ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » পাশে দাঁড়াই » বিস্তারিত

অল্প কিছু টাকা হলেই বাঁচতে পারে শিশু রাহিম

২০১৭ মে ১২ ২১:২৪:২২
অল্প কিছু টাকা হলেই বাঁচতে পারে শিশু রাহিম

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর উপজেলার করকোলা গ্রামে জটিল রোগ ‘হাইড্রোসেফালাস’ এ আক্রান্ত হয়ে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা শিশু রাহিম হোসেনের চিকিৎসায় এগিয়ে আসছে অনেকেই।

যে বয়সে ছুটোছুটিতে বাড়ি মাতিয়ে রাখার কথা তাঁর, সে বয়সে বাবা-মায়ের কোলে মৃত্যুর প্রহর গুনছে শিশুটি। শারীরিক গঠনের চেয়ে মাথা অনেকটা বড় এই রোগকে চিকিৎসকরা বলছেন ‘হাইড্রোসেফালাস’। অপারেশনে সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলছেন তারা। তবে চিকিৎসা ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে দরিদ্র বাবা-মা’র। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চেয়ে আকুল আবেদন করেন তার দরিদ্র পিতা মাতা।

খবরটি দেখে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিদের পাঠানো নগদ ৭০ হাজার ২০০ টাকা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো’র মাধ্যমে শিশুটির পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়।

চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের করকোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর নাছির ফকির ও রোজিনা খাতুনের ৩ ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার ছোট সন্তান রাহিম হোসেন। দেখে বোঝার উপায় নেই শিশুটির বয়স ৫ বছর। এই বয়সে খেলাধুলায় মত্ত থাকার কথা থাকলেও তার সময় কাটছে বাবা-মায়ের কোলে, কখনওবা বাড়ির উঠোনে শুয়ে।

শরীরের মোট ওজন প্রায় ২০ কেজি হলেও শুধু মাথার ওজনই প্রায় ১২ কেজি। এমন অবস্থায় দুশ্চিন্তার শেষ নেই দরিদ্র বাবা-মা’র। অভাবের সংসারে সন্তানের চিকিৎসা করাতে না পেরে দিশেহারা তারা।

শিশুটির বাবা-মা নাসির ফকির ও রোজিনা খাতুন বলেন, ‘কিছু পেলাম, আর অল্প কিছু টাকা হলেই আমার ছেলেটা বেঁচে যেত। আমাদের যা কিছু ছিল তা তো সব খরচ করে ফেলেছি। কিছু টাকা পেলাম। এখন মনে হচ্ছে আমার ছেলেটা বাঁচবে।’ তাদের ছোট ছেলে রাহিম হাইড্রেসেফালাস রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসক বলেছেন অপারেশনের জন্য প্রয়োজন ৩ লাখ টাকা।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখে শিশু রাহিমের দিশেহারা বাবা-মার পাশে দাঁড়ান সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার আগনৌকালী গ্রামের মামুন বিশ্বাস। তিনি সম্প্রতি তার ফেসবুক ওয়ালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত শিশু রাহিমকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের লিংক শেয়ার করেন এবং তার চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান।

গত কয়েকদিনের মধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিদের পাঠানো নগদ ৭০ হাজার ২০০ টাকা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালোর মাধ্যমে শিশুটির পরিবারের হাতে তুলে দেন।

এসময় পাবনার জেলা প্রশাসক রাহিমের পরিবারকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো, সুজানগর ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান, মামুন বিশ্বাস, সাজিদ মুন, সাংবাদিক খালেকুজ্জামান পান্নু সহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শিশু রাহিমের বাবা-মা পাবনা জেলা প্রশাসক মামুন বিশ্বাস ও সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সবিজুর রহমান জানান, এই রোগের নাম ‘হাইড্রোসেফালাস’। মস্তিষ্কে পানি জমে এই রোগ সৃষ্টি হয়। চিকিৎসা ব্যয় বহুল হলেও ভাল নিউরো সার্জন দ্বারা অপারেশনে সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের করকোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের নাসির ফকির ও রোজিনা খাতুন দম্পতির তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার ছোট রাহিম। জন্মের পর দুই মাস পর থেকেই আস্তে আস্তে মাথার আকৃতি বৃদ্ধি পেতে থাকে তার। চিকিৎসক বলেন রাহিম হাইড্রোসেফালাস রোগে আক্রান্ত। দরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া রাহিমের বাবা নাসির ফকির ছেলের চিকিৎসার জন্য পাবনা-রাজশাহী থেকে শুরু করে ঢাকার শের-ই বাংলা নগরের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সাইন্সেস হসপিটালের চিকিৎসকদের দেখিয়েছেন। অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে চিকিৎসা ব্যয় জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে দিনমজুর বাবার পক্ষে। অপারেশনের জন্য প্রয়োজন ৩ লাখ টাকা।

(এসএইচএম/এএস/মে ১২, ২০১৭)