ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মিডিয়া » বিস্তারিত

পলাশবাড়ীতে প্রেসক্লাব জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি, গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষোভ

২০২১ এপ্রিল ০৬ ১৫:৩২:৩১
পলাশবাড়ীতে প্রেসক্লাব জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি, গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষোভ

আশরাফুল ইসলাম, গাইবান্ধা : গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলায় ১৯৮২ ইং সালে জেলা পরিষদের জায়গা লিজ নিয়ে ডাক বাংলা মাঠে প্রতিষ্ঠিত হয় পলাশবাড়ী প্রেসক্লাব।প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাপ্তাহিক অনড় পত্রিকার সম্পাদক শাহ আলম সরকার ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন পাতা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে একতলা বিশিষ্ট নিজস্ব একটি ভবনে প্রেসক্লাব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এক সময় ১২/১৪ জন সাংবাদিক এই প্রেসক্লাবে থাকলে ও বর্তমানে রয়েছে ৭১ জন সদস্য।

সময়ের ব্যবধানে ১৯৯৪ সালে প্রেসক্লাব থেকে চলে এসে শুধু মাত্র কাগজে কলমে রিপোর্টার ইউনিটি নামে একটি সাইনবোর্ড তুলে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায় করে সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ। এরপর তাকে বাদ দিয়ে রিপোর্টাস ইউনিটির নতুন কমিটি গঠন করা হয় শেষ অবদি যার সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। পরবর্তীতে ২০১২ সালে প্রেসক্লাব পলাশবাড়ী নামে একটি সংগঠন জন্ম হয় এখানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মনজুর কাদির মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রতন।

২০১৮ সালে ৩য় প্রেসক্লাব চৌমাথা মোড় পলাশবাড়ী নামে একটি প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ড উত্তোলন করে।এখানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাসুদার রহমান মাসুদ। তিনটি প্রেসক্লাব ও একটি রিপোর্টার ইউনিটি মোট ৪ টি সংগঠনের সাংবাদিক ঐক্য না থাকায় প্রশাসনিক দপ্তর সহ সাধারণ মানুষ ও বিব্রতকর অবস্থায় পরে যায়।প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার চেষ্টা করে ও ঐক্যবদ্ধের ব্যাপারে ফলপ্রসূ আলোচনা না হওয়ায় প্রশাসনের ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগ বারংবার ভেস্তে যায়।

এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ উপ নির্বাচনে গাইবান্ধা ০৩ পলাশবাড়ী সাদুল্লাপুর আসনে নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ উম্মে কুলসুম স্মৃতি।স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রানের দাবীর প্রেক্ষিতে তিনি ৪ টি সংগঠনের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে অবশেষে ৩ টি সংগঠন বিলুপ্ত করে সকল সদস্যকে মুলধারার প্রেসক্লাবে অন্তভূক্ত করা হয়। মোট ৭১ জন সাংবাদিক নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে রবিউল হোসেন পাতা সভাপতি ও সিরাজুল ইসলাম রতন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়।অন্যান্য পদে আরো ২৫ জন সদস্য নির্বাচিত হয়। নবনির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব গ্রহনের পর অপসাংবাদিক ছাটাই করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পলাশবাড়ী প্রেসক্লাব।

প্রেসক্লাবের নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা প্রেসক্লাব নিয়ে গভীর ষরযন্ত্রের জাল বিছাতে শুরু করে। নতুন সংগঠন সৃষ্টি করতে তারা উঠে পড়ে লাগে শুরু হয় নানা জল্পনা কল্পনা । প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় গত ফেব্রুয়ারী মাসে উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ শামিকুল ইসলাম সরকার লিপনসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে অব্যাহতি প্রদান করে। এরপর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবু বক্কর প্রধান,সহ সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, ও সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ শামিকুল ইসলাম সরকার লিপন আবারো সাংবাদিকদের ঐক্য বিনষ্টের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়।তারা নিজেকে সাংবাদিক দাবী করে ২/৩ জন সাংবাদিককে সাথে নিয়ে আবারো ২য় একটি প্রেসক্লাবের সাইনবোর্ড উত্তোলন করে।বিষয়টি দেখতে পেয়ে মুলধারার সাংবাদিকরা উক্ত সাইনবোর্ড প্রকাশ্যে খুলে ফেলে দেয়।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবু বকর প্রধান এর বখাটে ছেলে তৌফিক আহম্মেদ শাওন ৪ এপ্রিল শনিবার সন্ধা ৭ টায় তার মাদকাসক্ত বন্ধুদের সাথে নিয়ে প্রেসক্লাবে হামলা চালায়।এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রেসক্লাব থেকে বের হতে বলে প্রেসক্লাব আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদর্শন করেন। এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রতন কে জানে শেষ করবেন বলে খুজতে থাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে চলে যান। এঘটনায় প্রেসক্লাবের সদস্যদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় পরে কমিটির এক জরুরী সভায় আয়োজন করা হয়। প্রেসক্লাবের এ জরুরী সভায় বখাটে শাওনের এহেন আচরনের প্রতিবাদে রোববার বাদ মাগরিব পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবে এক জরুরি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সাংবাদিক নেতারা উক্ত ঘটনার তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হুমকি প্রদানকারী বখাটে শাওনের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। পাশাপাশি আওয়ামীলীগ সভাপতির নাম ব্যবহার করে তার ছেলে শাওনের নেতৃত্বে চিহিৃন্ত মাদক কারবারীদের মাককারবারসহ বিভিন্ন অপকর্ম ধারাবাহিক ভাবে গণমাধ্যমে প্রচারনার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। এদিকে পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবে ঢুকে গণমাধ্যমকর্মীদের গালিগালাজ হুমকি ও প্রেসক্লাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় হুমকি প্রদান করার তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হুমকি প্রদান কারী ব্যক্তি দৃষ্ঠান্ত মুলক শাস্তি দাবী করেছেন জেলার সর্বস্তরের গণমাধ্যমকর্মীগণ।

(এস/এসপি/এপ্রিল ০৬, ২০২১)