ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » স্বাস্থ্য » বিস্তারিত

মানা হচ্ছে না টাইম টেবিল, ভোগান্তির শিকার রোগী

যশোর জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত

২০২৪ আগস্ট ২৪ ১৯:৪৩:০৬
যশোর জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে এই কার্যক্রম সরকারি ভাবে গ্রহণ করা হলেও তা ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করেছে। সময় মত ডাক্তার রোগী না দেখার কারণে দূর দূরন্ত থেকে আসা রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে শেষমেশ অনেক রোগী ছুটছেন বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতাল গুলোতে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সরেজমিন যশোর জেনারেল হাসপাতালের বহিঃবিভাগ ঘুরে দেখা গেছে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছেন। টিকিটের দায়িত্বরত ব্যক্তি ও ডাক্তারের সহকারির কাছে বারবার খোঁজ খবর নিচ্ছেন কখন ডাক্তার আসবেন আর কখন তাদের দেখবেন। রোগীর ছদ্দবেশে ডাক্তারের জন্য বিকেল ৫ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর শোনা গেল ডাক্তারের সহকারিদের খোশ গল্প। বহিঃবিভাগের ১১৩ নম্বর কক্ষের সামনে ৩ থেকে ৪ জন সহকারি বসে খোশ গল্প করে বলছেন ‘আমার স্যারের ৫ টা রোগী ৭ মিনিটে দেখা হয়ে যাবে।’ একটু পরেই বহিঃবিভাগের গেট দিয়ে একজন মহিলা ডাক্তার প্রবেশ করলেন। প্রবেশ পথে টিকিটের দায়িত্বরত ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেল ‘এই সামনের দিন আমার অফ রেখো। কেউ জানতে চাইলে বলবা ঢাকায় গেছি।’

এই দিন বিকেল ৪ টা বেজে ৪৫ মিনিট অবধি একজন ডাক্তারকে চেম্বারে দেখা গেছে। অথচ বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য ৫ জন ডাক্তার দায়িত্বরত বলে জানা গেছে। বহিঃবিভাগের ১১১ নম্বর কক্ষে দায়িত্ব পালনে নাম দেখা গেছে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিকাশ চন্দ্র পাল, ১১৩ নম্বর কক্ষে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ নিলুফার ইসলাম, ১১৫ নম্বর কক্ষে সিনিয়র কনসালটেন্ট(চর্ম ও যৌন) ডাঃ মোঃ শফিউল্ল্যাহ সবুজ, ১১৬ নম্বর কক্ষে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ আফসার আলী ও ১২২ নম্বর কক্ষে অর্থো-সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ আ,ন,ম বজলুর রশীদ। এই সময় ৫ জন ডাক্তারের মোট ৯ জন রোগী টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে দেখো গেছে।

হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবায় শুধু মাত্র সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তারের ফিস ৪০০ টাকা। এছাড়া বাকি ডাক্তারদের ফিস ৩০০ টাকা করে। রোগী দেখার সময় বিকেল ৩ টা থেকে শুরু হয়। টিকিট দেওয়া শুরু হয় দুপুর আড়াই টা থেকে যা বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চলে।

আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ বিকেল ৩ টা থেকে রোগী দেখার কথা থাকলেও ডাক্তার আসেন না সময় মত। সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা না দিয়ে তারা বেসরকারি ক্লিনিকে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখে সময় পার করেন। টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে হয়। সহকারিদের কাছে ডাক্তার কখন আসবে জানতে চাইলে খারাপ ব্যবহার করেন। তাদের কৌশলগত প্রশ্নের উত্তর একটাই ডাক্তার এসেছেন, ওয়ার্ডে রোগী দেখতে গেছেন।

খাজুরা গেছে ডাক্তার দেখাতে আসা ইদ্রিস আলী নামে একজন বলেন, বিকেল ৩ টা থেকে রোগী দেখা শুরু হয়। আমরা ৪ টার দিকে এসেছি। ৩০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে বসে আছি। ৫টা বেজে গেছে ডাক্তার আসার কোনো খবর নেই। দূর দূরন্ত থেকে ডাক্তার দেখাতে এসে এমন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ঘণ্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়। এটা সত্যি চরম ভোগান্তির বিষয়।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ভদ্র মহিলা বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসে বসে আছি। এখনও দেখাতে পারিনি। অপেক্ষা করছি। শুনলাম ডাক্তার এসেছেন দেখি কখন ডাক পরে।

এ বিষয়ে জানার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন আর রশিদ ও জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের মুঠো ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন কল রিসিভ করেননি।

(এসএ/এসপি/আগস্ট ২৪, ২০২৪)