ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

আরজ আলী মাতুব্বরের নামে প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরীতে নেই আরজ আলীর বই!

২০২২ মার্চ ০৯ ১৭:৫৮:৫২
আরজ আলী মাতুব্বরের নামে প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরীতে নেই আরজ আলীর বই!

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বিজ্ঞান মানুষকে পালন করে কিন্তু ধর্ম মানুষকে পালন করেনা, বরং মানুষ ধর্মকে পালন করে এবং প্রতিপালনও করে-উক্তিটি দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের। বরিশাল জেলার সদর উপজেলাধীন চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী অজপাড়া গাঁ লামচড়িতে জন্মগ্রহণ করা এ শতাব্দীর সর্বাধিক আলোচিত দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান।

জীবদ্দশার ৮৬ বছরের ৭০ বছর যে মানুষটি গ্রন্থাগারে কাটিয়েছেন, আজ তার নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারে অন্ধকারে। দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘আরজ দুয়ার লাইব্রেরী’তে নেই নিজের (আরজ আলী) রচনা সমগ্র বই। ফলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রগতি লেখক সংঘের বরিশালের নেতৃবৃন্দরা।

বরিশাল সদর রোড থেকে মোটরসাইকেল বা সিএনজি অটোরিকশায় মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরত্বে প্রতিষ্ঠিত আরজ দুয়ার। কিন্তু এই দশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে শুধুমাত্র সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তালতলী ব্রীজ থেকে শুরু করে প্রায় সাত কিলোমিটার ভাঙাচুড়া পথের কারণে প্রায় আধাঘন্টা লেগে যায়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সুরুজ হাওলাদার জানিয়েছেন, রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই সড়ক পুরোপুরি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে। তবে লামচরি গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তালতলী ব্রীজ থেকে মুন্সি বাড়ি পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন গত দশ বছরেও হয়নি। আর আরজ দুয়ারের সামনের সড়ক পাকা হলেও আশেপাশের সব সড়কের করুন দশা।

আরজ আলী মাতুব্বরের বাড়িটি একদম কীর্তনখোলা নদীর পাড় ধরে। বরিশালের পোর্ট রোড থেকে নদীর সীমানা ধরে বাঁধ রোড তৈরি করা হলে সবমিলিয়ে এখানে ১০ মিনিটে আসা যাওয়া সম্ভব। বাড়িটি এখনো চৌচালা টিনের ঘর।

প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি অপূর্ব গৌতম জানিয়েছেন, এ ঘরেই বসবাস ছিলো দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের। বাড়িটির আদল ঠিক রেখে সংস্কার করা হয়েছে। এটাই আরজ আলী জাদুঘর হিসেবে পরিচিত।

সূত্রমতে, বাড়ির উঠান বা আশেপাশের জঙ্গল সবটাতেই অযতেœর ছাপ। আরজ দুয়ার সাইনবোর্ডটি মূলতো লাইব্রেরি ও দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের সমাধি স্থান। প্রায় সাত শতক জমিতে নির্মিত একটি যেইসেই অবহেলার লাইব্রেরী ভবন। যার ছয় ফুট বাই ছয় ফুট একটি কক্ষে তিনটি তাক বসিয়ে বেশিরভাগ অপ্রয়োজনীয় বই রাখা হয়েছে। তন্নতন্ন করে খুঁজেও দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের রচনা সমগ্র পাওয়া গেলনা এখানকার কোথাও। নেই তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো লেখকের বই। ঘুনে ধরে উইপোকা খাওয়া কিছু বই আছে নীচের তাকে। তবে রহস্যময়ভাবে তাকের বেশিরভাগ অংশই দখল করেছে সৃজনশীল জ্ঞান ও পুস্তক প্রকাশক সমিতির কতগুলো প্রকাশনা। এগুলো এখানে কি কাজে লাগবে জানা নেই কারো।

অধ্যাপক তপংকর চক্রবর্তী জানান, আরজ আলী রচনা সমগ্র করেছেন ঢাকার পাঠক সমাবেশের স্বত্ত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বিজু। তবে আরজ দুয়ারে আরজ সমগ্র নেই শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বীজু নিজেও।

লাইব্রেরীর কেয়ারটেকার শামীম জানান, এখানে একটি পরিদর্শন বই আছে। দর্শনার্থীরা চাইলে এ বইতে মন্তব্য লিখতে পারেন। দর্শনার্থীদের মন্তব্যে দেখা গেল এমন অনেক পরামর্শ। গণসংগীত শিল্পী বিমল চক্রবর্তী বলেন, প্রশাসন চাইলেই আরজ দুয়ার পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। হতে পারে আরজ কমপ্লেক্স ও গবেষণার। অথচ কিছুই নেই এখানে। যা আছে, তা শুধু ভোগান্তি পথে পথে।

(টিবি/এসপি/মার্চ ০৯, ২০২২)