ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

রাণীনগরে টিকার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ

২০২২ জানুয়ারি ১৮ ১৭:৫২:৩৩
রাণীনগরে টিকার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে করোনা ভাইরাসের টিকার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিকার রেজিস্ট্রেশন ও সনদপত্র দেয়ার নাম করে এই টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৩হাজার ৪শ’ ১০জন শিক্ষার্থীকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধক টিকার (ফাইজার) প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। উপজেলার পূর্বাঞ্চলের প্রায় ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারন করা হয় আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫হাজার শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনার সময় যাবতীয় খরচ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহন করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭শ’ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬শ’ ৫৪জন শিক্ষার্থীকে টিকা প্রদান করা হয়।

এই সব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে শিক্ষকরা টিকার রেজিস্ট্রেশন ও টিকার সনদপত্র প্রদানের খরচ হিসেবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০টাকা আর কিছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০টাকা করে নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান সম্পর্কিত কোন বিষয়ে কোন টাকা না নেয়ার জন্য কঠোর ভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। অথচ সেই নির্দেশনা না মেনেই ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুধু ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয় উপজেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও টিকার জন্য অল্প বিস্তর করে টাকা নেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী জানায় টিকার সনদপত্র প্রদানের খরচ হিসেবে তাদের কাছ থেকে ১০-২০টাকা করে নেয়া হয়েছে। এছাড়া করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য এবং টিকাকেন্দ্রে যেতে যাতায়াত খরচ বাবদ ওই টাকা লাগবে বলেও শিক্ষকরা জানান। টাকা নেয়ার পর বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্যও কঠোর ভাবে হুঁশিয়ারী প্রদান করা হয়েছে বলেও শিক্ষার্থীরা জানায়।

অভিযুক্ত আবাদপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন ,টিকার রেজিস্ট্রেশন ও সনদপত্র বের করতে কিছু টাকা খরচ হয়। সেই খরচের কিছুটা দিতে শিক্ষার্থীদেরকে বলা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন,শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কাউকে এক পয়সাও তোলার কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ওই কেন্দ্রে টিকা প্রদানের জন্য যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। কিন্তু ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কার নির্দেশে এমন জঘন্যতম কাজ করলেন সেই বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে.এইচ.এম. ইফতেখারুল আলম খাঁন অংকুর বলেন টিকা ও টিকা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম আমার বিভাগ সরবরাহ করবে আর কেন্দ্র নির্ধারন ও কেন্দ্রের যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে উপজেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা বিভাগ। ওই কেন্দ্রে আমার লোকেরা অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠ ভাবে যত্ন সহকারে টিকা প্রদান করেছে। সরকার বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের টিকা দিচ্ছে আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যে অসৎ শিক্ষকরা টাকা নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টিকা রেজিস্ট্রেশন বা টিকা নেয়ার জন্য যাতায়াত খরচ কিংবা ভিন্ন নামে কোনো প্রকার টাকা আদায়ের নিয়ম নেই। এমন জঘন্য কাজ যারা করেছে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(বিএস/এসপি/জানুয়ারি ১৮, ২০২২)