প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত
রাষ্ট্র সংস্কারে ছয় কমিশন প্রধান: মুক্তিযোদ্ধা নেই কেন?
২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৯:০২:৫০আবীর আহাদ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে দেশের ছয়টি বিষয়ে সংস্কারের লক্ষ্যে কমিশন গঠন করে ছয়জন কমিশনপ্রধানের নাম ঘোষণা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সেসব বিষয় সংস্কারের জন্যে গঠিত কমিশনে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কেনো রাখা হলো না, সে-বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন বিপন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীন না করলে জীবনে যিনি যা কল্পনা করেননি, তিনি তাই হচ্ছেন এবং হতেই থাকবেন, অথচ সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্র সংস্কারের কমিশনে বাদ দিয়ে তাদের প্রতি যে অবজ্ঞা করা হলো, তা বড়োই বিস্ময় ও আফসোসের কথা। সরকারপ্রধান বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে আশা রাখি। এবার মূল বিষয়ে ফিরে আসি।
বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কাজ করবে এসব কমিশন। কমিশনগুলোর প্রধান হিশেবে ছয়জনের নামও ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কমিশন গঠনের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. শাহদীন মালিক।
ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘এটি (পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন) পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করছি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্রসমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শ সভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শ সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা, আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
ছয়টি কমিশন গঠনের কারণ হিশেবে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনো গোষ্ঠীর কাছে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আশঙ্কা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি। নির্বাচনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন—এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।’
আমরা সরকারের এসব সংস্কারের সাফল্য কামনা করি। এবং তার পূর্বে সরকারকে সংস্কার কশিশনে, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান হিলেবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাখার দাবি জানাচ্ছি। আমরা আরো দাবি জানাই, সংরিধানের মুখবন্ধে যেন ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির পিতা ধঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, মুজিবনগর সরকারের পরিচালনায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এবং বীর শহীদ, মুক্তিকামী জনগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্য ও বীরত্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- একথাগুলো উল্লেখ থাকে।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও গবেষক।