ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

প্রচ্ছদ » পাশে দাঁড়াই » বিস্তারিত

অদম্য মেধাবী এক কিশোরের গল্প, ভালো কলেজে ভর্তি নিয়েও সংশয়

২০২৪ মে ২৩ ২০:৩৪:৩১
অদম্য মেধাবী এক কিশোরের গল্প, ভালো কলেজে ভর্তি নিয়েও সংশয়

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : অদম্য মেধাবী এক কিশোরের গল্প। কথা সাহিত্যিক হুমায়ন আহম্মেদের শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে লেখাপড়া করত। বাবার আর্থিক দৈন্যতার কারনে যে স্কুল থেকে এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে সেই স্কুলের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজে শ্রমিকের কাজ করেছে নিজের পরিচয় গোপন রেখে। নাম তার মোশারফ। মা মোছা: নাজমা খাতুন জানান, তার ৩ ছেলে এবং ১ কন্যার মধ্যে মোশারফ হোসেন রাব্বি সবার বড়। লেখাপড়ায় তার খুব আগ্রহ।

কোনদিন তাকে স্কুলে আসা যাওয়া করার জন্য বা পড়ার জন্য তাগিদ করতে হয়নি। নিজের অদম্য উৎসাহ নিয়ে সে লেখা পড়া করেছে। পরিক্ষার কিছুদিন আগেও মুখে কাপড় দিয়ে বেধে মুখ ঢেকে রাজমিস্ত্রির কাজে শ্রমিকের কাজ করেছে। উপার্জিত টাকা মায়ের হাতে দিতে গিয়ে সে আবেগ আপ্লোত হয়ে মাকে বলেছে বাবার কষ্ট হয় তাই বাবাকে সাহায্য করতে আমি স্কুলে গিয়ে মুখ বেধে মুখ ঢেকে শ্রমিকের কাজ করেছি। অবশেষে মানবিক বিভাগ থেকে অদম্য এই মোশারফ জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়েও রয়েছে বেদনার কথা।

কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ী আমতলা ইউনিয়ের কুতুবপুর গ্রামে কথা সাহিত্যিক হুমায়ন আহম্মেদের পৈতৃক বাড়ির পাশেই হুমায়ন আহম্মেদ গ্রামের পিছিয়ে পরা ছেলে-মেয়েদেরকে আধুনিক, বিজ্ঞান ও মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে নিজ হাতে গড়ে তোলেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, ২০২৪ সালের এসএসসি পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ১২ মে। প্রকাশিত এই ফলাফলে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ৪৯ জন পরিক্ষাথীর মধ্যে ৪৮ জনেই জিপিএ-৫ পায়।

১২ মে কৃতিত্ব পূর্ণ ফলাফল অর্জনের জন্য আনন্দ উৎসব করেন বিদ্যাপীঠের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত সহ সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ। সেদিন আনন্দ উৎসবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদারও গিয়েছিলেন কৃতী শিক্ষাথীদের ফুল দিয়ে বরন করতে। ৪৯ জনের মধ্যে ৪৮ জন জিপিএ-৫ পায় কিন্তু শুধু মাত্র সামান্য পয়েন্টের কারণে জিপিএ-৫ পায়নি মোশারফ। সেদিন লোক লজ্জার ভয়ে আনন্দ উৎসবে যায়নি। বাড়িতে বসেই কান্না করছিল মোশারফ। পরে শিক্ষকদের সহায়তায় ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করে। ২৩ মে তার পুনরায় ফলাফল প্রকাশ পায়। এতে মোশারফ হোসেন মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়।

মোশারফের মা মোছা: নাজমা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলের ফলাফলে আমরা খুব খুশি। তাই স্কুলে গিয়েছিলাম স্যারদের মিষ্টি খাওয়াতে এবং কিভাবে ভালো কলেজে ভর্তি করাবো এবং লেখাপড়া করাবো সে বিষয় জানতে বুঝতে। মোশারফের লেখাপড়া করার খুব আগ্রহ। কিন্তু আমাদেরতো টাকা পয়সা নাই। কিভাবে ভালো কলেজে লেখাপড়া করাবো এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। মোশারফ লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চায়। তার সেই স্বপ্ন পূরনের জন্য মোশারফের মা-বাবা সরকার তথা সমাজের বিত্তশালীদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন মোশারফ আমার অজানা গল্প তার অদম্য উৎসাহ ও মেধাকে এগিয়ে নিতে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সুদৃষ্টি ও সহানুবুতি কামনা করছি। তিনি বলেন, আসুন অদম্য এই মেধাবীর জন্য সকলেই দানের হাত প্রশস্ব করি। তিনি মোশারফের বাবার ০১৭৭০০৩১৬৭৪ নাম্বারে প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য আহব্বান জানান।

(এসবিএস/এএস/মে ২৩, ২০২৪)