ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের বাইরে » বিস্তারিত

‘ত্রিপুরায় জাল ভোটেই আস্থা বিজেপির’

২০২১ নভেম্বর ২৬ ১৮:৪০:৪৭
‘ত্রিপুরায় জাল ভোটেই আস্থা বিজেপির’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ত্রিপুরা রাজ্যের পৌর ও নগর সংস্থার নির্বাচন বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। ৯০ শতাংশ জাল ভোটেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএম এবং রাজ্য বামফ্রন্ট কমিটির পক্ষ থেকে আগরতলা পুর নিগমসহ অন্যান্য পাঁচটি পুর সংস্থায় পুনঃভোটের দাবি জানানো হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে তারা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে যাচ্ছেন বলে জানানো হয়।

সকাল থেকেই আগরতলা পৌর নিগমের বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র ছিলো বখাটে যুবকদের দখলে। এক্ষেত্রে যারাই উৎসবের মেজাজে ভোট দিতে আসছিলেন তাদের বেশির ভাগ নাগরিককে কেন্দ্রের সামনে থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই এক্ষেত্রে জোর করে ভোট দিতে চাইলে মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে তাদের।

অভিযোগ রয়েছে, ভোট না দিতে দেওয়ায় কেন্দ্রের অভ্যন্তরে কর্তব্যরত এক কর্মকর্তাকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পোলিং এজেন্টদের পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো অভিযোগে কোনও ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

ভোটকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী ঘোষণার পর থেকেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটের পর সেই আশঙ্কাই বাস্তবে পরিণত হলো। যে কারণে এই নির্বাচনকে শাসকদল এক প্রকার প্রহসনে পরিণত করেছে বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ আনা হয়েছে।

রাজ্য বামফ্রন্ট কমিটি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তাদের এই সন্ত্রাসের কারণে মনোনয়ন জমা দিয়েও প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন একাধিক মনোনীত প্রার্থী। ভোটের আগে নির্বাচনী প্রচার পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভোটে মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি সেই বিজেপিই এখন আস্থা রাখতে পারছে না জনগণের ওপর। যে কারণে পূর্ব পরিকল্পনামাফিক তারা ভোট দিতে দিলেন না জনগণকে।

ত্রিপুরা রাজ্য সিপিআইএমের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০টি পৌর ও নগর সংস্থার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচন হয় মাত্র ১৪টি ক্ষেত্রে। ৬টি ক্ষেত্রে তারা নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কোনও প্রার্থীকেই মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি। যে কারণে আগামী ২৮ নভেম্বর নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার সময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বলে ঘোষণা করা হতে চলেছে সেই ৬টি পৌর ও নগর সংস্থাকে।

অর্থাৎ ৩৩৪ আসনের এই নির্বাচনে এরই মধ্যেই ১১২টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছেন তারা। বাদবাকি যে ২২২টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতেও শাসক দল বিজেপি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ভারতের মতো উন্নতশীল দেশের সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে বলে মনে করছেন সিপিআইএম নেতারা।

শাসক দল বিজেপি অবশ্য এ ধরনের প্রতিটি অভিযোগই একের পর এক খণ্ডন করেছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রেও সে ধরনের কোনও খবরই পাওয়া যায়নি। বিরোধীদের কথা অনুযায়ী যেখানে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেও ভোট দিতে পারেননি নাগরিকরা। ভোট পড়েছে ৮১.৫৪ শতাংশ। জাল ভোটের প্রমাণ আর স্পষ্ট বলে তারা মনে করেন।

ভোটগ্রহণ পর্ব সমাপ্ত হওয়ার পর বিজেপি বলছে, মানুষের জনসমর্থন হারিয়ে এখন যেমন খুশি অভিযোগ আনতে শুরু করেছেন তারা। মূলত রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করতেই এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হচ্ছে।

অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ত্রিপুরা উচ্চ আদালত, ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাও তারা অমান্য করেছে। সার্বিকভাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে আদালতের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হবেন তারা।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৬, ২০২১)