প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা
শ্রীপুরে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও অডিটরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ৬
২০২১ জুলাই ০৫ ১৯:০৭:১৬
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : গাজীপুরের শ্রীপুরে বিভিন্ন ব্যক্তিদের নামে ভূয়া এ্যাডভাইস দাখিলের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টায় শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রহমান, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাষ্টাররোলে কর্মরত তানভীরসহ ৯জনকে অভিযুক্ত করে গত ১লা জুলাই মামলা করেছেন সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানা হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক মো: রেজাউল হক।
অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার নওদাবস নিউবড়ভিটা গ্রামের রনজিত কুমার, প্রবাশ চন্দ্র রায়, সুবল চন্দ্র মোহন্ত, কমল চন্দ্র রায়, ফুলমনি রাণী, ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার শাহেনা আক্তার। এঘটনায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ডেপুটি ভিডিশনাল অফ কন্টোলার একাউন্টস্ এর মো: সহিদুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৭জুন উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসারের সাক্ষরকৃত এ্যাডভাইসের মাধ্যমে ৫টি বিল পরিশোধের (সরকারী চাকুরীজীবির আনুতোষিক) লক্ষে মোট ২ কোটি ৪৬লাখ ৯হাজার ৯৬০টাকা প্রদানের নিমিত্তে অভিযুক্ত মাষ্টাররোলের কর্মচারী তানভীর এডভাইসের হার্ড কপি ব্যাংকে নিয়ে আসেন। মোটা অংকের টাকা হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী এসময় ব্যাংক থেকে হিসাবরক্ষণ অফিসে ফোন করার পর অভিযুক্ত হিসবারক্ষণ কর্মকর্তা এসব এডভাইসের নিশ্চয়তা দেন।
এডভাইস অনুযায়ী সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী কুড়িগ্রাম শাখায় অভিযুক্ত রনজিত কুমারের সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৮লাখ ৪৫হাজার ৭২০টাকা, প্রবাশ চন্দ্র রায়ের হিসাব নম্বরে ৬৫লাখ ৭২হাজার ১২০টাকা, সুবল চন্দ্রের হিসাব নম্বরে ৪০লাখ ৭১হাজার ৭২০টাকা, কমল চন্দ্রের হিসাব নম্বরে ৪২লাখ ৪৯হাজার ৮৮০টাকা, ফুলমনি রাণীর হিসাব নম্বরে ৪৮লাখ ৭০হাজার ৫২০টাকা প্রদান করা হয়। এমন ঘটনার পরদিন ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ তৈরী হলে তারা নাগশ্বরী কুড়িগ্রাম সোনালী ব্যাংকের শাখার যোগাযোগ করে হিসাব নাম্বার গুলো যাচাই করেন।
জানা যায়, হিসাবধারীরা সরকারী চাকুরীজীবি নয় তারা প্রত্যেকেই কৃষক। পরে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে অধিকতর খোঁজ নিয়ে জুনিয়র অডিটর খলিল উদ্দিন এই বিলে ঝামেলা রয়েছে বলে জানান। পরে জালিয়াত চক্রের এমন কান্ডে দ্রুত নো পেমেন্টের জন্য সোনালী ব্যাংক নাগেশ্বরী শাখাকে বলা হয়। এরপর অভিযুক্ত শাহেনা আক্তার সোনালী ব্যাংক উত্তরখান শাখা হতে উক্ত টাকাগুলো উত্তোলনের লক্ষ্যে নাগেশ্বরী শাখার চেকগুলো জমা দেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চৌকশতায় শেষ পর্যন্ত সরকারী টাকা হাতিয়ে নিতে পারিনি জালিয়াত চক্র। এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় গত ২৯জুন অভিযুক্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বিলটি স্থগিত রাখার জন্য পত্র প্রেরণ করেন।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ বলেন, তার সরলতার সুযোগে তার অফিসেরই কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা তার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এ বিল ব্যাংকে প্রেরণ করেন। এছাড়াও তানভীর ওই এ্যাডভাইস গুলোতে আমার স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসিয়েছে। তিনি জালিয়াতির সাথে জড়িত নন।
তবে সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানার হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, বিধি অনুযায়ী হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে এডভাইস আসলে আমরা টাকা পরিশোধে বাধ্য। মোটা অংকের টাকা হওয়ায় আমরা প্রথমে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি এর নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। তবে আমাদের অনুসন্ধানে এ জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে।
হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ডেপুটি ভিডিশনাল অফ কন্টোলার একাউন্টস্ এর মো: সহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মামলার বাদী সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। পূর্ণ তদন্ত শেষ করা না পর্যন্ত এর বাইরে মন্তব্য করা ঠিক হবেনা বলে তিনি জানান।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ৯জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
(এস/এসপি/জুলাই ০৫, ২০২১)
