ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রউফ উন নবী

২০২৪ এপ্রিল ২৭ ১৮:৪৬:৩২
ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রউফ উন নবী

রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করলেন ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রাউফ উন নবী।

আজ শনিবার সকালে ফরিদপুর প্রেসক্লাব অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন মোল্লা মিলনায়তনে উক্ত সংবাদ সম্মেলন করেন।

প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম পিকুলের সঞ্চালনায় এ সময় ক্লাবের সদস্য বৃন্দ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রউফ উন নবী।

রউফ উন নবীর বক্তব্যটি হুবুহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ
আসসালামু আলাইকুম।
আপনারা সকলেই অবগত আছেন, ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ফরিদপুর সদর উপজেলায় আমি একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। জনগণের আশা এবং ভালোবাসা নিয়ে আমি তাই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি ভোট প্রার্থনা করতে। আমার মার্কা হেলিকপ্টার।

আপনাদের সামনে আমি আজ বিশেষ একটি কারণে হাজির হয়েছি একটি বিশেষ বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। সম্প্রতি দেশের একটি প্রথম সারির টেলিভিশন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতাদের সাক্ষাৎকার সরাসরি লাইভে প্রচার করে। তারা আমাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে একেবারে শুরুতেই দীর্ঘক্ষণ নানা প্রশ্নে আমার বক্তব্য জানতে চায়। তবে আমি নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যস্ততা ও কিছুটা অপ্রস্তুত থাকার কারণে পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে সেখানে এমনকিছু বক্তব্যের অবতারণা করি, যা দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আমার জন্য বিব্রতকর বটে। এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্যই আমি আপনাদের দ্বারস্থ হয়েছি। আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই, জীবনের শুরু লগ্ন হতে আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী, বারবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, আমাদের সকলের ভালবাসার ও আশা ভরসার স্থল, আমাদের প্রিয় অভিভাবক মরহুম জননেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের হাত ধরে আমার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া এই রাজনৈতিক দলে আগমন।

প্রিয় নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ভাইয়ের সাথে এই বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমি দলের নেতাকর্মীদের সাথে পথে প্রান্তরে ঘুরে বেরিয়েছি। জমির ধান বিক্রি করে আমি কামাল ভাইয়ের নির্বাচন করেছি। আর তার ফলস্বরূপ আমরা যেমন কামাল ভাইকে বারবার বিজয়ী করে এমপি-মন্ত্রী বানিয়েছি, তেমনি আমাদেরও জনগণ তাদের আস্থায়-ভালবাসায় স্থান দিয়েছে। সদর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমাকে বারবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছে আমার জনগণ।

আমার পরিবারের পূর্বসূরিগণ আলফাডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারের সন্তান। একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের রক্ত আমার শরীরে প্রবাহিত বিধায় আমি আমার নিজের ও নিজের পরিবারের মান ইজ্জতের মতোই দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মান ইজ্জতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। কিন্ত গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চার নিয়ম হলো প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই সূত্রে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিতেও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমি দলের কোতোয়ালি থানা কমিটির সেক্রেটারি ও ভাইস প্রেসিডেন্টের দ্বায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে সক্ষম হওয়ায় আমাকে পরবর্তীতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং দলের সভাপতির পদের প্রতি লালায়িত হয়ে কিছু ব্যক্তি আমার সম্মন্ধে দলীয় ফোরামে নেতিবাচক কথাবার্তা ছড়াচ্ছে।

তাদের কারণে এবং নির্বাচনের ব্যতিব্যস্ততার কারণে আমি ওই টেলিভিশনের উপস্থাপকের তাৎক্ষণিক প্রশ্নে চিন্তাভাবনার যথেষ্ট সময় না পাওয়ায় মুখ ফসকে কিছু কথা বলে ফেলি। যা কোনভাবেই আমার মনের কথা না এবং এসব হয়তো রাজনীতির ময়দানের কথার কথা; কিন্তু সত্য কিংবা তথ্য নির্ভর না।
আমার ওই বক্তব্যে অনেকের মতো আমি নিজেও কষ্ট পেয়েছি এবং নিজেই মর্মাহত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আমি আমার অনিচ্ছাকৃত এই বক্তব্যের আর পুনরাবৃত্তি করতে চাইনা এবং আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী তথা আমার নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণ ও বিএনপি সহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের জানাতে চাই যে, আমি বিএনপিতে ছিলাম, বিএনপিতে আছি, বিএনপিকে থাকবো ইনশাআল্লাহ মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত।

আপনারা জানেন, দলের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণে ইতোপূর্বে আমাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করার একটি কথা ছড়ানো হয়েছিলো। আমি সেই অপপ্রচারকে মোকাবেলা করেই তারপর থেকে বিএনপির রাজনীতি করে আসছি। বর্তমানে ১৮টি রাজনৈতিক মামলার আসামি আমি। বারবার আমাকে কারবরণ ও অমানুষিক নির্যাতন আমাকে সহ্য করতে হয়েছে রাজনৈতিক কারণে।

আমার ওই টিভি সাক্ষাৎকারে দেয়া বক্তব্যের পর আমাকে তারা দল থেকে নতুন করে আবারো বহিষ্কার করার কথা বলে বেড়াচ্ছে। এক ব্যক্তিকে কতবার বহিষ্কার করা যায় আপনারাই ভালো জানেন। তাদের এই নতুন বহিস্কারের কথার মাধ্যমে আসলে তারা এটিই প্রমাণ করলো যে, আমার আগের বহিষ্কারাদেশ সঠিক ছিলোনা। অথচ একারণে তারা দলীয়ভাবে চরম কোনঠাসা করে রাখার সুযোগ নিয়েছে। আমি বলতে চাই, আগেরবারের মতো আমাকে দল থেকে তাদের এবারের বহিষ্কারাদেশও সঠিক নয়। আসলে তাদের এমন কোন এখতিয়ার কিংবা যুক্তিযুক্ত কারণও নেই বলে আমি মনে করি।

প্রকৃত কথা হচ্ছে, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না কিংবা বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না এমন সিদ্ধান্ত আসার আগেই আমি নির্বাচনে যাই। যেহেতু আমার পারিবারিকভাবে নির্বাচনমুখী একটি চর্চা রয়েছে এবং জনগণ বিভিন্ন কারণে আমাদের নিকট আসে, তাই তাদের কারণেই আমি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত যখন আমি জানতে পারি, তখন আর নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর মতো অবস্থা আমার ছিলোনা।

আমি এখনো দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, আমি শহীদ জিয়ার আদর্শের একজন সৈনিক। চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মতো অভিভাবককে হারিয়ে আমাদের মাঝে নেতৃত্বের যেই শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা অপূরণীয়। আমি মনে করি, এই মুহুর্তে আমাদের মাঝে ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বয়কট করেছে এটি সঠিক। আমি দলের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করছি না। তবে আমার এলাকার নেতাকর্মীরা আমাকে সামনে রেখে নির্বাচনের যেই প্রস্তুতি নিয়েছিলো তাতে আমার আসলে নির্বাচন থেকে ফিরে আসার কোন সুযোগ ছিলোনা। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হলে দলীয় ফোরামে এই বিষয়টি আমি বিশদ ব্যাখ্যা করবো আশারাখি।

এটি সত্য যে, এই ডামি নির্বাচনের সরকারের আমলে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠ নির্বাচন বাস্তবায়ন করা দুরূহ বিষয়। তারপরও আসলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার সুযোগ না থাকায় আমাকে নিতান্ত বাধ্য হয়েই এ নির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে। শহীদ জিয়ার মতোই আমি মনে করি জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণ সোচ্চার হলে সবকিছুই সম্ভব। সেই আশাতেই আমি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবেই এখনো নির্বাচনের মাঠে দাড়িয়ে আছি। এই মুহুর্তে সকলের নিকট আমার একান্ত অনুরোধ, কামাল ভাইয়ের চষে যাওয়া ফরিদপুর সদরে আমাদের এই মাটি বিএনপির ঘাঁটি। আমি মনে করি এই জনপদে আমাদের উপরে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরচারের প্রতিনিধি হটিয়ে জনগণের প্রতিনিধিকে আনতে হলে নির্বাচনের অংশ নেয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

আমি আবারো আমার টিভি সাক্ষাৎকারের জন্য এবং দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ক্ষমাপ্রার্থী। সকলের নিকট অনুরোধ, স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আসুন আমরা ফরিদপুরে উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিজয় পতাকা উড়িয়ে দেই।
সকলকে ধন্যবাদ।

(আরআর/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০২৪)