ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ

গোপালগঞ্জে দলীয় প্রতীকে নয় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দিন

২০২১ অক্টোবর ০৮ ২১:৪৩:২০
গোপালগঞ্জে দলীয় প্রতীকে নয় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দিন

আবীর আহাদ


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পবিত্র জন্মস্থান গোপালগঞ্জ। এ জেলার ৯৮% ভাগ জনগণ আওয়ামী লীগের অন্ধ সমর্থক। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ জেলার ৫টি উপজেলা, যথা, কাশিয়ানী, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার প্রায় সবক'টা ইউনিয়নে যারাই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হোন, তারা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বীই কমবেশি জনপ্রিয়। এমতাবস্থায়, চলমান দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে সবাই নৌকো প্রতীক পাওয়ার দাবিদারসহ যোগ্যতাসম্পন্নও বটে।

কিন্তু বিগত দু'টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে : দলীয় আনুগত্য নয় এতদঞ্চলের এমপি, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের প্রতি আনুগত্য, অর্থ ও আত্মীয়নির্ভরতা প্রার্থীদের তথাকথিত দলীয় মনোনয়ন-প্রাপ্তিতে বিপুল ভুমিকা রেখেছিলো। ফলে অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছিলেন। এতে করে জনসাধারণ, দলীয় কর্মীসহ মনোনয়ন-প্রত্যাশীরা চরম সংক্ষুব্ধ অবস্থায় আছেন। এর মধ্য দিয়ে একই দলের মধ্যে বহুধাবিভক্তিসহ চরম সামাজিক রেষারেষি বিরাজ করছে। ফলশ্রুতিতে এসব তৃণমূল অঞ্চলেও আওয়ামী লীগ নয় এমপি লীগ ও ভাইলীগ সৃষ্টি হয়েছে! চলতি নির্বাচনেও অতীতের অপকর্মগুলো সংঘটিত হচ্ছে। প্রার্থীরা জনগণের কাছে তেমনটা না যেয়ে নেতা ও এমপিদের দুয়ারে নৌকোর মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে অধিকতর ধর্ণা দিচ্ছেন! এটা রাজনীতি ও দলের জন্যে মোটেও মঙ্গলজনক নয়।

এসব অঞ্চলে নৌকা প্রতীক পাওয়ার মানে নির্বাচনে জয়লাভ সুনিশ্চিত। জনগণ মূলত: নৌকো প্রতীক পাওয়া প্রার্থীকে নয় তারা অতীতে ঐ প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রতি দায়বদ্ধতার নিরিখেই ভোট দিয়েছেন। মাঝখান দিয়ে ফাঁকতালে স্থানীয়, কেন্দ্রীয় ও এমপি সাহেবরা মনোনয়ন-প্রাপ্তদের নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ লাভবান হয়েছেন বলে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে! আর এর ফলে তথাকথিত নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা এলাকার উন্নয়নের পরিবর্তে নিজেদের বিনিয়োগকৃত অর্থ হাজার গুণ উসুল করে নিয়েছেন। তারাও নিজেদের প্রভাবপ্রতিপত্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে তাদের বশংবদ সমাজবিরোধী লোকদের দিয়ে ইউনিয়নবাসীকে সবদিক দিয়ে জিম্মি করে রেখেছেন। এখানেও আওয়ামী লীগ নয় জন্ম নিয়েছে চেয়ারম্যান লীগের! এতোকিছুর পরেও এসব অঞ্চলের লোকজন আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরক্ত। তবে এখন তারা আগের মতো জানপ্রাণ দিয়ে দল করেন না, ইতোমধ্যে জনগণের মধ্যে দলের প্রতি অনেকটা নির্লিপ্ততা সৃষ্টি হয়েছে যা অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। এ অবস্থা টের পেয়ে সরকার মাদারীপুরসহ কয়েকটি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকমুক্ত উন্মুক্ত পদ্ধতিতে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।

অতএব, বর্ণিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উচিত, আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে খ্যাত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর জন্মস্থান গোপালগঞ্জ জেলায় ঘনায়মান দলীয় বিপর্যয় রোধকল্পে চলতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে জেলার সবক'টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকনির্দেশনা প্রদান করা। এ দিকনির্দেশনা পাওয়ার লক্ষ্যে এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছেন। দলীয় প্রভাব ও প্রতীকমুক্ত ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জনগণ যোগ্যতাসম্পন্ন প্র্রাথীকে নিরুদ্বিগ্নে ভোট দেবে। এ উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জিতে এসে দল ও জনগণের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করবে। এ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে কালো টাকা তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না। এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগে আন্ত:দলীয় কোন্দল ও রেষারেষির অবসান ঘটার পাশাপাশি সমাজবিরোধীচক্রের অশুভ দৌরাত্মও লোপ পাবে। সর্বোপরি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চেতনা ও নাগরিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জনসচেতনতার আবহও সৃষ্টি হবে।

লেখক :মুক্তিযোদ্ধা লেখক গবেষক।