ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

জামালপুরে গরীবদের জন্য সাধ্যের মধ্যে বাজার

২০২১ মে ১৩ ১৬:৫৯:৪৪
জামালপুরে গরীবদের জন্য সাধ্যের মধ্যে বাজার

রাজন্য রুহানি, জামালপুর : নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চালু হয়েছে সাধ্যের মধ্যে বাজার। তুলনামূলক কমমূল্যে এখানে পাওয়া যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। প্রতিদিন দুপুর ২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে বাজারটি। সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে কেনাকাটা।

বাজারটি চালু করেছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। এই বাজার পরিচালনায় সহায়তা করছেন দেওয়ানগঞ্জ অফিসার্স ক্লাব ও স্থানীয় স্বচ্ছল ব্যক্তিরা। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চালু এই বাজারে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। বাজারে বেচাকেনায় সহযোগিতা করছে ফেসবুক গ্রুপ 'প্রিয় দেওয়ানগঞ্জ' এবং 'হ্যালো দেওয়ানগঞ্জ' নামে দুইটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রায় ৫০জন স্বেচ্ছাসেবক। গত ৬ মে থেকে উপজেলা প্রাঙ্গণে চলছে এই বাজার।

গৃহস্থের তাজা শাকসবজি, ফলমূল ও তরিতরকারি এখানে স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি দ্রব্যে ভর্তুকি দিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রাখা হচ্ছে মূল্য। ফলে উপজেলার প্রায় দেড় হাজারের অধিক নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে এই বাজারে আসেন। এছাড়া বাজারে আগত গরিব, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের পণ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে।

এই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ, তেল, শাক-সবজি, সেমাই-চিনিসহ প্রায় ১৫টি পণ্য। এখানে ৫০ টাকা কেজির চাল ৩০টাকা, ৭০ টাকা কেজির ডাল ৫০ টাকা, ১২০ টাকা কেজির মাছ ৮০ টাকা, ৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ২০ টাকা, ১৩৮ টাকা কেজির সয়াবিন তেল ১০০ টাকা ও ১৫ টাকা কেজির আলু ১০ টাকায় পাওয়া যায়।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাধ্যের মধ্যে বাজারটি করোনা মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত খোলা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন উপজেলা প্রশাসন।

বাজর করতে এসেছিলেন পৌর শহরের কালিকাপুর এলাকার বৃদ্ধা ছলোভান। স্বামী পরিত্যক্তা। কোনো সন্তান না থাকায় ছোট ভাইয়ের আশ্রয়ে তিনি থাকেন। এখানে কম দামে জিনিস বেচাকেনা হয় শুনে তিনি এসেছেন। স্বল্পমূল্যে জিনিস কিনতে পেরে তিনি খুব খুশি।

তিনি জানান, 'করোনায় আমার ভাইয়ের কামাই কইমে গেছে। ইনু বলে দাম কম। হুইনে আইছি। সদাইপাতি কিনলেম। জিনিসগুলা ভালা। আরও বাজারের তনে ইনু হস্তাই পাইছি। এমুন বাজার থাকলে গরিবগরে ম্যালা উপকার অবো।'

পৌর শহরের কৈবর্তপাড়া বৃদ্ধা লিলি রানী দাস জানান, 'এই বাজারে অনেক কম দামে জিনিসপত্র কিনবার পারছি। ট্যাহাও বাচছে।'

সাধ্যের মধ্যে বাজার নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। তাই নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তার জন্য ভর্তুকি দিয়ে তাদের সাধ্যের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বাজারে গরীব, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী এবং যাদের টাকা নেই তাদের বিনামূল্যে বাজার দেয়া হয়।

এখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজারের চেয়ে কম দামে কিনতে পারেন। এতে তারা একদিকে আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন, অন্যদিকে করোনায় সামাজিক দূরুত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। করোনা মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাজারটি চালু রাখার চেষ্টা থাকবে।

(আরআর/এসপি/মে ১৩, ২০২১)