ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত

যুবকদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব

২০২৪ জুলাই ১৫ ২৩:৪৮:৫৭
যুবকদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


প্রতি বছর ১৫ জুলাই উদযাপিত হয় বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস। এই দিনটি কর্মসংস্থান, শোভন কাজ এবং উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার সঙ্গে তরুণদের সজ্জিত করার কৌশলগত তাৎপর্যকে তুলে ধরে। বর্তমান যুবসমাজ এমন একটি জেনারেশন, যারা একদিকে যেমন নিজের ক্যারিয়ারের জন্য লড়াই করছে তেমন অন্যদিকে বিভ্রান্ত হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা। দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সঠিকভাবে সেটিকে প্রয়োগ করতে না পারায় অচিরেই সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আর এই সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই প্রতিবছর পালন করা হয় বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস।

২০২৪-এর যুব দক্ষতা দিবসের থিম হলো ‘শান্তি ও উন্নয়নের জন্য যুব দক্ষতা’ শান্তি বিনির্মাণ এবং সংঘাত সমাধানে তরুণরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা তুলে ধরে। আজকের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের জটিলতাগুলো মোকাবিলা এবং নেভিগেট করার জন্য তাদের প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবসের তাৎপর্য

শুধুমাত্র গতানুগতিক পড়াশোনা করে নয়, ব্যবহারিক দক্ষতার মাধ্যমেও যে নিজেকে আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত করা যায় সেই সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্যই এই দিনটি উদযাপন করা। কারিগরি কাজকর্ম, লেখালেখি, আঁকা, গান, নাচ অথবা যে কোনও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে যে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করা যায়, সেটাই সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াই হল এই দিনটির তাৎপর্য।

বিশ্ব আজ অসংখ্য চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ যেগুলো যুবসমাজকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে। হিংসাত্মক দ্বন্দ্ব, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করে, যখন একটি মেরুকৃত অনলাইন পরিবেশ প্রায়ই নেতিবাচকতা এবং বিভাজন বৃদ্ধি করে। ক্রমাগত অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেক তরুণের সুযোগ সীমিত করে, তাদের ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ এবং সমাজের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নকে হুমকির মুখে ফেলে।

এমন প্রেক্ষাপটে তরুণদের প্রয়োজনীয় দক্ষতায় সজ্জিত করা শুধু অর্থনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার বিষয় নয়, বরং শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তোলা, দায়িত্বশীল বৈশ্বিক নাগরিকদের লালনপালন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এই প্রচেষ্টাগুলো সবার জন্য আরও ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবসের ইতিহাস

২০১৪ সালে ১৫ জুলাই দিনটিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তরুণদের মধ্যে দক্ষতার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্যই এই দিনটি পালন করা হয়। যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে কারিগরি দক্ষতা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যই এই দিনটি পালন শুরু করা হয়।

যুবকদের দক্ষতা অর্জনের জন্য বর্তমান সরকারের অবদান

বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রাম ও অগ্রগতির পথে এ দেশের যুব সমাজের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামসহ এ দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যুবরা যেমন জীবন উৎসর্গ করতে কার্পণ্য করেনি, তেমনি অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামেও তারা নিরলসভাবে ব্যাপৃত। বিশ্বব্যাপী ‘কোভিড-১৯’ মহামারির সময়েও আমাদের যুবসমাজের কর্মস্পৃহা আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে সচল রেখেছে।

বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উনয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এ জন্য আমাদের কর্মসংস্থানের দিকে অধিক নজর দিতে হবে। সরকারি দল, বিরোধী দগটৃ,ল, নাগরিক সমাজসহ সমাজের প্রত্যেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টির দায়িত্ব রয়েছে। চাকরি সৃষ্টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ; দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শ্রমবাজারে দক্ষ ও শিক্ষাগতভাবে যোগ্য কর্মীর চাহিদা মেটাতে পারছে না।

সরকার ইতিমধ্যে অনেক সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগের প্রচেষ্টা চলছে। তরুণদের চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সরকার আগামীর বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যেখানে প্রতিটি জনশক্তি স্মার্ট হবে। সবাই প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি, যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে। আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা সব কিছুই ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হবে। ই-এডুকেশন, ই-হেলথসহ সব কিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা তা করা সক্ষম হব এবং সেটি মাথায় রেখেই কাজ চলছে।

আমাদের তরুণ সম্প্রদায় যত বেশি এই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা শিখবে, তারা তত দ্রুত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ ধরনের ৫৭টি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ৬৪টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন সেন্টার স্থাপন এবং ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ৯২টি হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নির্মাণ করা হচ্ছে। সারা দেশে ৬ হাজার ৬৮৬টি ডিজিটাল সেন্টার এবং ১৩ হাজারের বেশি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছেন। সামনের স্মার্ট বাংলাদেশও শেখ হাসিনার সরকার করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বলেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ দেবেন। আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। তিনি যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন, সেটির জন্যও তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ, যার যাত্রা হয়েছিল ২০০৮ সালে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সবার জন্য কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন- এই চারটি সুনির্দিষ্ট প্রধান স্তম্ভ নির্ধারণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে ২০৪২ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের অভিযাত্রায়। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি এবং মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটি ৬০ লাখেরও উপরে।

জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৮ হাজার ৮০০টি ডিজিটাল সেন্টারে প্রায় ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা কাজ করছেন, যেখানে ৫০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর ফলে একদিকে নারী-পুরুষের বৈষম্য, অন্যদিকে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ও গ্রাম-শহরের বৈষম্য দূর হচ্ছে। দেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিকাশে ও স্টার্টআপদের উদ্ভাবনী সুযোগ কাজে লাগানোর পথ সুগম করতে সরকার আগামী পাঁচ বছরে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। মেধাবী তরুণ উদ্যোক্তাদের সুদ ও জামানতবিহীন ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট এবং ট্রেনিং, ইনকিউবেশন, মেন্টরিং এবং কোচিংসহ নানা সুবিধা দেওয়ার ফলে দশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। বিকাশ, পাঠাও, চালডাল, শিওর ক্যাশ, সহজ, পেপারফ্লাইসহ ২ হাজার ৫০০ স্টার্টআপ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। যারা প্রায় আরও ১৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ১০ বছর আগেও এই কালচারের সঙ্গে আমাদের তরুণরা পরিচিত ছিল না। মাত্র ৭ বছরে এই খাতে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে।

বিশ্বে অনলাইন শ্রমশক্তিতে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের আগে বাংলাদেশে সরকারি কোনো সেবাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সরকারি সব দফতরের প্রাথমিক সব তথ্য ও সেবা মিলছে ওয়েবসাইটে। সেই সঙ্গে সরকারি সব তথ্য যাচাই-বাছাই ও সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন পরিষেবা ও আবেদনের যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা ইন্টার-অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফরম ‘বিনিময়’ চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে গেছে প্রত্যেক গ্রাহকের হাতের মুঠোয়। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং থেকে আসা অর্থ আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে আধুনিক ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এসব কিছুই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল।

নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত করা, শহর ও গ্রামের সেবা প্রাপ্তিতে দূরত্ব হ্রাস করার সবই ছিল আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ফলে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মতো উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত করা গেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও প্রযুক্তির কল্যাণে এখন গ্রামে বসেই যে কেউ চাইলেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করতে পারছে। এ সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতির ফলে।

চলছে চতুর্থ বিপ্লবের সময়কাল। যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের বুদ্ধি ও ইচ্ছা শক্তি, কারখানার উৎপাদন, কৃষিকাজসহ যাবতীয় দৈনন্দিন কাজকর্ম ও বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। প্রস্তুতি চলছে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে তৈরির। অবদান রাখতে পারি স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে।

সরকারের পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিতে পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম। অর্থাৎ ২১ থেকে ৪১ কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে তার একটা কাঠামো, পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই ব-দ্বীপ প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয় এবং উন্নত দেশে স্বাধীনভাবে সুন্দরভাবে যেন তারা স্মার্টলি বাঁচতে পারে। সেই ব্যবস্থা করছে সরকার। এখন সব নির্ভর করছে আমাদের নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে যুব ও যুব নারীদের বলিষ্ঠ নেতৃৃত্বেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ তাই যুব সমাজের ওপর অনেক দায়িত্ব।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে দেশে তরুণ জনশক্তির সদস্যসংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার। ২০২৩ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার। সে অনুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে দেশে যুব শ্রমশক্তি সংকুচিত হয়েছে ৫ শতাংশের বেশি। শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্ত যুবকের সংখ্যা কমেছে প্রায় ১৪ লাখ ৬০ হাজার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে দেশে তরুণ জনশক্তির সদস্যসংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার। ২০২৩ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার। সে অনুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে দেশে যুব শ্রমশক্তি সংকুচিত হয়েছে ৫ শতাংশের বেশি। শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্ত যুবকের সংখ্যা কমেছে প্রায় ১৪ লাখ ৬০ হাজার। বিবিএসের জরিপের তথ্যমতে, ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশের শ্রমশক্তিতে যুবকের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার। সে হিসাবে গত প্রান্তিকে তিন মাসের ব্যবধানে যুবশক্তি কমেছে ৩ লাখ ৬০ হাজার।

ব্যুরোর প্রতিবেদনে উঠে আসা লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে পুরুষ যুব জনশক্তি ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার। এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজারে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে পুরুষ জনশক্তি কমেছে ৯ লাখ ৮০ হাজার। আর গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে নারী যুবশক্তি ছিল ১ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার, যা এবার কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজারে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, গত বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন ১৩ লাখ ৫৪ হাজার বাংলাদেশী। এ বছর এখন পর্যন্ত বিদেশে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৭। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের শ্রমশক্তিতে এখন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ আছেন। এর মধ্যে ৭ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার। এছাড়া শ্রমশক্তির বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠী আছে। তারা কর্মে নিয়োজিত নয়, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নয়। এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার। তারা মূলত শিক্ষার্থী, অসুস্থ, বয়স্ক, কাজে অক্ষম, অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মে অনিয়োজিত বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক ব্যক্তি।

পরিশেষে বলতে চাই, জাতিসংঘ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদেরকে যুব হিসেবে নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় যুব নীতি অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩৫ বয়সীরা যুব হিসেবে স্বীকৃত। একজন মানুষ দক্ষ হয়ে ওঠার এটাই আসল বয়স। এ বয়সে যে তরুণ যে কাজের প্রতি আগ্রহী, সে কাজে দক্ষ হয়ে ওঠাই যদি তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হয়, আর যদি তাকে সে কাজে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করা যায়, তবে সে দক্ষ তরুণ নিজের জন্য যেমন, তেমনি তার সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের জন্য অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠবে।

সিই দক্ষ তরুণই একসময় হয়ে উঠবে তুখোড় পেশাজীবী, ব্যক্তি উদ্যোক্তা, পরিকল্পনাকারী কিংবা রাষ্ট্রব্যবস্থাপক। তবে খুব বেশি ভবিষ্যতের কথা আপাতত ভাববার অবকাশ নেই। অতিমারির কবল থেকে মুক্ত হওয়াটাই এখন প্রধান লক্ষ্য। অতিমারিতে কাবু অর্থনীতির প্রভাবে পাল্টে গেছে দুনিয়ার অনেক হিসাবনিকাশ। বদলে গেছে অনেক পরিসংখ্যান। শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় ঘটছে দেশে দেশে। কাজেই অর্থনীতির চাকা সচল করার সঙ্গে সঙ্গে, আবার স্বাভাবিক হওয়ার দৌড়ে অংশ নিতে দক্ষ যুবারাই একমাত্র ভরসা।

লেখক : সংগঠক, কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।