ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত

রাজবাড়ীর অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ‘জোড় বাংলা মন্দির’ 

২০২১ সেপ্টেম্বর ৩০ ১৮:১১:৫৮
রাজবাড়ীর অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ‘জোড় বাংলা মন্দির’ 

একে আজাদ, রাজবাড়ী : নানান বাদ বোদলের ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠে একটি জাতির আত্মপরিচয় বিকশিত হয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার, সেজন্যই পৃথিবীতে ইতিহাস আর ঐতিহ্যে কে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রত্যেকটি জাতি সে গুলো সংরক্ষন করে ও গুরুত্বের সাথে। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কিভাবে ধীরে ধীরে দখল আর বিকৃতির শিকার হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে।এমনি এক প্রাচীন ‘জোড় বাংলা মন্দির’ অবস্থিত রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া গ্রামে।

তৎকালীন উড়িষ্যার গৌরীয় রীতিতে রাজা সীতারাম রায় ১৬৫৫ সালে এই জোড় বাংলা মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির দুটির মধ্যে একটি চূড়া যুক্ত অন্য টি চূড়া বিহিন। তবে মন্দির দুটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

কালের বিবর্তনে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে জোড় বাংলা মন্দির। শত শত বছরের পুরনো এই দুই মন্দিরে সাথে আরো ৫ টি মন্দির এই স্থানে স্থাপিত হলেও তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যার মুল কারণ সংরক্ষণের অভাব, এছাড়াও দখল আর বিকৃতির শিকার হয়ে হারিয়ে ইতিহাসের এই সকল স্বাক্ষী।

যাদের এই সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ করার কথা তাদের কোন নজর নেই সেদিকে।যদিও রাজবাড়ী জেলাতে এমন প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি।

সূত্র মতে, তিন শতাধিক বছর আগে রাজা সীতারাম রায় বর্তমান রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বেলগাছিতে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সোনার মূর্তি দিয়ে দূর্গাপূজা করতে চেয়েছিলেন। যার ফলে তিনি মূর্তি তৈরির জন্য বর্তমান বালিয়াকান্দির নলিয়া গ্রামের এক সোনার কর্মকার কে সোনার মূর্তি তৈরির নিদ্দেশ দেন।

মূর্তি তৈরির জন্য রাজার কাছে কর্মকার সোনা চাইলে তিনি ঐ কর্মকার কে তার নিজের বাড়িতে মূর্তি তৈরি করতে বলে। যাতে করে কর্মকার মনে কষ্ট নিয়ে সোনার মূর্তির পাশাপাশি পিতলের একটা মূর্তি তৈরি করে।

পূজার আগের দিন কর্মকার পুকুরে সোনার মূর্তি ঘষামাজা করতে করতে পালটিয়ে ফেলে। তবে পূজা শুরু আগে কর্মকার রাজার অনুমতিক্রমে সত্য প্রকাশ করে।

ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এক মন্দিরে দুই পূজা না করার বিধান থাকায় রাজা ওই কর্মকার কে পিতলের মূর্তিটি তার নিজ বাড়ি নলিয়া গ্রামে স্থাপন করে পূজা করার নির্দেশ প্রদান করার পাশাপাশি নিজেই মন্দির স্থাপন করে দেন।

তখন নলীয়া গ্রামে কোন ব্রাহ্মণ্য না থাকায় বর্তমান সদর উপজেলার বানিবহ এলাকার শ্রী কৃষ্ণ রাম চক্রবর্তী রাজা সীতারাম রায়ের অনুরোধ নলিয়া গ্রামে আসেন এবং দেব মন্দির ও বিগ্রহ গুলির রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রাচীন এই মন্দির দুটি অযত্ন আর অবহেলায় এখন বিলুপ্তির পথে।বেদখল হতে বসেছে মন্দিরের সম্পত্তি। শত শত বছরের পুরনো এই মন্দির গুলো দেখার জন্য শত শত দর্শনার্থী ভীড় করে মন্দির এলাকায়। আমাদের উপস্তিতি টের পেয়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এগিয়ে আসে এবং দাবি করে এই মন্দির গুলো সংরক্ষণের।

বর্তমান মন্দিরের সেবায়েত বিদ্যুৎ কুমার মুখার্জি জানান, রাজা সীতারাম রায় এই মন্দির গুলো স্থাপন করেছিলেন। দিন দিন মন্দিরের নামের জমির পরিমাণ কমে এখনো ৩১ শতাংশ রয়েছে। যার বেশিরভাগ জমি এখন বেদখল হয়ে গেছে। যতটুকু আছে তাও যদি প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করে সেটাও থাকবে না।

বালিয়াকান্দি উপজেলার নির্বাহী কমকর্তা আম্বিয়া সুলতানা বলেন, ইতিমধ্যে আমার এই জোড় বাংলা মন্দির সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কে জানিয়েছি। তারা উক্ত স্থান দেখে ছবি সহ মাপজোখ করে গেছে। আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১)