ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » প্রবাসের চিঠি » বিস্তারিত

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ২১ সেপ্টেম্বর, নাগরিক সংবর্ধনা ১৯ সেপ্টেম্বর

২০১৭ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৬:০৫:২৪
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ২১ সেপ্টেম্বর, নাগরিক সংবর্ধনা ১৯ সেপ্টেম্বর

প্রবাস ডেস্ক : আগামী ১৮-২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক আসছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে তিনি ৫২ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এ তথ্য জানান।

তিনি আরো বলেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য বা থিম হচ্ছে ফোকাস অন পিপল: স্টাভিং ফর পিস এন্ড ডিসেন্ট লাইফ ফর আল অন এ সাস্টেনেইবল প্ল্যানেট- এটি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণে বিধৃত বৈশ্বিক অভিষ্ঠ লক্ষ্যের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এবারের অধিবেশনে এ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিষদ হতে এ বিষয়ে যে প্রেস বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে তা সম্পর্কে আপনারা অগত আছেন। এটি গত ৯ বছরে নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক মিয়ানমার বিষয়ে প্রদত্ত প্রথম বক্তব্য। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এবারের জাতিসংঘে উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের বৃহত্তর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবো। একাধিক কারণে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষাকল্পে জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব জাতিসংঘের সংস্কার কার্যক্রমের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তাঁর এই উদ্যোগের সঙ্গে আমরা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের অধিকাংশই সংহতি প্রকাশ করেছে। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের সংস্কারের উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন যেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বের অন্যান্য অনেকগুলো দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধানবৃন্দের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন।

অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী শান্তিরক্ষী এবং জাতিসংঘের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যতানের কিছু নজীর আছে।

এ বিষয়ে নতুন মহাসচিব অত্যন্ত সোচ্চার। শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশসমূহসহ এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালনকারী সদস্য রাষ্ট্রসমূহের রাষ্ট্র/সরকার প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সার্কেল অব লিডারশীপ নামে একটি প্লাটফর্ম গঠন করতে চাচ্ছেন।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মাত্র ৪টি দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধান এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং যার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এসইএ- এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কঠোর নীতিগত অবস্থানকে জোরালোভাবে তুলে ধরবেন একই দিন ১৮ সেপ্টেম্বরে। ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী মি. স্টেফান লফভেন-এর উদ্যোগে আয়োজিতব্য গ্লোবাল ডিল এর ফলো আপ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী টেকসই শিল্পায়ন, শোভন ও যথোচিত কর্ম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়গুলো তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করবেন।

১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে মহাসচিবের হাই লেভল প্যানেল অন ওম্যান’স ইকোনোমিক এ্যামপাওয়ারমেন্ট-এ একজন প্যানেলিষ্ট হিসেবে বক্তব্য দেবেন। কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘ মহাসচিব, আইএমএফ প্রধানসহ বিশ্বের কয়েকটি স্বনামধন্য বহুজাতিক কোম্পানীর প্রধানগণ এতে বক্তব্য রাখবেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ তুলে ধরবেন। একই দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওআইসি’ এর রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্টসহ ওআইসির দেশসমূহের নেতৃবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রসমূহের জোরালো সমর্থন কামনা করবেন। ২০ সেপ্টেম্বর নিউক্লিয়ার শীর্ষক চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের পক্ষ হতে এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করবেন।

২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের একটি সভায় বক্তব্য রাখবেন। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ক্রমাগত উন্নতি তুলে ধরবেন এবং আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উপর জোর দেবেন।

২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মত এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দিবেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য গাঁথার বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে মর্মে আশা করা যাচ্ছে। ‘রূপকল্প ২০২১’-এর আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন

লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে সরকার যে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, সে বিষয়ে আলোকপাতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশাগুলোও তাঁর বক্তৃতায় থাকবে। এছাড়াও তিনি কিছু বৈশ্বিক বিষয়ক যেমন: মধ্যপ্রাচ্য সংকট, পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণ, মানব পাচার রোধ, সুনীল অর্থনীতি, জাতিসংঘের সংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের মতামত তুলে ধরবেন। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়েও জোরালো বক্তব্য রাখবেন।

এছাড়াও ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে আয়োজিত হাই লেভেল প্যানেল অন ওয়াটার এর একটি বিশেষ বৈঠকে এই প্যানেলের একজন মনোনীত সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। গত ২১ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে ২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডার পানি সম্পদের প্রাপ্যতা ও ব্যবস্থাপনা এবং সকলের জন্য স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণ সম্পর্কিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ‘প্যারিস চুক্তি’-তে পানি সম্পর্কিত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে এই প্যানেলটি গঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে অস্ট্রেলিয়া, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ডস, মরিশাস, মেক্সিকো, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, সেনেগাল ও তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রপতি/ প্রধানমন্ত্রী এই প্যানেলে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের বাইরে প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সাথে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা বিষয়ে মত-বিনিময় করবেন। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশ থেকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল যোগ দেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

এর পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র/ সরকার প্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব, যুক্তরাষ্ট্রের আইটি বিষয়ক স্বনামধন্য কিছু কোম্পানীর প্রেসিডেন্টএবং কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত একটি রিসেপশন, কমনওয়েলথ সরকার/রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত একটি রিসেপশন ও জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করবেন।

এদিকে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেশ হাসিনা নাগকি সংবর্ধনায় ভাষণ দেবেন আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর।

(বিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭)