ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমিকা : '৭৪-এর দুর্ভিক্ষ

২০২১ জুলাই ২৫ ১৩:৩৮:০৮
বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমিকা : '৭৪-এর দুর্ভিক্ষ

আবীর আহাদ


রক্তাক্ত আগস্ট সমাগত। আজ থেকে ৪৬ বছর পূর্বে এ আগস্ট মাসেই বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশী-বিদেশী স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ধারাবাহিক চক্রান্তে মর্মান্তিকভাবে সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পূর্বে কীভাবে চক্রান্তকারীরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার, তাঁর আকাশচুম্বি ভাবমূর্তিকে খর্ব ও তাঁর হত্যাকে যুক্তিযুক্ত করার হীনলক্ষ্যে দেশে একটি কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিলো সেটির কিছু কাহিনী এ নাতিদীর্ঘ নিবন্ধে তুলে ধরা হলো। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ওপর একটি ধারাবাহিক লেখনী প্রকাশ করা হবে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর আলশামস ও তথাকথিত শান্তি কমিটি গোটা বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। বিশাল ও ব্যাপক ঐ ধ্বংসযজ্ঞের পর ১৯৭২ সালে অনাবৃষ্টি ও তীব্র খরায় দেশব্যাপী ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। একাত্তরের সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধের কারণে কৃষকরা ফসল উৎপন্ন করতে পারেননি। ৭২/৭৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের ফলে জ্বালানিসহ বিশ্বে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। অপরদিকে ৭৩ সালে দেশে প্রবল বর্ষণ-বন্যা এবং ৭৪ সালে দু'বার প্রলয়ংকরি বন্যার প্রকোপে দেশে ব্যাপক ফসলহানিতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। অন্যদিকে মার্কিন-ঘেঁষা আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলোর আর্থিক অসহযোগিতা এবং দেশের অভ্যন্তরের স্বাধীনতাবিরোধীদের নানাবিধ চক্রান্তের কারণে স্বাধীনতা-উত্তর সার্বিক খাদ্যাভাব ৭৪ এসে চরম আকার ধারণ করে। দেশে চরম মুদ্রাস্ফীতিও ঘটে।

এ-সুযোগ গ্রহণ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। দুর্ভিক্ষাবস্থাকে আরো কৃত্রিম উপায়ে চাঙ্গা করার হীন লক্ষ্যে তারা তাদের সেবাদাস ও ভাড়াটে সাংবাদিকদের দিয়ে দেশী-বিদেশী পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের আশ্রয় নেয়। এদেশের চরম ডানপন্থী পত্রিকা ইত্তেফাক, মাওলানা ভাসানীর চরম বামপন্থী হককথা, চৈনিকপন্থী এনায়েতউল্লাহ খানের হলিডে, বিভ্রান্ত জাসদের গণকন্ঠসহ সরকারি মালিকানাধীন দৈনিক বাংলার চৈনিক বামপন্থী কলামিস্ট নির্মল সেন ও কিছুসংখ্যক পেইড লেখক-কবিও এ-অপপ্রচারে লিপ্ত হন। এ-কারণে দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর প্রগতিশীল সরকারের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়। শুধু অপপ্রচারের বিষবাষ্পই নিক্ষেপ নয়, দেশের খাদ্যাভাব মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ৭৪ সালের প্রথমদিকে নগদমূল্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বঙ্গবন্ধু যে চাল ক্রয় করেন, তা সরবরাহ দিতে তারা গড়িমসি করে। উপরন্তু খাদ্যশস্য বোঝাই জাহাজকে যান্ত্রিক গোলযোগের অজুহাতে আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে নোঙর করে রাখা হয়। এ-সবকিছু করা হয় দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির হীন লক্ষ্যে ।

মার্কিন সরকারের এ-চক্রান্তের আভাসও দিয়েছেন আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড: জাস্ট ফারল্যান্ড । ১৯৯২ সালের ৭ মার্চ ঢাকায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল মানবসৃষ্ট। খাদ্য উৎপাদন কম হওয়ার ফলেই শুধু দুর্ভিক্ষ হয়নি, তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যকার মতবিরোধের কারণে খাদ্য সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য যে, ড: ফারল্যান্ড ৭২ থেকে ৭৫ সালে ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাঙ্ক মিশনের আবাসিক প্রধান ছিলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত দেশী-বিদেশী স্বাধীনতাবিরোধীচক্র তাদের কালোহাত প্রসারিত করেছিল আমাদের দেশের খাদ্যবিভাগেও।

বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট থাকা সত্বেও বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সূত্রে প্রায় ছয় লক্ষ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করেছিলেন সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করার জন্য। ঐ ছয় লক্ষ টন খাদ্যশস্য ছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মোমেন খান ও সাইলো পরিচালক মারূফ মোর্শেদের নিয়ন্ত্রণে। মুসলিম লীগের অন্ধভক্ত সাবেক ইপিসিএস অফিসার মোমেন খান ও আলবদর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মারূফ মোর্শেদ স্বাধীনতাবিরোধীদের পেইড এজেন্ট হিশেবে ঐ দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারা অতি চালাকির সাথে যেখানে খাদ্যাভাব সেখানে খাদ্যশস্য না-পাঠিয়ে অপ্রয়োজনীয় স্থানে খাদ্যশস্য সরবরাহ এবং খাদ্যশস্য আত্মসাতের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষকে প্রকট করে তোলেন। তারই পুরস্কারস্বরূপ পরবর্তীকালে জেনারেল জিয়া ঐ খাদ্যসচিব মোমেন খানকে খাদ্যমন্ত্রী বানিয়ে ছিলেন। অপরদিকে মোমেন-সহযোগী মারূফ মোর্শেদ খাদ্যবিভাগের মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি লাভ করেছিলেন। মোমেন খানের এহেন অপকর্মের পুরস্কার তো তাকে দেয়াই হয়েছিল, এমনকি বিএনপি নেত্রী তার প্রতি আরো কৃতজ্ঞ থেকে তারই পুত্র মঈন খানকেও মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়ার পাশাপাশি তাঁর দলের স্থায়ী কমিটিতেও স্থান করে রেখে দিয়েছেন।

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষকে দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচারিত করার হীন লক্ষ্যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা-সিআইএর আশীর্বাদপুষ্ট বলে বহুল আলোচিত দৈনিক ইত্তেফাক, জাসদের গণকন্ঠ, মাওলানা ভাসানীর হককথা ও এনায়েতউল্লাহ খানের হলিডেসহ আরো কিছু পত্র-পত্রিকা ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় দুর্ভিক্ষ নিয়ে অনেক আজগুবি, মিথ্যা ও বানোয়াট প্রতিবেদন-কাহিনীসহ নানান ধরনের ছবি প্রকাশ করেছিল । বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের গভীর উদারতার সুযোগে অনেক ডান-বামপন্থী তথা কট্টর মুজিববিরোধী রাজনীতিক-সাংবাদিক সরকার নিয়ন্ত্রিত বহুল প্রচারিত পত্র-পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থায় ঢুকে পড়ে এবং তারা দুর্ভিক্ষ নিয়ে নানান অতিরঞ্জিত কাহিনী ও বিদ্রুপাত্মক প্রতিবেদন ও নিবন্ধ প্রকাশ করে দুর্ভিক্ষকে প্রকট করে তোলার সাথে সাথে এর জন্য বঙ্গবন্ধু ও তাঁর প্রগতিশীল সরকারের ওপর সমস্ত দোষ চাপাতে থাকে। তবে এটাও অনস্বীকার্য যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রী এমপি ও নেতাদের অতি খাই-খাইয়ের কারণেও জনমনে আওয়ামী লীগের প্রতিও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এদের সীমাহীন দুর্নীতি ও দৌরাত্বে অতিষ্ঠ হয়ে বঙ্গবন্ধু প্রায়শ:ই আক্ষেপ করে বলতেন, সবাই পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি ! দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষকে বাঁচাতে আমি ভিক্ষা করে আনি, আর চাটারদল সেগুলো চেটে চেটে খায়।

কিছু কিছু লেখক-কবি-সাংবাদিক বিশেষ করে গাজাঁখোর বলে ব্যাপক পরিচিত কবি রফিক আজাদ 'ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র চিবিয়ে খাবো' জাতীয় লাগামহীন শ্লেষাত্মক উক্তি করতেও দ্বিধা করেনি ! এসব কিছু ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারকে হেয়প্রতিপন্ন করে ক্ষমতাচ্যুত করার নীলনক্সা। তার কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় যখন জিয়ার আমলে রংপুরে চরম দুর্ভিক্ষ হলেও সেসব কবি-লেখক-সাংবাদিকদের কলমে তা ধরা পড়েনি! আশি সালে রংপুরে ভাতের অভাব দেখা দিয়েছিল। ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল বধূ-তরুণীরা। বেশ্যা খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করার জন্য তারা ডিসি অফিসের সামনে ধর্ণা দিয়েছিল। সেদিন তো 'ভাত দে হারামজাদা' জাতীয় কবিতা ও নিবন্ধ তো লেখক-কবি-সাংবাদিকরা লেখেননি! মূলকথা হলো কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিকারীরা চুয়াত্তর সালে পয়সা ছিটিয়ে ছিল মিথ্যা কাহিনী ছড়ানোর লক্ষ্যে আর আশি সালে বেশ্যা কাহিনী তারা বেমালুম চেপে গেছেন জিয়ার পয়সা খেয়ে। পত্র-পত্রিকার মালিকরাও এ-নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। প্রকৃত কথা হলো, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারকে উৎখাতের মিশন নিয়েই এসব সাংবাদিক কবি লেখক ও পত্রিকা মালিকগণ আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সেবাদাসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সেই মুজিবও নেই, তাই সেই শক্তিশালী (!) লেখনিও নেই। কারণ তাদের মিশন শেষ!

কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারি থানার রমনা ইউনিয়নের মাঝিপাড়ার বাসন্তীকে নিয়ে উনিশশো চুয়াত্তর সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যে আবেগঘন সচিত্র প্রতিবেদন বের হয়েছিল তাকে বঙ্গবন্ধুবিরোধীরা তখন একটা শক্তিশালী অপপ্রচারের হাতিয়ার হিশেবে ব্যবহার করেছিল, যদিও বাসন্তীর জালপরা কাহিনীটি পরবর্তীকালে একটা চক্রান্তমূলক বানোয়াট কাহিনী বলে প্রমাণিত হয়েছিল। তবে সেই বাসন্তীর জালপরা কাহিনীটি সামনে এনে আজো রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগকে আঘাত করা হয়।

যে বাসন্তীকে নিয়ে দেশ-বিদেশে এতো তুলকালামকাণ্ড ঘটেছিল, তার বিশ/একুশ বছর পরও কেন সেই বাসন্তীকে আরো করুণ অবস্থায় থেকে অবশেষে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল ? তার ভাগ্যের উন্নতি কেনো হলো না ? বাসন্তী কাহিনী সামনে নিয়ে যারা বিশ/একুশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, যে বাসন্তী কাহিনী বঙ্গবন্ধুকে পর্যন্ত বিপর্যস্ত করেছিল সেই বাসন্তীর খোঁজখবর কেউ কি নিয়েছিলেন ?

আসল কথা হলো, চুয়াত্তর সালে স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল সুযোগসন্ধানী ও কায়েমী স্বার্থান্বেষীচক্র তাদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে বিকৃতমস্তিষ্কের বাসন্তীকে কাঁথা ও তার প্রতিবেশী আত্মীয়া দুর্গতিকে মাছ ধরার জাল পরিয়ে ছবি তোলে এবং তৎকালীন একমাত্র প্রভাবশালী পত্রিকা ইত্তেফাকে প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক চক্রন্তকারীরা এই ছবিটিকেই দেশ-বিদেশে ভাইরাল করে দেয়। উল্লেখ্য যে, তথাকথিত জালপরা বাসন্তীর ছবি ও কাহিনী প্রস্তুত করা হয় ঢাকা থেকে প্রেরিত আলোকচিত্রশিল্পী আফতাব আহমদের মাধ্যমে । পরবর্তীতে এ মনগড়া কাহিনী ও ছবি বঙ্গবন্ধুবিরোধীদের বক্তৃতামঞ্চেও অপপ্রচারের অন্যতম খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিকভাবে কিসিঞ্জার সাহেবেরাও একটা বড় মওকা পেয়ে যায় ।

পরবর্তীকালে বাসন্তীর চাচা বুদু রাম প্রকাশ করে দেয় যে, ঐ ছবি তোলার কাহিনী ছিল সম্পূর্ণ একটি চক্রান্ত। চিলমারির রমনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনসার আলী একটি বিশেষ চক্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ঐ ছবির আয়োজন করে। তিনি চরম অভাবগ্রস্ত বাসন্তী-দুর্গতিকে অর্থ ও সাহায্যের প্রলোভন দেখিয়ে দুর্গতিকে জাল এবং বাসন্তীকে কাঁথা পরিয়ে কলার ভেলায় তোলেন। ঢাকা থেকে আগত ইত্তেফাক পত্রিকার আলোকচিত্রশিল্পী আফতাব আহমদ ঐ অবস্থায় কতিপয় ছবি তোলেন। প্রকৃতির কী খেয়াল, আজ থেকে বেশ ক'বছর পূর্বে এই আফতাব আহমদ ঢাকার রামপুরায় নিজ ফ্লাটে অজ্ঞাতনামা খুনিদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন।

কাজেই সহজে বুঝা যায়, বাসন্তী-দুর্গতিদের দুর্গতির সুযোগ নিয়ে চক্রান্তকারীরা সুপরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে তাদের কার্যসম্পাদন করেছে, সময়ের গতিপথে তা ব্যুমেরাং হয়ে তাদেরকেই বিদ্রূপ করছে যদিও হারিয়ে গেছে সাতাশ হাজার দুর্ভিক্ষ প্রপীড়িত বাসন্তী-দুর্গতির দল, লক্ষ-কোটি মানুষ ক্ষুদার জ্বালায় কষ্ট পেয়েছে, তারই অপবাদ নিয়ে হারিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু, কলঙ্কিত হয়েছেন তিনি, কলঙ্কিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ।

চুয়াত্তরের ঐ দুর্ভিক্ষের কারণে সাতাশ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। সেই দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যু মানুষের মনে চিরকাল দাগ কেটে থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। সেই মৃত্যু নিয়ে কুচক্রী জ্ঞানপাপী অজ্ঞ মানুষের দল আজো বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেন। কিন্তু জিয়া-এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলের দুর্ভিক্ষ খরা বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের পরে সীমাহীন দুর্নীতি অযোগ্যতা অদক্ষতার কারণে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরেছে, সেই মৃত্যু তো ঐ কুচক্রী জ্ঞানপাপী অজ্ঞ মানুষের হৃদয়ে কোনো দাগ কাটে না! তারা বরং ঐ মৃত্যুকে পুষ্টিহীনতা ও পেটের পীড়ার মরণ বলে সান্ত্বনা নিতে চান ! অথচ কে না জানে, পুষ্টিহীনতা ও পেটের পীড়ার মরণ মানেই তো অনাহারে অর্দ্ধাহারে অখাদ্যের ও কুখাদ্যের মরণ!

এভাবেই দেশি-বিদেশি স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ধারাবাহিক চক্রান্তের ফলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পটভূমি সৃষ্টি করা হয়।

লেখক :বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বহু গ্রন্থের লেখক ও গবেষক।