ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত

দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমেই একটি দেশের সর্বাত্মক উন্নতি সম্ভব

২০২৪ জুলাই ১০ ১৯:৩১:৩৭
দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমেই একটি দেশের সর্বাত্মক উন্নতি সম্ভব

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৪। প্রতি বছর ১১ জুলাই তারিখে পালিত একটি বাৎসরিক আয়োজন, যার লক্ষ্য বিশ্ব জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উপরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই বছরের প্রতিপাদ্য হলো অর্ন্তভূ‌ক্তিমূলক উপাত্ত ব্যাবহার করি, সাম্যের ভিত্তিতে সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ি"।' বাংলাদেশ, বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ; বর্তমানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রজনন হার অনেক কমেছে, শিশু মৃতু্যহারও অনেক কমেছে। তবে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

জনশুমারি ও গৃহগণনার ২০২২-এর ভিত্তিতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। বাংলাদেশে সর্বশেষ চূড়ান্ত জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সেই হিসাবে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৯ জন বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৩ বছরে, যা ২০২২ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ৪ বছর। দেশে এক বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রতিবেদনে বলা হয়, জনশুমারি ও গৃহগণনার ২০২২-এর ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। যেখানে নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ জন।

সেই হিসাবে দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ সালের ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৩.৫২ মিলিয়ন। যেখানে নারী ৮৮.৩৭ মিলিয়ন এবং পুরুষ ৮৫.১৫ মিলিয়ন। পাশাপাশি জনশুমারি ও গৃহগণনার ২০২২-এর ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭১.৫৯ মিলিয়ন। যেখানে নারী ৮৭.৩৯ মিলিয়ন এবং পুরুষ ৮৪.২০ মিলিয়ন।

বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার বিন্যাস মধ্যে : ০-৪ বছর বয়সী ১০.২২ শতাংশ, ৫-১৪ বছর বয়সী ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ১৫-২৪ বছর বয়সী ১৮.৬৭ শতাংশ, ২৫-৩৯ বছর বয়সী ২২ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৪০-৪৯ বছর বয়সী ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ৫০-৫৯ বছর বয়সী ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ৬০-৬৪ বছর বয়সী ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ৬৫+ বছর বয়সী ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ।

এদিকে গড় আয়ু কমলেও জরিপের কর্মকর্তারা বলছেন ২০২৩ সালে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল পরিসংখ্যানিকভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০২২ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২.৪।

যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৭২.৩ বছর। জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১.৩৩% যা ২০২২ সালে ছিল ১.৪০%। লিঙ্গ অনুপাত কিছুটা নিম্নমুখী, যা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ৯৬.৩% এবং নির্ভরশীলতার অনুপাত ৫৩.৭%। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১ হাজার ১৭১ জন। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল জন্মহার ১৯.৪, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯.৮।

দেশে এক বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের হার ২০২২ সালের (৫৮.৬%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৪৯.৩ শতাংশ এবং অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে প্রসবের হার ২০২২ সালের (৪১.৪%) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৫০.৭ শতাংশ। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল মৃত্যুহার ৬.১, যা ২০২২ সালে ছিল ৫.৮। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৩ এবং প্রতি লাখ জীবিত জন্ম শিশুর বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৩৬ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৫৩ জন। মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের প্রথম কারণ-হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর হার ১.০২% এবং দ্বিতীয় কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হার ০.৬৪%। পুরুষদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স ২৪.২ বছর এবং নারীদের ১৮.৪ বছর। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পল্লীতে আগমনের হার ২০.৪ এবং শহরে আগমনের হার ৪৩.৪। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অভিগমন প্রতি হাজারে ৬.৬১ জন থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮.৭৮ জন।

আন্তর্জাতিক আগমন বহিরাগমন প্রতি হাজারে ২.৯৭ থেকে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২.৩৭ জন। ২০২৩ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ সালের (৬৩.৩%) তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬২.১ শতাংশ, জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের (১৬.৬২%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ১৫.৫৭ শতাংশ হয়েছে। খানার আকার ২০২২ সালের ন্যায় ২০২৩ সালেও অপরিবর্তিত রয়েছে, যা ৪.২ জন। তবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে নারী খানাপ্রধানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে এটি ছিল ১৭.৪%, যা ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮.৯%। অপরদিকে পুরুষ খানাপ্রধান ২০২২ সালে ছিল ৮২.৬%, ২০২৩-এ হার হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৮১.১%।

২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭.৫৩ শতাংশে। সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৭৭.৯ শতাংশ এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৪.৪) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫.৬ শতাংশ।

এ ছাড়া শিক্ষা, কর্মে কিংবা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণের সংখ্যা ২০২২ সালের (৪০.৬৭%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ৩৯.৮৮ শতাংশ হয়েছে। ৫+ বয়সী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৫৯.৯ শতাংশ। তবে ১৫+ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৩.৮) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪.২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৫+ বছর বয়সীদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হার ৫০.১%। পূর্বের চেয়ে মাতৃমৃত্যু হার লক্ষণীয়ভাবে কমে আসা এবং দেশের সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার যে জনকল্যাণে কাজ করছে তা দুটি সূচক দেখে সহজেই অনুমান করা যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, যা সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থার প্রতিফলন।

সিজারিয়ান ডেলিভারির হার বেড়েছে : দেশে এক বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে মোট প্রসবের ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল সিজারিয়ান ডেলিভারি। স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের (এসভিআরএস) প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২৩ সালে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার বেড়ে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। এটি উদ্বেগজনক এবং বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যু হারও বেড়েছে। ২০২২ সালে যেখানে প্রতি হাজারে ৩১ জন শিশু মারা গিয়েছিল, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ জনে। ২০২২ সালে এক মাসের কম বয়সী প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে মারা যায় ১৬ জন, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ জনে। ২০২২ সালে এক বছরের কম বয়সী প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে মারা যায় ২৪ জন, ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ জনে।

এ ছাড়া, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৩ বছরে, যা ২০২২ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ৪ বছর। আলমগীর হোসেন বলেন, এটি আয়ু হ্রাস নয়, কারণ সংখ্যাটি পরিসংখ্যানগতভাবে অতি নগণ্য। আমরা বলব এটি অপরিবর্তিত রয়েছে।

শহরের বস্তিতে বরিশালের মানুষ বেশি : মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ পরিবার বসবাস করে শহরাঞ্চলের বস্তিতে। এদের মধ্যে বরিশাল এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি। জরিপ অনুযায়ী বস্তির প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ পরিবার বরিশালের। এর পরই আছে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের মানুষ। ৪ ও ৫ নম্বরে আছে কুমিল্লা ও নেত্রকোনার মানুষ। বিবিএসের জরিপের তথ্যমতে, বস্তিবাসীর মধ্যে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ পরিবার এসেছে মংমনসিংহ জেলা থেকে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে এসেছে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ পরিবার। এরপর কুমিল্লা থেকে এসেছে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ পরিবার। পঞ্চম অবস্থানে থাকা নেত্রকোনা জেলা থেকে এসেছে ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ পরিবার।আর দেশে বর্তমানে মোবাইল অপারেটর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৯ কোটি ১৩ লাখ। তবে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। যা মোট ব্যবহারকারীর ৫৬ শতাংশ। এছাড়া ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ ফোরজির আওতাভুক্ত।

আলোচনায় বলা হয়, মোট মোবাইল অপারেটর ব্যবহারকারীর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৭৪ লাখ। এছাড়া বর্তমানে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) ব্যবহার করছে ২১ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহক।

মোবাইল টেলিকম অপারেটররা জানান, দেশের জাতীয় জিডিপিতে টেলিকম খাত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮ শতাংশ অবদান রাখছে। নানাভাবে নিজেদের মোট আয়ের ৫১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স দেয় মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো।

জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে? যেমন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানের চাপ, দারিদ্র্যতা দূর করা, দক্ষ মানবসম্পদের মাধ্যমে বেকারত্বের লাগাম টানা, পরিবেশ সচেতনতার মাধ্যমে এর পরিচর্যা নিশ্চিত করা এবং নারীর ক্ষমতায়নের কাজ করা।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও টেকসই উন্নয়ন অর্জনে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে দেশের তরুণ জনসংখ্যা, ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং সরকারের প্রতিশ্রম্নতি এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সহায়তা করবে। 'বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৪' আমাদের সবাইকে সচেতন করে তোলে যে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জনসংখ্যা নীতি ও কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৮৭ সালের ১১ জুলাই তারিখে বিশ্ব জনসংখ্যা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলে সারা বিশ্বের জনমানুষের মধ্যে যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়, তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালনা পরিষদ এই দিবসটি প্রতিষ্ঠা করে। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের লক্ষ্য হলো পরিবার পরিকল্পনা, লিঙ্গসমতা, দারিদ্র, মাতৃস্বাস্থ্য এবং মানবাধিকারের মতো জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

বিশ্বব্যাংকের ‘বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদন-২০২১’ অনুযায়ী ২০২১ সালের শেষে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৭৮৭ কোটি ৫০ লাখ। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৭০ কোটিতে পৌঁছেছিল। এটি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩০ সালে ৮৫০ কোটি, ২০৫০ সালে ৯৭০ কোটি এবং এবং ২১০০ সালে গিয়ে ১০৯০ কোটিতে পোঁছাতে পারে বলে জাতিসংঘ অনুমান করছে। ২০৫০ সালের মধ্যে যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, তার অর্ধেকের বেশি সংঘটিত হবে ৯টি দেশে; এগুলি হল ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৭ সাল নাগাদ ভারত চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, জনসংখ্যা একটা দেশের জন্য আশীর্বাদ ও অভিশাপ দুটোই হতে পারে। সেটা নির্ভর করছে সেই দেশ তার জনসংখ্যাকে কীভাবে লালন করছে। জনসংখ্যা যখন দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ও সামাজিক ক্ষেত্রে কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে তখন সেই জনসংখ্যা আশীর্বাদপুষ্ট হয়। অন্যদিকে, দেশের সম্পদ ও কর্ম ক্ষেত্রের তুলনায় যখন বেকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন একটা দেশের জন্য জনসংখ্যা অভিশাপ হয়ে যায়।আর মনুষ্য পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যই তাদের নিজস্ব বুদ্ধি, বৈচিত্র্যতা এবং অস্তিত্বের দ্বারা আমাদের বৈশ্বিক ঐতিহ্যকে করেছে সমৃদ্ধ। তবে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক, অভ্যন্তরীণ-আন্তর্জাতিক, মানবসৃষ্ট-প্রাকৃতিক কারণে এই পরিবার জর্জরিত এবং সব মানবজাতির অস্তিত্ব হয়েছে হুমকির সম্মুখীন। কিন্তু এ কথা ভুলে গেলেও চলবে না যে, দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তিই একটি করে উজ্জ্বল আশার প্রদীপ। আর ১৯৯০ সালের ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো ৯০টি দেশে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উদযাপিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর বাংলাদেশও বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করে আসছে।

লেখক : সংগঠন, কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।