ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » অগ্নিকন্যা » বিস্তারিত

মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ করার দাবি

২০২২ জানুয়ারি ০৪ ১১:৩৪:৪৯
মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ করার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার : মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। ভারতে সম্প্রতি নারীদের বিয়ের বয়স ২১ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এটা কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নারীর প্রতি সহিংসতায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বছরব্যাপী গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ঘেঁটে আইনজীবী সমিতির এক হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে শুধু নারী ও শিশু সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। ২০২১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০২টি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সহিংসতা পরবর্তীতে স্বামী ও স্বামীর পরিবারের দ্বারা হত্যার শিকার হন ২৮৫ নারী।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ভারতে সম্প্রতি নারীদের বিয়ের বয়স ২১ করা হয়েছে। আমরাও চাই আমাদের দেশে বিয়ের বয়স ২১ করা হোক।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, নারী নির্যাতন রোধে শুধু ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দিলেই হবে না, সব ক্ষেত্রে নজরদারি ও লোকবল বাড়াতে হবে।

বিদেশে নারী পাচার বিষয়ে বক্তারা বলেন, যারা বিদেশে পাচার হয়ে চলে যাচ্ছেন, তাদের হিসাবটা কোথাও আসে না। শুধু যারা ফেরত আসেন, আমরা সে হিসাবটাই দেখতে পাই। তাই পাচারের সংখ্যাও যথাযথ বলা যায় না।

সংবাদ সম্মেলনে নারী, শিশু ও অন্যান্য নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ১৪টি সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-

১. কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কার্যকরী কমিটি গঠন করতে হবে ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।

২. যেকোনো ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় গণমাধ্যকর্মীদের প্রকৃত তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে।

৩. স্থানীয় জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণে বাল্যবিয়ে, পারিবারিক নির্যাতনসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারি, বেসরকারি ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

৪. এসব ঘটনায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। চার্জ গঠনের পর দ্রুত সাক্ষীর ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. স্থানীয় প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সবাই মিলে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করতে হবে।

৬. শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজের দায়বদ্ধতার জায়গাটি সুনিশ্চিত করতে হবে।

৭. যথোপযুক্ত বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীর সহজগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুদের জন্য সার্বিক আইনি সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে যেন তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এক্ষেত্রে মনো-সামাজিক সেবা, নারী ও শিশুবান্ধব আইন সহায়তা, নিরাপদ আশ্রয় (প্রয়োজনে), নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

৮. দ্রুত বিচার এবং সাক্ষী সুরক্ষার পাশাপাশি আধুনিক ফরেনসিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলাসমূহের যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করা।

৯. তদন্তকাজ রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সব স্তরে প্রশিক্ষিত কর্মী থাকতে হবে।

১০. মানব পাচার সংক্রান্ত মামলা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচার সম্পন্নের জন্য ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শ্রম পরিদর্শক এবং অভিবাসন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের এ ধরনের মামলা শনাক্তকরণ এবং পরিষেবাগুলোতে ভুক্তভোগী রেফারেলসহ প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে।

১১. প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের সামগ্রিক তথ্য ও উপাত্ত সংরক্ষণের জন্য যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

১২. প্রান্তিক গোষ্ঠীর (প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ) জন্য বৈষম্যহীন আইনি পরিষেবা নিশ্চিত করা।

১৩. নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ও সংশোধিত আইন ২০২০-এ সব ধরনের ধর্ষণকে আইনের আওতাভুক্ত করার জন্য পেনিট্রেশনের সংজ্ঞা যুক্ত করতে হবে।

১৪. সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য ধারা সংশোধনের মাধ্যমে ধর্ষণ মামলার বিচারে অভিযোগকারীর চরিত্রগত সাক্ষ্যের গ্রাহ্যতা বন্ধ করতে হবে। এরূপ সংস্কারের মাধ্যমে বিচারকরা যাতে নিশ্চিত করতে পারেন যে আসামি পক্ষের আইনজীবী জেরার সময় অভিযোগকারীকে কোনো অবমাননাকর বা অবজ্ঞামূলক প্রশ্ন না করেন।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ০৪, ২০২২)