প্রচ্ছদ » পাঠকের লেখা » বিস্তারিত
আলোয় ঝলমলে টাইম্স স্কয়ারে দুর্গা পূজায় বিশ্বব্যাপী হিন্দুরা আন্দোলিত
২০২৪ অক্টোবর ০৯ ১৮:১৯:০৫শিতাংশু গুহ
আলোয় ঝলমলে টাইম্স স্কয়ারে ইতিহাস সৃষ্টি করে এবার মহা ধুমধামে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজায় মানুষের ঢল নামে, শুধু বাংলাদেশের হিন্দু নন, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা এতে বিপুলভাবে অংশ নেন। আমেরিকার বিভিন্ন ষ্টেট, সাউথ আমেরিকা, নেপালের হিন্দুরা এতে উৎসাহের সাথে জড়িয়ে যান। সাদা-কালো-বাদামী মানুষ, নারী-পুরুষ সবাই অংশ নেন। টাইম্স স্কয়ারে দুর্গাপূজা হচ্ছে, বিদেশিরা বিস্মিতভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছেন। নিউইয়র্ক-কে বলা হয় বিশ্বের রাজধানী, এবং টাইম্স স্কয়ার হচ্ছে হচ্ছে এর কেন্দ্রবিন্দু। টাইম্স স্কয়ার সর্বদা আলোয় ঝলমলে থাকে। বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি মানুষ টাইম্স স্কয়ার ভিজিট করে। সেই টাইমস স্কয়ারে এই প্রথম বারের মত দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় (৫-৬ই অক্টবর) এবং সেটি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। অভূতপূর্ব ও অভাবনীয় এ ঘটনা একটি ইতিহাস, যারা এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তাঁদের অভিনন্দন।
বাঙ্গালী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, দুর্গাপূজাও তাই ‘বিশ্বজনীন’ এবং ‘সর্বজনীন’। দুর্গাপূজা হচ্ছে, অসুরের বিরুদ্ধে সুরের লড়াই এবং এ লড়াইয়ে সর্বদা সুর, সুন্দর বা সত্য বিজয়ী হয়। দুর্গোৎসব ‘পারিবারিক মূল্যবোধ’ এবং ‘নারীশক্তি’-র প্রতীক। দেবীদুর্গা সপরিবারে মর্ত্যে আসেন, আবার আদ্যাশক্তি হিসাবে তিনি অসুর বধ করেন। দুর্গাপূজা বাঙ্গালী হিন্দু’র সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান। বাঙ্গালী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, দুর্গাপূজা তাই ‘বিশ্বজনীন’; দুর্গোৎসবের সামাজিক-সাংস্কৃতিক আবেদন এটিকে করেছে ‘সর্বজনীন’। কলকাতা ও ঢাকার নামিদামি শিল্পী ছাড়াও টাইম্স স্কয়ার পূজায় ‘ধুনচি নৃত্য’; ‘সিঁদুর খেলা’, এবং উলুদ্ধনি ও শংখধ্বনি প্রতিযোগিতা। পূজায় ঘরে তৈরী করে কয়েক হাজার নারকেলের লাড্ডু ও সন্দেশ, মুড়ির মোয়া প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা হয়।
দীপ চ্যাটার্জি’র লাইভ কনসার্ট ও বিশাল জ্যোতি গেছেন। ড্যান্স স্কুল ‘আড্ডা’ (অনুপ দাশ ড্যান্স একাডেমি) নৃত্য পরিবেশ করে। ১০জনকে শারদ সন্মান দেয়া হয়: এরা হচ্ছেন: সর্বশ্রী সুশীল সাহা, ডাঃ কালিপ্রদীপ চৌধুরী, ব্রাহ্মণ স্বপন চক্রবর্তী, রথীন্দ্রনাথ রায়, কুমার বিশ্বজিৎ, রতন তালুকদার, ডাঃ দেবাশীষ মির্ধা, প্রবীর রায়, মনোরঞ্জন চক্রবর্তী (মরণোত্তর) এবং শিল্পী তাজুল ইমাম। সকালে তিথি মেনে পূজা হয়, অঞ্জলী চলে দুপুর পর্যন্ত। প্রসাদ বিতরণ, ড্ৰাই খিচুড়ি/লাবড়া সবই ছিলো। টাইম্স স্কয়ার দুর্গাপূজা সফল হয়েছে। তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মানুষ খুশি হয়েছে। প্রবাসে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়েছে, কারণ এ অসম্ভব সম্ভব করেছে বাংলাদেশের হিন্দুরা।
টাইম্স স্কয়ারে এবার পূজা এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হয় যখন বাংলদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে ৫৩ বছর ধরেই দেশে হিন্দুরা নিপীড়িত, লাঞ্ছিত ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার। টাইম্স স্কয়ারে পূজায় আনন্দের বন্যা বইলেও বাংলাদেশে এবার পূজা নিরানন্দ। পূজায় উৎসাহ ও আনন্দ নেই, বা কম, এবং ভয়ভীতি বিরাজমান। একদল বলছে, পূজা হতে দেয়া হবেনা, হিন্দুরা বাংলাদেশ ছাড়ো। ক’জনা বক্তা বাংলাদেশের ঘটনা তুলে ধরেন। এ পূজার মাধ্যমে যে মেসেজটি এসেছে তা হচ্ছে: বাংলাদেশ ও আমেরিকায় হিন্দুরা ‘সংখ্যালঘু’, বাংলাদেশে পুলিশ প্রহরা ব্যতিত পূজা করা যায়না, আর টাইম্স স্কয়ারের উন্মুক্ত জায়গায় দেবীদুর্গার মুর্ক্তি অধিষ্ঠিত, কেউ মুর্ক্তি ভাঙ্গতে আসেনা।
নিউইয়র্কে অনেকগুলো পুজো হয়, টাইম্স স্কয়ার দুর্গাপূজা জানান দিয়েছে, হিন্দুরা শান্তিপ্রিয়, এর ধর্মীয় সংস্কৃতি চমৎকার ও আলোকিত এবং আনন্দময়। পূজায় বিশ্বশান্তি ও সকল মানুষের কল্যাণ কামনা করা হয়.এবং বাংলাদেশে হিন্দুরা ভালো থাকুক এ প্রার্থনা করে হয়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, টাইম্স স্কয়ার দুর্গাপূজা ভবিষ্যতে লন্ডনের রাসেল স্কয়ার বা মস্কোর রেড স্কয়ারে দুর্গাপূজা করতে হিন্দুদের উৎসাহিত করবে।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।