প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
আ. লীগের ভেতরে একজন কুখ্যাত প্রতারক মাওলানা নূর মোহাম্মদ সিরাজী ওরফে লিটন
২০২০ মে ১৭ ১৫:৩২:১৫
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নের চেড়াঘাট গ্রামের ১৩০ বছরের প্রাচীন ছয় গম্বুজ মসজিদের পাশে দরিদ্র কৃষক সিরাজুল ইসলামের ছেলে লিটন। জন্ম ১৯৮৭ সাল। সিরাজুল ইসলামের চার ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে নূর ইসলাম বিদেশে কর্মরত। তার বিরুদ্ধে বিদেশে লোক নিয়ে যাওয়ার নাম করে এলাকার অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। মেঝ ছেলে লিটন ওরফে নূর মোহাম্মদ সিরাজী ওরফে লিটন। কলারোয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে লিটন।
পরে জামায়াতের দুর্গ খ্যাত সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি কামিল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো সে। এখানে পড়াশুনা করাকালিন সে পার্শ্ববর্তী একটি ফ্রি লোজিং এ থাকতো। পড়াশুনা করাকালিন সে ওই বাড়ির মেয়ে দিলুকে বিয়ে করে। প্রথম স্ত্রী দিলুর একটি ছেলে রয়েছে। বাচ্চাকে নিয়ে দিলু ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রান্নার কাজ করে। এরপর সাতক্ষীরার ন্যাচারাল নিউট্রিক ফুড নামের এক এনজিওতে চাকুরি করার সুবাদে সেখানে আরো একটি বিয়ে করে। ওই কোম্পানীতে চাকুরি করার সময় টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে জেলে যেতে হয়। এরপর সে আরো দু’টি বিয়ে করে।
তবে এলাকায় সরাসরি সে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তবে আগরদাঁড়ি কামিল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করাকালিন সে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে অনেকে মনে করে। জেলা ও জেলার বাইরে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি ভারতে যেয়েও সে মাহফিলে বক্তব্য দিত। তার সুন্দর কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গির কারণে সাধারণ মানুষকে সে অনায়াসেই বসে আনতে পারতো। ২০১৪ সালে সে ঢাকায় চলে যেয়ে মৌচাক এলাকায় থাকতো। সেখানে যেয়ে সে আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিশে সেলফি তুলতো। ওইসব ছবি সে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতো।
কৌশলে সে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাকুরি দেওয়ার নামে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। নিজের সেঝ ভাই কমিউনিটি ক্লিনিকে মাষ্টার রোলে কর্মরত নূর হোসেনের স্ত্রী কামরুন্নাহারকে স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরি দেওয়ার নামে সে এক লাখ টাকা নিয়েছে। সিরাজুল ইসলামের ছোট ছেলে আলী হোসেনও ঢাকায় থাকেন। তবে সে কি কাজ করে সে সম্পর্কে এলাকার কেউ জানেন না। বড় ছেলে, মেঝ ছেলে ও নিজের প্রতারণার জন্য কয়েকবার জেল খাটতে হয়েছে সিরাজুল ইসলামকে। লিটন, নূর ইসলাম ও সিরাজুলের বিরুদ্ধে চেক জালিযাতিসহ প্রতারনার কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে।
প্রতারিত ব্যক্তিদের টাকা পরিশোধ করতে যেয়ে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া কয়েক বিঘা জমি বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়েছেন সিরাজুল ইসলাম। তবে কোন পাওনাদার বাড়িতে গেলে সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী তেড়ে মারতে যান তাদের। একাদশ সংসদীয় নির্বাচনে লিটন প্রয়াত শওকত হোসেন নিলুর এনপিপিতে যোগ দিয়ে বড় নেতা হয়ে যান। তিনি ওই পার্টি থেকে সংসদীয় নির্বাচন করার জন্য এলাকায় পোষ্টার সাটেন। ঢাকায় অবস্থানকালে লিটন প্রথমে ওলামা লীগের কয়েকজন নেতার ঘণিষ্টতা লাভ করে। পরে পার্বত্য সন্ত্রাসী রকি বড়ুয়া, হেফাজত ইসলাম, ও ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে সংখ্যতা গড়ে তোলে।
তারপর শুরু করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী আর এমপিদের সাথে ঘনিষ্ঠতা। এভাবেই সে রকি বড়ুয়াকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। উল্লেখ্য রকি বড়ুয়ার বান্দরবনের ডেরায় লিটন প্রতিনিয়ত নারীসহ যাতায়াত কওে থাকে। সারা দেশে ভ্রমন করে সে। রংপুরের জয় সদন থেকে শুরু করে গণভবন! আর ওসি থেকে শুরু করে এডিশনাল আইজি পর্যন্ত! সমস্ত জায়গায় তার পদচারণা আর সেলফিবাজী। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর সচিব বিপুল বিক্রমে তার পদচারণা আর সেলফিবাজী। সাঈদীর ছেলে, রকি বড়ুয়া, হেফাজত ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, সহ জামাত শিবির!
সব জায়গায় তার অবাধ পদচারণা। মূলত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সোর্স হিসাবেই সে নিয়োজিত। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে রকি বড়ুয়া দোতলা থেকে লাফ দিয়ে পড়েন। এতে তার পা ভেঙে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে লিটন ওরফে নূর মোহাম্মদ সিরাজীর সখ্যতা বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে। আলোচিত হয় দেশজুড়ে। ক্ষমতাসীন দলের বহু নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে আসে। এরই জের ধরে গত মঙ্গলবার কলারোয়া থানার পুলিশ লিটনের জামায়াত বিএনপি অধ্যুষিত চেড়াঘাট গ্রামের বাড়িতে যায়।
সরেজমিনে রোববার সকালে কলারোয়ার চেড়াঘাট গ্রামে গেলে স্বজন ও এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপরোক্ত তথ্য এ প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন।
তবে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির উল গিয়াস বলেন, লিটনের জামায়াত কানেকশনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।
(আরকে/এসপি/মে ১৭, ২০২০)
