমস্যা পানি। এই সমস্যা নিরসনে প্রয়োজন অন্তত তিনটি সুইচগেট নির্মাণ। এক্ষেতে তিনি বিএডিসির সহায়তাও চান।

সাধারণত পৌষের শেষের দিকে আর মাঘের শুরুতে এখানকার কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেন। ফালগুন মাস থেকে শুরু হয় উত্তোলন। চলে বৈশাখ মাস পর্যন্ত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, ধানের বিজ ছাড়া শাক-সবজির বিজ কৃষকদের দেয়া হয়না, তবে এখানকার কৃষকরা যাতে কৃষি সহায়তা পান সে বিষয়ে আমি শীঘ্রই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়াও কৃষকদের খোঁজখবর নেয়ার জন্যও সেখানকার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেবেন বলে জানান জেলার শীর্ষ এই কৃষি কর্মকর্তা।

(একে/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০২৪)