ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » রাজনীতি » বিস্তারিত

ইউরোপে বসেই নৌকার মনোনয়ন জাল স্বাক্ষরে দলীয় আবেদন জমার ধারণা

২০২১ অক্টোবর ১১ ১২:৪৬:০৪
ইউরোপে বসেই নৌকার মনোনয়ন জাল স্বাক্ষরে দলীয় আবেদন জমার ধারণা

কাজী নজরুল ইসলাম, শরীয়তপুর : আসন্ন ইউপি নির্বাচনে শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে ইউরোপে থেকেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছেন এক ব্যক্তি। নৌকার মনোনয়নপ্রাপ্ত শাহ আলম মুন্সী বর্তমানে ইউরোপের ইতালিতে রয়েছেন। তিনি দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ থেকে ইতালী প্রবাসী। তাকে মনোনয়ন দেয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

রবিবার (১০ অক্টোবর) রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড সভানেত্রীর ধানমন্ডিস্থ কার্যালয় থেকে ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন। এর মধ্যে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে প্রার্থীদের চুড়ান্ত তালিকাও ঘোষনা করা হয় ৷

আগামি ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর, চিতলিয়া, পালং, তুলাসার, আংগারিয়া, রুদ্রকর, ডোমসার, শৌলপাড়া, বিনোদপুর ও মাহমুদপুর এই ১০টি ইউনিয়নে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বছরব্যাপী শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সকল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ প্রত্যেক ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত করেছেন। সর্বশেষ ৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় তৃণমূলের প্রার্থী বাছাই সংক্রান্ত বর্ধিত সভা। শাহ আলম মুন্সী মাহমুদপুর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি হওয়া সত্বেও কোথাও তাকে দেখা যায়নি। তিনি গত ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের পক্ষে কাজ করতে বা ভোট দিতে দেশে আসেননি। সাম্প্রতিক করোনা মহামারীর সময়েও এলাকার মানুষের পাশে দেখা যায়নি তাকে।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত ০৩ অক্টোবর সদর উপজেলা ও শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে তৃণমূল থেকে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রেরণ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে। সেখানে মাহমুদপুর ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে অথবা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে শাহ আলম মুন্সীকে আমরা উপস্থিত পাইনি। তার নামও কেউ প্রস্তাব করেনি। আমরা জানি তিনি প্রবাসে রয়েছেন। শাহ আলম মুন্সীর নাম তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়নি। এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন আরও বলেন, শাহ আলম বিদেশে বসে কীভাবে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, কে তার আবেদন পত্রে স্বাক্ষর করেছেন আর কিভাবেই তিনি মনোনয়ন পেলেন এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। তবে বিষয়টিতে অনেকেই হতবাক হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, দলীয় মনোনয়ন পেতে নিয়ম হলো, কারো পক্ষ্যে ফরম যে কেউ সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু যিনি প্রার্থী তিনি নিজে মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করবেন এবং নিজে জমা দিবেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে শাহ আলম মুন্সী প্রবাসে, তার মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করল কে? সূত্রটি জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তথ্য থেকে প্রমানিত হয় যে, শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের সহায়তা ও প্রভাবে প্রবাসে থেকেও শাহ আলম দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

মাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন খান জানিয়েছেন, শাহ আলম মুন্সী আজও ইতালি রয়েছেন। আমরা যতটুকু শুনেছি যে, তিনি ১২ তারিখ ফ্লাই করবেন, ১৩ তারিখ বাংলাদেশে আসবেন। তার পক্ষে অবশ্যই কেউ স্বাক্ষর দিয়ে দলীয় রীতি ভঙ্গ করে জালিয়াতি করা হয়েছে। এমনকি দলের সাথে এবং এলাকাবাসীর সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা এই মনোনয়ন মানিনা এবং জালিয়াতির বিচার চাই।

মাহমুদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি শাহজাহান ঢালী বলেন, ইতালী প্রবাসী শাহ আলম মুন্সী ২০০৩ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোতাহার তালুকদারের নিকট বিপুল ভোটে পরাজিত হোন। এরপর ২০১১ সালে বিদেশ থেকে এসে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৬ সালে সাবেক সাংসদের সহায়তায় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আমি তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে তাকে আড়াই হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলাম। তিনি এবারও বিদেশে বসে মনোনয়ন পেয়েছেন। আমি তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করব ইনশাআল্লাহ।

এ বিষয়ে শাহ আলম মুন্সি বিদেশে থাকায় তার সাথে অথবা তার পরিবারের কারো সাথে যোগাাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

(কেএনআই/এএস/অক্টোবর ১১, ২০২১)