ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » প্রবাসের চিঠি » বিস্তারিত

নিউইয়র্কে কোরান ছুঁইয়ে শপথ নিলেন বাংলাদেশি কাউন্সিলওম্যান

২০২১ ডিসেম্বর ৩১ ১৬:০৮:২২
নিউইয়র্কে কোরান ছুঁইয়ে শপথ নিলেন বাংলাদেশি কাউন্সিলওম্যান

প্রবাস ডেস্ক : পবিত্র কোরানে হাত রেখে শপথ নিলেন নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম বাংলাদেশি আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফ। নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের ইতিহাসে তিনিই প্রথমবারের মত নির্বাচিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত নারী। গত ২৮ ডিসেম্বর পবিত্র কোরান হাতে নিয়ে শপথ গ্রহণ করেছেন। গত ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট ২৪ থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

১৬২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের ইতিহাসে তিনিই প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুসলিম কাউন্সিলওম্যান। আর মাত্র একদিন পর ১ জানুয়ারি থেকে তার কার্যকাল শুরু হবে। শপথ নেয়ার সময় তার পিতা চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ, মা রেহানা বেগম, তার ক্যাম্পেইন অফিসের ক’জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। মহামারির কারণে অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল সীমিত। কর্মদিবসের প্রতি ঘন্টায় একজন করে কাউন্সিলমেম্বার শপথ নিয়েছেন। সে হিসেবে শাহানা হানিফের শপথ নেয়ার জন্য নির্ধারিত সময় ছিল ২৮ ডিসেম্বর সোমবার বিকেল ৩টা। এর কিছু আগে শাহানা হানিফ তার মা-বাবাকে নিয়ে সিটিহলে পৌছেন এবং স্পিকারের একজন প্রতিনিধি তাকে শপথ পাঠ করান। তিনি বাড়ি থেকে যে কোরান হাতে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটি স্পর্শ করে শপথবাক্য উচ্চারণ করেন। শপথের সময় তার মা কোরান শরীফ ধরে রেখেছিলেন।

শপথের পর সিটি হলের কর্মকর্তারা সিটি কাউন্সিলের অধিবেশন কক্ষে তার নির্ধারিত আসন দেখিয়ে দেন। এর আগে তাকে প্রয়োজনীয় বেশকিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। উল্লেখ্য, সিটি কাউন্সিল মেম্বার হিসেবে শাহানা হানিফ বার্ষিক ১৪৮,৫০০ ডলার সম্মানীসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি লাভ করবেন।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে নির্বাচিত হওয়ার পরই সিটি কাউন্সিলে তার ইতিহাস সৃষ্টির সূচনা ঘটে, যা গত ২ নভেম্বর মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়। নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের তিন প্রজন্মের অভিবাসনে মূলধারার রাজনীতিতে প্রথম সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে শাহানা হানিফের বিজয়। শাহানা হানিফ সিটি কাউন্সিলে ব্রুকলিনের ৩৯ ডিষ্ট্রিক্টের প্রতিনিধিত্ব করবেন সিটি কাউন্সিলে।
ডেমোক্র্যাট দলের প্রাইমারিতে সাতজন প্রার্থীকে মোকাবেলা করে শাহানা হানিফ বিজয়ী হলে সাধারণ নির্বাচনে তাঁর বিজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রথম মুসলমান এবং প্রথম বাংলাদেশী আমেরিকান হিসেবে তাঁর বিজয়কে সমর্থকদের বিজয় হিসেবে তিনি দেখেছেন। সমর্থন দিয়ে পাশে থাকার জন্য তিনি বাংলাদেশী আমেরিকানদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।

নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীদের বিভিন্ন কাজে আরও বেশি করে এগিয়ে যাওয়াকে বেগবান করতে চান শাহানা হানিফ।ব্রুকলিনের মিশ্র জনগোষ্ঠির এলাকায় শাহানা হানিফ কর্মজীবী সহ সর্বস্থরের লোকজনের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। তরুণ বয়স থেকেই একজন নাগরিক সংগঠক হিসেবে শাহানা হানিফ পরিচিত হয়ে উঠেন নিজের নির্বাচনি এলাকায়। বিভিন্ন নাগরিক দাবি দাওয়া নিয়ে নিয়ে আন্দোলনের মাঠে তাঁকে দেখা গেছে সব সময়। একজন অভিবাসী পরিবারের নারী হিসেবে লক্ষ্য স্থির করে শাহানা হানিফ তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়েছেন।

শাহানা হানিফ চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোহাম্মদ হানিফের কন্যা। তাঁদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের নাজিরহাটের পূর্ব ফরহাদাবাদে। শাহানার বিজয়ের মাধ্যমে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশীদের নতুন যাত্রা সূচিত হয়েছে। শাহানা হানিফের বিজয় নিয়ে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদ পরিবেশন করে। টাইমসের প্রতিবেদনে প্রথম একজন মুসলমান নারীর নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত হওয়া নিউ ইয়র্ক সিটির ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির ক্ষমতায়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার রাখবে বলে উল্লেখ করা হয়।

(বিপি/এসপি/ডিসেম্বর ৩১, ২০২১)