ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয়

বিশ্ব মায়ের দায়িত্ব পালন করলেন শেখ হাসিনা

২০১৭ সেপ্টেম্বর ১২ ১৫:২৮:২৫
বিশ্ব মায়ের দায়িত্ব পালন করলেন শেখ হাসিনা


সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা : জানার প্রয়োজন নেই, রোহিঙ্গা শরনার্থীরা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা অন্য কোন ধর্মের। তারা মানুষ হিসাবে পৃথিবীতে আবির্ভুত হয়েছে এটাই আমার কাছে পরম সত্য। এই মানুষকে বর্তমান সভ্যতার যুগে এত নিষ্ঠুর ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্যাতন এবং দেশ থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে, তা কোন সভ্য সমাজে একেবারেই বেমানান।

অমানষিক নির্যাতন করা হচ্ছে নারী পুরুষ ও শিশুদের , প্রকাশ্যে ধর্ষন করা হচ্ছে নারীদের এটা কোন সভ্য জাতির কাজ নয়, বা কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কোন অবস্থাতেই মেনে নিতে পারে না কিংবা একে বারেই মানা উচিতও না। প্রতিদিন বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় এবং টেলিভিশনের পর্দায় রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ছবি ছাপা হচ্ছে এবং প্রদর্শন করা হচ্ছে। এতে নারী শিশু এবং প্রায় একশ বছরের বয়বৃদ্ধ রয়েছেন। যে সব নিরপরাধ শিশুদের নির্যাতন করা হচ্ছে এবং যে সব নিরপরাধ নারী ও পুরুষদেরকে রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এবং রাষ্ট্রের অসভ্য লোকদের মাধ্যমে নির্যাতন করা হচ্ছে , তা খুবই নিষ্ঠুর এবং অত্যান্ত অমানবিক।

বিশ্ব সমাজে এ ঘটনার জন্য ঘৃনিত ও নিন্দিত হওয়া ছাড়া নন্দিত হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। এরপরও উল্টোভাবে রাষ্ট্র যন্ত্রের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে রোহিঙ্গারা আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত। ধরে নিলাম তাদের কথামতো যদি রোহিঙ্গারা আর্ন্তাজতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থেকেই থাকে, তাহলে সকল রোহিঙ্গারাই একসঙ্গে সভা সমাবেশ করে কোন ঘোষণা দিয়ে আর্ন্তাজতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত হয়নি। তাদের কোন অপরাধ করে থাকলে সেই অপরাধের জন্য আইন আছে, আদালত আছে, আইন, আদালতের মাধমেই তাদের বিচার হতে পারত। কিন্তু শান্তির জন্য দেশেটির স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সূচী যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, এই রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্যাতনের স্বীকৃতি দিয়ে এবং দেশথেকে বিতাড়িত করার নির্দেশনা দিয়ে শান্তির জন্য যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তার চরম অবমাননা করছেন তিনি।

আমি নামিদামী কোন লেখক নই, এমনকি কলাম লেখার মতো বা রাষ্ট্রীয় কোন বিষয় নিয়ে লেখার মত কোন যোগ্যতাও আমার নেই। তবুও রোহিঙ্গাদের উপর গত কয়েকদিনের নির্যাতনের দৃশ্য দেখে মনের তাগিদেই একটু লেখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখ লাখ শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। সেজন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশ চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবে। আর সে সময় আশ্রয় দেয়ার জন্য ভারতও বিশ্বে মানবতার রাষ্ট্রের পরিচয় দিয়েছিল। বর্তমান সময়ে রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে ভারত সরকার কি পক্ষেপ নেবে, বা তাদের বক্তব্যই বা কি, এ বিষয়ে আমার পরামর্শ দেয়ার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। আমি স্বাধীন বাংলাদেশের একজন নাগরিক। সেই হিসাবে আমি বলছি, মানবতার প্রশ্নে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আশ্রয় দিয়ে তিনি প্রমান করেছেন, তিনি জাতির পিতার আর্দশের কন্যা।

তিনি আশ্রয় দিয়ে এটিও প্রমাণ করেছেন, তিনি একজন বিশ্ব মায়ের দায়িত্বও পালন করেছেন। আমি দেশের ধর্ম-বর্ণ-নিবিশেষে সকল শ্রেনি পেশার বিত্তমানদের কাছে আহবান জানাব, ‘অজনার উদ্দেশ্যে নিজেরদের ঘরবাড়ি, সহায় সম্পত্তি ফেলে রেখে যারা জীবন বাচাঁতে একটু আশ্রয়ের জন্য আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে এসেছে’ তাদেরকে এমুহুর্তে মৃত্যু উপত্যাকায় না পাঠিয়ে শেখ হাসিনা স্বাধীন বাংলাদেশে আশ্রয় দেবার মত যে কাজটি করেছেন সেই কাজটির আরও সাহস যোগাতে সেই আশ্রিতদের পাশে আমাদের যার যে সামর্থ্য আছে তা নিয়েই খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানাই। পাশাপাশি জাতিসংঘ এবং বিশ্বনেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ জানাবো অং সাং সু চি শান্তির জন্য যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তা তার কাছ থেকে তার কৃতকর্মের জন্য প্রত্যাহার করে নিন। আমি দাবী জানাব শান্তির জন্য এই নোবেল পুরস্কার রোহিঙ্গা শরানার্থীদের মানবতার প্রশ্নে আশ্রয় দেয়ার জন্য তোলে দিন শেখ হাসিনার হাতে।

(বিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭)