প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
উপমহাদেশের সর্ববৃহত শশ্মানে দীপাবলি উৎসব বুধবার
২০২১ নভেম্বর ০২ ১৮:১৮:৫৯আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রয়াত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনায় নগরীর মহাশ্মশানে দুইদিনব্যাপী উপ-মহাদেশের সবচেয়ে বড় শ্মশান দীপাবলি উৎসব শুরু হচ্ছে আজ বুধবার।
শীত আগমনের হাল্কা ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে ইতোমধ্যে দীপাবলি উৎসবে প্রিয়জনের আত্মার শান্তি কামনার জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দেশ-বিদেশের বিভিন্নস্থান থেকে স্বজনরা নগরীতে ছুটে এসেছেন। ফলে মহাশ্মশান এলাকা দেশ-বিদেশের মানুষের পদচারণায় এখন মুখর হয়ে উঠেছে।
উপ-মহাদেশের সর্ববৃহৎ শশ্মান দীপাবলি উৎসবকে ঘিরে নগরীর মহাশ্মশানে ব্যপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবকে ঘিরে নগরীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সূত্রমতে, এবার ভূত চতুর্দ্দশী বুধবার দিবাগত রাত সাতটা পাঁচ মিনিটে পুণ্যতিথিতে শুরু হওয়ায় দুই দিনব্যাপী শ্মশান দিপালী উৎসব শেষ হবে বৃহস্পতিবার ১২টা এক মিনিটে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে শ্মশান কালীপূজা ও প্রসাদ বিতরন। প্রায় ২০৪ বছরের এ উৎসবকে ঘিরে তোরণ নির্মাণসহ ব্যাপক আলোকসজ্জা করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে ২০টি সিসি ক্যামেরা। এছাড়া শশ্মান রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে মাক্স, প্রদানসহ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ধর্মীয় উৎসব পালনের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ভূত চতুর্দশী পুণ্য তিথিতে এ উৎসব হয়ে থাকে। দীপালি উৎসব ও মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী জানান, এ বছর তিথি অনুযায়ী আজ বুধবার দীপাবলি উৎসব এবং পরেরদিন শ্মশান কালীপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও জানান, সমাধীর ওপর হাজার হাজার মোমবাতি জ্বালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের পূর্ব পুরুষদের স্মরণ করবে। উপ-মহাদেশের মধ্যে এ মহাশ্মশানকে ঘিরে সবচেয়ে বড় শ্মশান দীপাবলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অন্য কোথাও এ রকম আলোকমালার মধ্যদিয়ে পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি সমাধীতে দীপ জ্বালিয়ে উৎসব পালন করার নজির নেই। তাই দেশ-বিদেশের স্বজনরা শ্মশান দীপাবলির সময় বরিশালের মহাশশ্মানে ছুটে আসেন। প্রতিবছর ভূত চতুর্দশীর পূর্ণ তিথিতে সমাধীতে দীপ জ্বালিয়ে এ উৎসব পালিত হয় বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে শ্মশান দীপাবলি।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর মহাশ্মশানের দীপাবলিতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। যাদের স্বজনরা অনুপস্থিত থাকেন তাদের সমাধিও আয়োজন কমিটির উদ্যোগে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে স্বর্গীয় আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়।
সূত্রমতে, নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া ও নতুন বাজার এলাকার ছয় একর জমির ওপর এ মহাশ্মশানের জন্ম বরিশাল নগরীর পত্তনের আগেই। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ধনাঢ্য জমিদারদের আর্থিক সহায়তায় নতুন বাজারে প্রথম মহাশ্মশান স্থাপিত হয়। পরে তা কাউনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। নতুন বাজারে শ্মশানের পাশেই রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যানন্দা দাশ ও পিতামহ সর্বানন্দা দাশের সমাধী। এছাড়াও পুরাকীর্তি আর দৃষ্টিনন্দন এ মহশ্মশানে কয়েক বছর পূর্বে ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের সমাধী। এখানে রয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিল্পবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা মাসিমা, শিক্ষাবিদ কালি চন্দ্র ঘোষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমাধী। মহাশ্মশান কমিটির নেতারা জানান, নতুন পুরনো মিলিয়ে এখানে প্রায় লক্ষাধিক সমাধী রয়েছে।
(টিবি/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০২১)