ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

এবারের ঈদ বনাম বানভাসি মানুষ

২০১৭ আগস্ট ২৫ ১৩:১৪:১০
এবারের ঈদ বনাম বানভাসি মানুষ

মো. আতিকুর রহমান


একদিকে ঈদ যেমন আমাদের মাঝে আনন্দের বার্তা বয়ে আনছে, অপরদিকে সারাদেশে ভয়াবহ বন্যা ঈদের এই আনন্দকে এক প্রকার বিলীন করছে। কিন্তু এবারের এই ঈদের আনন্দের মাঝে আমরা কী বন্যাপীড়িত শত শত অসহায় মানুষের কথা একবারও মনে করেছি? কেমন কাটবে তাদের এবারের এই ঈদ আমরা কী কখনো তা ভেবে দেখেছি?

এবারের বন্যায় সব হারিয়ে তারা কী পারবে আর সব মানুষের মতো নিজ নিজ সন্তানদের নিয়ে ঈদের এই আনন্দঘন মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে? ঈদের দিনে অন্তত সন্তানদের মুখে একটু ভালো খাবার ও পরনে একটি নতুন বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে, নাকি অন্ন ও বস্ত্রহীনই কাটবে তাদের ঈদের দিনটি? ইতিমধ্যেই বন্যা যাদের সর্বস্ব গ্রাস করেছে, বসতভিটা হারিয়ে রাস্তায় এক প্রকার বাঁচার তাগিদে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে, তাদের কাছে এবারের ঈদ কেমন কাটবে এই বিষয়গুলো কী একবারও আমাদের চিত্তে কখনো নাড়া দিয়েছে? আসুন আমরা সকলে মিলে বন্যাপীড়িত ঐসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই এবং যার যতটুকু সাধ্য আছে তা দিয়ে তাদের মাঝে ঈদের আনন্দকে জাগিয়ে তুলি। শুধু নিজেদের বিত্তে ও বিলাসিতায় নয়, অপরকে দানের মাঝেও যে চিত্তে সুখ আছে তাকে খোঁজার চেষ্টা করি। এতে হয়তো এক ধরনের আত্মতৃপ্তি মিলবে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এবারের এই আনন্দময় ঈদে আমাদের মাঝে বিয়োগান্তক হয়ে নেমে এসেছে ভয়ালগ্রাসী ও সর্বনাশা বন্যা, যা দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অনেকাংশে পিছিয়ে দিচ্ছে ও মানুষকে করছে সর্বস্বান্ত। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকাই এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। এসব অঞ্চলের বন্যাপীড়িত মানুষগুলোর জীবন আজ ভয়াবহ বিপন্ন ও দুর্বিষহ। জানমাল, সহায়সম্পত্তিবিহীন শত শত পানিবন্দী বন্যাপীড়িত ক্ষুধার্ত ও রোগে-শোকে আক্রান্ত মানুষগুলোর আহাজারি এখন যেন দেশের সর্বত্র বিরাজমান। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যাপীড়িত অনাহারী মানুষগুলোর করুণ আর্তনাদ প্রতিনিয়ত সেখানকার আকাশ-বাতাস ভারী করছে।

দেশের এমন অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে যেখানে এখনও প্রয়োজনীয় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণসহ কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এখনও লাখ লাখ পরিবার পানিবন্দী গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে এক প্রকার মানবেতর দিনযাপন করছে। তাদের কাছে এবারের ঈদ যেন আনন্দের নয়, তা যেন এক প্রকার অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে! ভয়াবহ এই বন্যায় তাদের মাঝ থেকে ঈদের এই আনন্দ যেন বিলীন হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি, সহায়সম্বল হারিয়ে অনেকে এক প্রকার নিঃস্ব হয়ে কাজের আশায় পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবতে দুঃখ হয়, যদিও সরকারের তরফ থেকে এসব বন্যাপীড়িতের ভাগ্যে কিছুটা ত্রাণ মিলে তাও অনেক সময় তাদের হাত পর্যন্ত পৌঁছায় না। বিপরীতে তাদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত যত্সামান্য খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ বা ত্রাণ যাই আসুক না কেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেকে তাও করে আত্মসাত্। হায়রে আমাদের মানবতা ও মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার নমুনা!

ভাবতে কষ্ট লাগে নিজেদের হীনস্বার্থে ও ত্রাণের যত্সামান্য অর্থের লোভে প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের মানবতাকে করেছি পদদলিত ও অসহায় ঐসব মানুষকে করছি বঞ্চিত। তবে এটাই কী আজ আমাদের সমাজের আসল বাস্তবতা? একজন মানুষ অন্য আরেকজন মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াবে তাকে সাহায্য-সহযোগিতা ও সেবা দিয়ে আপ্লুত করবে, একে অপরের আনন্দে আনন্দিত এবং দুঃখে ব্যথিত হবে, এটাই তো স্বাভাবিক, আর এটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু আজ হচ্ছে এর উল্টোটা। আমরা চাই এ অবস্থার দ্রুত অবসান হোক। আসুন আমাদের প্রত্যেকের ভিতরে লুকিয়ে থাকা সেই মানবপ্রীতিকে জাগিয়ে তুলি এবং আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করি। সকলে মিলে ঈদের এই আনন্দযজ্ঞে বন্যাপীড়িত শত শত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কিছুটা হলেও অর্থ-শক্তি-সাহস দিয়ে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করি।

আসুন আমরা সকলে মিলে মানবতার এই মহান সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করি। যার যতটুকু সমর্থ আছে তা দিয়ে বানভাসি লাখ লাখ মানুষের বিপন্ন ও বিপর্যস্ত জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসি। বন্যাপীড়িত অসহায়দের মাঝে অর্থ দিয়ে, নয়তোবা সাহস দিয়ে এবারের এই ঈদের আনন্দটুকু আমরা সকলে মিলে তাদের সঙ্গে উপভোগ করি। এতে যে আত্মতৃপ্তি ও আনন্দ মিলবে তা হয়তো অন্যান্য আনন্দের চাইতে কোন অংশে কম নয়। আশা করি সকলের সদিচ্ছায় মানবতার এই মহত্ পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হবোই।

লেখক: মোঃ আতিকুর রহমান, কলামিষ্ট। [email protected]