ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

রোহিঙ্গা ইস্যুতে নোংরা রাজনীতি নয়, মানবতার পাশে দাঁড়ান

২০১৭ সেপ্টেম্বর ১২ ১৫:০৮:৫৬
রোহিঙ্গা ইস্যুতে নোংরা রাজনীতি নয়, মানবতার পাশে দাঁড়ান

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা :


রোহিঙ্গা ইস্যু। এ নিয়ে নোংরা রাজনীতি নয়। আহবান জানাই মানবতার পাশে দাড়াঁবার। সোমবার সমকালের প্রথম পাতায় শিরোনাম করেছে `তাদের পেছনে আগুন সামনে অন্ধকার'। এই শিরোনামটি পড়লে কার মন না কাঁদে? কিন্তু কাঁদে না মায়ানমারের নেত্রীর মন, কাঁদে না যারা মানবতার পাশে না দাঁড়িয়ে অযথা সমালোচনা করে নোংরা রাজনীতি করছেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে।

রোহিঙ্গারা তারা যে কতখানি অসহায় এ বিষয়টি আমাদের বাংলাদেশের মানুষদেরকে বুঝতে হলে ঠিক ফিরে যেতে হবে ১৯৭১ সালে। কারণ ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদের বাঙালি নর-নারী ও শিশুদের উপর বর্বর হামলা, নির্যাতন, ধর্ষণ, হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল তখন, আমাদের বাংলাদেশের মানুষকে জীবন বাচাঁতে নিজেদের ঘরবাড়ি, সহায় সম্পদ ফেলে রেখে পাড়ি জমিয়েছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে। আমি অবশ্যই সে সময়ে বয়সে ছোট থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের গ্রামে ও আশেপাশে গ্রামের মানুষের ওপর কিসব নোংরা ঘটনা ঘটেছে।

নারী-শিশুসহ বিভিন্ন সম্মানীত ব্যাক্তিবর্গকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তা দেখেছি এবং শুনেছি। তবে আমিসহ আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকে ভারতে শরনার্থী হিসাবে আশ্রয় নিতে হয়নি। আশ্রয় নেয়ার কোন প্রয়োজনও ছিল না আমাদের। গোপালাশ্রম গ্রামের বাড়িতে ছিলাম মা বাবাসহ সবাই। আর সে সময়ে আমাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন ঠেকাতে আমাদেরকে পরম মমতা দিয়ে বুকে আগলে রেখেছেন আমাদের প্রতিবেশি যিনি কেরানী সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। অর্থ্যাৎ তিনি ছিলেন সাদত আলী খান। আমরা ভাইবোনেরা তাকে বড়বাপ বলে ডাকতাম। এমনই আরেকজন তিনিও আমাদের বাড়ির সামনে খালের ওপারে বড়তলা গ্রামে তার বাড়ি। তার নাম সৈয়দ মুর্তুজ আলী। তাকে আমরাও বড়বাপ বলে ডাকতাম। তারা দুজন আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকে ভারতে শরনার্থী হতে দেননি।

মানবতা দিয়েই আমাদেরকে বাচিয়ে রেখেছেন। একথা আমি আজও ভুলতে পারি না। যাগ্গে সে কথা। সে সময় যারা শারনার্থী হয়ে যারা ভারতে গিয়েছিলেন তাদের মুখে সেখানকার কষ্টের কথা শুনেছি, শুনে খারাপই লেগেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে পাক হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর অত্যাচার এবং আলবদর রাজাকার বাহিনীর উৎপীড়নে অতিষ্ট হয়ে এই বাংলাদেশের মানুষকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল। তাদের কাছে কোন মানবতা ছিল।

এক বাক্যে আমি বলব, তাদের কোন মানবতা ছিল না। ছিল না কোন দয়ামায়া। তাদের বর্বর নিষ্ঠুর আচরণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র সে সময়ে নিন্দা জানিয়েছে, জানিয়েছে প্রতিবাদ আবার অনেক রাষ্ট্র সহযোগীতাও করেছে। যারা সহযোগীতা করেছে তারা আমাদের দেশের মানুষের কাছে এবং সারা বিশ্বে নন্দিত। আর যারা সে সময় বাঙালিদের অত্যাচার করেছে, উৎপীড়ন করেছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করেছে। তারা দুনিয়া যতদিন আছে ততদিনই তারা বিশ্বে ঘৃণিত ও নিন্দিত হয়ে থাকবে। আমি বলতে চাই মিয়ানমার কি উদ্দেশ্যে, কি স্বার্থে নিষ্ঠুর আচরণ করছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে চালাচ্ছে নির্যাতন। তাদের রাষ্ট্রীয় অত্যাচার নির্যাতনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও রাষ্ট্র দূত গণ নিন্দা জানাচ্ছেন।

মানবতা বিরোধী এই অত্যাচার বন্ধ করার জন্য কিন্তু এখনও বন্ধ হচ্ছে না। এছাড়া ধর্মীয় প্রসঙ্গে বলতে চাই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মের মূল মন্ত্র ‘‘অহিংসাই পরম ধর্ম” জীব হত্যা মহাপাপ। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত খবরে দেখেছি বৌদ্ধ যুবকরা রামদা, তলোয়ার হাতে নিয়ে প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে রোহিঙ্গাদের ধরার জন্য মারার জন্য। এ অবস্থায় তাদের ধর্মীয় মূল মন্ত্র কোথায় গেল? তারা বলেন জীব হত্যা মহা পাপ। রোহিঙ্গারা মানুষ হয়েও কি জীবের আওতায় পড়েনি। আমি তাদেরকে ঘৃনা জানাই যারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হয়ে ন্যাকার জন্য ধর্মের মূল মন্ত্র বিরোধী কাজ করছেন। আমি সেই দেশের নেত্রী অং সাং সূচীর রোহিঙ্গা প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের নিন্দা করছি। শান্তির জন্য তাকে যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে, সেই নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেবার জন্য বিশ্ব নেত্রীবৃন্দের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি। পাশাপাশি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। যিনি শত সমালোচনা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার পাশে দাড়িঁয়েছেন। তার এ কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন তিনি বিশ্বে একজন মানবতাবাদী মা এবং নেত্রী।

শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার তাকে দেয়াই ভাল মানায়। অপরদিকে যারা রোহিঙ্গা প্রশ্নে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের কাছে না গিয়ে তাদের একটু সাহায্য না করে, মুখে একটু খাবার তোলে না দিয়ে, চিকিৎসা সেবায় সহায়তা না দিয়ে শুধু মাত্র নোংরা রাজনীতির বুলি আওরাতে সরকারের সমালোচনা করছেন আমি মনেকরি তারাও অং সাং সূচীর পক্ষই সমর্থন করছেন। নইলে যেখানে অসহায় মানুষগুলো একটু খাদ্যের জন্য, একটু আশ্রয়ের জন্য, একটু চিকিৎসার জন্য কাতর কোথায় তাদেরকে, একটু খাদ্য দিয়ে, একটু পাশে গিয়ে তাদের সহযোগীতা করবেন তা না দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যারা নোংরা রাজনীতি করছেন, এটা দেশের মানুষ, সমাজের মানুষ, বিশেষ করে স্বাধীন বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ কোন অবস্থাতেই ভাল চোখে দেখছে না।

আমি সেই সমালোচকদের বলল, বিরোধীতার স্বার্থে বিরোধীতা না করে সরকারের ভাল কাজকে ভাল বলুন, মন্দ কাজকে মন্দ বলুন। কারণ দেশটা এই দেশের জনগনের সবার। তাই সমালোচনা না করে ভাল কাজ করে রোহিঙ্গা শরানার্থীদের কাছে গিয়ে মানবতাবাদী কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিন সরকারের আমরাই ভাল কাজ করছি।

লেখক: সমকাল সাংবাদিক, উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিন, সভাপতি কেন্দুয়া উপজেলা প্রেস ক্লাব।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭)