ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

আমলাতন্ত্রের বিচিত্র রুপ

২০২২ মে ১৭ ১৪:২৯:১৩
আমলাতন্ত্রের বিচিত্র রুপ

রণেশ মৈত্র


আমলাতন্ত্র নিয়ে সম্প্রতি জেলা পরিষদের কমিটি ভাঙ্গার পর থেকে আলোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘকালব্যাপী আন্দোলন করতে হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। পাকিস্তান আমলের ২৩টি বছর ধরেই জীবন মরণ পণ করে লড়াই করতে হয়েছে গণতন্ত্রের জন্যে। কিন্তু কখনোই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় নি। মানুষের দ্বারা, মানুষের স্বার্থে মানুষের শাসনকে যদি গণতন্ত্র বলা হয় তবে অনুল্লেখিত অন্তর্নিহিত এবং সর্বাধিক বিষয়টি থাকে মানুষের স্বার্থে শাসন। শুধুমাত্র ভোট মানেই গণতন্ত্র নয় সে ভোট যতই না কেন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অশগ্রহণমূলক হোক। আর যখন কোন নির্বাচনের ধরণ, ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তখন অপর শক্তি অর্থাৎ আমলাতন্ত্র প্রাধান্য বিস্তার করেছে-প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও নিজেদেরকে দুর্বল ভেবে আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য দিব্যি মেনে নিয়েছে।

এযাবত আমরা দু’বার স্বাধীন হলাম। প্রথমবার ১৯৪৭ সালে-যখন সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলো। দ্বিতীয়বার, ১৯৭১ সালের শেষ নয় মাস ব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। এ কথা তো পূরোপূরি সত্য যে জনগণের স্বার্থে জনগণের দ্বারা শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা আদৌ সম্ভব না যদি দেশটা থাকে পরাধীন। তাই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রায় ২০০ বছর ব্যাপী অবিভক্ত ভারতের অসংখ্য মানুষ আপোষহীন লড়াই করেছেন বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। এ লড়াই ছিল ভারতের সকল জাতির, সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সকল আদিবাসীরা, নারী ও পুরুষের সম্মিলিত সংগ্রাম-যা কার্যত: আজ আমরা ভুলে গিয়ে অনেকেই মনে করি-ওই লড়াইটা ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের-একটি হিন্দুপ্রধান স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে।

যা হোক, ঐ লড়াইটা শেষ পর্য্যন্ত নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির আংশিক বিজয়ের মধ্য দিয়েই শেষ হলো ১৯৪৭ সালের আগষ্টে। পেছনে ফেলে আসতে হলো সমগ্র ভারত ও পূর্ব বাংলাজুড়ে অজস্র রক্তের স্রোত। হিন্দু মুসলমানকে-মুসলমান হিন্দুকে গুলি করে, কুপিয়ে বা অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করছে একটি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। উন্মত্ততা এতটাই মারাত্মক রূপ নিয়েছিল যে সবাই যেন ভুলে গিয়েছিল তারা মানুষ-মানুষ মানুষকে হত্যা করছে।
এই ষড়যন্ত্রের হোতা বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ, মুসলিম এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা কিছু সংখ্যক সাম্প্রদায়িক কংগ্রেস নেতা। প্রভু সাজলেও ইংরেজ অফিসাররা ছিলেন ইংল্যাণ্ডের রাজা বা রানীর কর্মচারী মুসলিম লীগ নেতাদের বড় অংশ ছিলেন বৃটিশ সরকারের আমলা বা তাদের সমর্থক।

আমলাদের এই জুটি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ নামক আয়না নির্ভর দল ক্ষমতায় বসলো। ফলে দৃশ্যত: যদিও বড় বড় পদে মুসলিম লীগ নেতারা আসীন হলেন, তাঁরা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন বৃটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত আমলাদের উপর। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন আমলারা কার্য্যকরও করতেন তারা। শুধুমাত্র স্বাক্ষর দানের মালিক ছিলেন উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত মুসলিম লীগের নেতারা। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ যতদূর জানতে পেরেছিলাম, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের ছাত্র মিছিলে পুলিশকে গুলি চালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের জবরদস্ত চিফ সেক্রেটারী। পদে তাতে নাকি লিখিত সমর্থন জানান মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন।

আবার পাকিস্তান আমলে যাঁরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিগণিত ছিলেন তারা ১৯৪৬ সালে ইংরেজ শাসনামলে নির্বাচিত। স্বাভাবত:ই তাঁরা প্রায় সবাই মুসলিম লীগ ও তফশীলি ফেডাপরেশনের সদস্য। স্বল্প সংখ্যক ছিলেন কংগ্রেস দলীয় সদস্য।

সচক্ষে তখন দেখেছি, মুসলিম লীগের বহু সংসদ সদস্যকে স্ব স্ব জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে (আজকের জেলা প্রশাসক) দিব্যি ‘স্যর’ বলে সম্বোধন করতে এবং কোন সভায় বিলম্বে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এসে হাজির হলে মুসলিম লীগ দলীয় সদস্যদের অনেকেই উঠে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন। বস্তুত: ইংরেজ আমলের ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তি বিরাজ করতো আমলা ও জনপ্রতিনিধি উভয়ের মধ্যে। গোটা পাকিস্তান আমলে এমনই ছিল আমলাদের দাপট। জনগণকে করে রাখা হয়েছিল প্রভু নয় ভৃত্য।

২৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে গণ-আন্দোলন করে অবশেষ ১৯৭১ এ এসে নয় মাস ব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে অর্জন যে নতুন দেশটি আমরা অর্জন করলাম তার নাম সংবিধানে দেওয়া হয়েছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। লড়াই করেছিলেন অস্ত্র হাতে বা নিরস্ত্র অবস্থায় দেশের জনগণ-আমলারা নন। অবশ্য কিছু সংখ্যক বাঙালি সিএসপি অফিসার যেমন পাবনার জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নূরুল কাদের, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার জেলা প্রশাসক এইচ.টি ইমাম হোসেন তওফিক ইমাম, রাজনৈতিক উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সিরাজগঞ্জের তৎকালীন এস.ডি-ও যিনি বাঘাবাড়ী ঘাটের কাছে পাক-বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন এবং এ রকম আরও কিছু সংখ্যক প্রশাসক, বাঙালী সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা ও সশরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এবং জাতি আজও তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।

কিন্তু যে মুক্তিযুদ্ধে লক্ষাধিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত তরুণ, গ্রামীন হাজার তরুণ শত্রু শিবিরের সন্ধান গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছাতো, যারা তাদেরকে আশ্রয় দিত-খাবার দিতে, শত্রু শিবির রেকি করার পর গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে দেখিয়ে দিতো কতজন সেনা কিভাবে সেখানে অবস্থান করছে-সে তথ্য সংগ্রহ করে জীবন বাজি রেখে পৌঁছে দিত-যাঁরা পশ্চিম বঙ্গ ও ত্রিপুরার বিশাল সীমান্ত জুড়ে শত শত যুবশিবির স্থাপন করে তাতে যুবকদের রিক্রুট করে ভারতের সৈন্য বাহিনীর কাছে পৌঁছে দিতেন যুবশিবিরের অবস্থানরতদের খাবার, বস্ত্র, সোডা-সাবান, অসুস্থ হলে চিকিৎসা এবং ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতেন-সব মিলিয়ে তিন থেকে পাঁচ লক্ষ হতে পারে যার সঠিক সংখ্যা আজও নির্নীত হয়েছে বলে জানা যায় না এভাবে এই মুক্তিযুদ্ধ প্রকৃত অর্থেই ছিল এক অনন্য জনযুদ্ধ।

৭০ এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিপুল অংশও ভারতে গিয়ে যুব শিবির পরিচালনা, জাতীয় সংসদ হিসেবে মন্ত্রীসভা নির্বাচন ও তার কাজে সহযোগিতা প্রদান করেছিলেন।

তাই ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর অপরাহ্নে পাক বাহিনীর অস্ত্র ও আত্ম সমর্পনের মাধ্যমে যে নতুন দেশটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল, ১৯৭২ এর সংবিধানে সেই “দেশের মালিক জনগণ” বলে যথার্থই লিখিত হয়েছিল ।

পৃথিবীর সকল দেশই আমলাদেরকে সরকারিভাবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন গণ প্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানও দিয়েছিলেন। কিন্তু স্পষ্টত:ই তিনি সতর্কবানী উচ্চারণ করে বলেছিলেন জনগণ এ দেশের মালিক আর তোমরা তাদের সেবক বা চাকর কারণ তাদের টাকায় বেতন নিয়ে তোমরা সংসার চালাও অনেকে গাড়ী ও হাঁকাও। সরকারি কর্মচারী তথা আমলারা এ কথা মেনে নিয়েই-জন প্রতিনিধিদের গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্য্যকর করতেন। তাই ইংরেজীতে তাঁদেরকে বলা হয় Executive.

কিন্তু বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য। পরিস্থিতি বদলে যেতে সময় লাগলো মাত্র সাড়ে তিন বছর যখন সপরিবারে সুপরিকল্পিতভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ক্ষমতা দখল করেন উচ্চপদস্থ সামরিক আমলা জিয়াউর রহমান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা।

অবৈধভাবে অস্ত্রের ব্যাপক অপব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে তিনি নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করলেন-সংবিধান ও তাবৎ মৌলিক অধিকার স্থাপিত করে পূরোদস্তুর একনায়কত্ব চালু করলেন। গণতন্ত্র ভূলুষ্ঠিত হলো-“জনগণ ক্ষমতার মালিক” আর রইলেন না। পূরোদস্তুর সামরিক ও বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক শাসন চালু করা হলো। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে গলা টিপে ধরা হলো-দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অথবা বিনাবিচারে আটক করা হলো। বিচারের নামে প্রহসন করে শত শত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা-সৈনিককে কারাগারে আটক রেখে ফাঁসি দেওয়া হলো।

এই আমলারা তাদের শাসন-শোষণের সুবিধার্থে বংশবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে পূর্ব বাংলার মূল ১৭টি জেলার সকল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করে ৬৪ জেলায় পরিণতি করলো। আগের ১৭ জন জেলা প্রশাসক তাঁর অধীনস্থ মহকুমা প্রশাসক (এস.ডি.ও) দের সমন্বয়ে যে ধরণের শাসন পরিচালনা করতেন আজ ৬৪ জেলায় ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এবং তার পাঁচগুণ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (যা অতীতের বৃহৎ জেলায় একজন বা দুইজন করে ছিলেন) এবং বর্ধিত সংখ্যায় তাঁদের অধস্তন কর্মচারী।

১৭ জনের পরিবর্তে ৬৪ জন পুলিশ সুপার। ২/৩ জন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও অপরাপর কর্মচারী।
১৭ জনের পরিবর্থে ৬৪ জন জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ ও থানা ভিত্তিক বিচারক নিযুক্ত হলেন।

এ ছাড়াও অপরাপর সকল দফতর ও বিভাগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলির অধীনে অসংখ্য অফিস স্থাপিত হলো ৬৪ টি জেলার প্রতিটিতে।

এঁদের সকলের পৃথক পৃথক অফিস, মিটিং হল, এ/সি, অপরাপর আসবাপত্র, গাড়ী, বাসা, বাগান, নিরাপত্তা কর্মচারী, অপরাপর কর্মচারী সব মিলিয়ে প্রথমে যে কত হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলো এবং প্রায়শ:ই নানাবিদ অজুহাতে বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধাদি বৃদ্ধির কারণে প্রতি বছর বিপুল অংকের টাকা ব্যয়ের ও আমলার সংখ্যা বৃদ্ধি করে জনগণের কাঁধে বিপুল ব্যয়ভার চাপানো হয়। কিন্তু জনগণ তার বিনিময়ে কি পেলেন-সে হিসাব করা প্রয়োজন।

যদি অত্যন্ত নিস্পৃহভাবে ভাবা যায় তবে যেহেতু হাজার হাজার মামলা সকল আদালতে বিচারাধী থাকায় এবং প্রতিদিন শত শত নতুন ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলা দায়ের হওয়ায় সাবেক ১৭ জেলার মত একজন জেলা জজ, সাতজন অতিরিক্ত জেলা জজ, ৩০ জন সহকারী জজ নিয়োগ করে উচ্চ আদালতের নির্দেশানুযায়ী ত্বরান্বিত বিচার সম্ভব। কিন্তু কি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে, কি বিচার বিভাগে, কি পুলিশ বিভাগ-সর্বত্র ৬৪ জেলার যে বোঝা জনগণের কাঁধে আরোপ করা হয়েছে তার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। একটি মাত্র যৌক্তিকতার সন্ধান পাওয়া যায়-আর তা হলো দলীয় লোকদের পোষা-বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে।

এলেন আর এক উচ্চস্তরের সামরিক আমলা

জিয়াও তাঁর সহকর্মী সামরিক কর্তাদের হাতে চট্টগ্রামে নিহত হন কিন্তু তাঁর প্রবর্তিত ব্যবস্থা ঠিকই রাখা হয়। জিয়া তখন প্রেসিডেন্ট। ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার প্রথমে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও পরে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন। কিন্তু তাঁকে অপসারণ করে প্রকাশ্যে গোষনার দিয়ে জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা বে-আইনীভাবে দখল করেন। তিনি মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মর্মে সংবিধান সংশোধন করেন এবং প্রতি শুক্রবার টুপি মাথায় দিয়ে রাষ্ট্রীয় হেলিপ্টারে চড়ে কোন না কোন জেলার প্রধান মসজিদে গিয়ে জুম’আর নামায পড়া শুরু করেন।

প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তিনিও এক বড় ধরণের পরিবর্তন আনেন। প্রতিটি থানাকে তিনি উপজেলা নামদিয়ে আপগ্রেড করেন। আগের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সার্কেল অফিসার পদ বিলুপ্ত করে তিনি টঢ়ফধঃব করে প্রায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মর্য্যাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উপজেলা অফিস স্থাপন করে উচ্চতর পদে অফিসার নিয়োগ দেন। গঠিত হলো বিশাল এলাকা নিয়ে উপজেলা চত্বর। ব্যবস্থা হলো সরকারি অ্যাজে-াগুলি অফিস ও বাসভবন বিপুল ব্যয়ে। তিন উপজেলাতে ফৌদজাদরী ও দেওয়ানী আদালতও এনেছিলেন কিন্তু দেশব্যাপী আইনজীবীদের তুমুল আন্দোলনের ফলে সে ব্যবস্থা ফাটল করতে বাধ হন কিন্তু বাদ বাকী সবই অক্ষুন্ন রয়েছে আজও।

এরশাদ পতন ও আমলাতন্ত্র

১৯৯০ সালে প্রবল গণ আন্দোলনের চাপে এরশাদের পতন ঘটার পর সাধারন নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচিত সরকার গঠন হয় এবং তাদের আমলে অনেক প্রতিকূলতা সত্বেও সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এতকাল চলছিল রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা।

এখন প্রশ্নবিদ্ধ বা প্রশ্নাতীতভাবে প্রতি পাঁচ বছর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারও গঠিত হয়। কিন্তু আমরাতন্ত্র? তাদের আরও বংশবৃদ্ধি ঘটেছে বিভাগের সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে দশটি করার মাধ্যমে। বস্তুত: বিভাগীয় কর্মকর্তারা বিভাগের অধীন জেলাগুলির জেলা প্রশাসকদের কাজের সমন্বয়ক। ঐ সমন্বয় সাধন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। ৫০ ও ৬০ এর দশকে বিভাগীয় ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার দাবী উঠেছিল অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায়।

এখন উল্টো বাড়ছে বিভাগ-বিভাগীয় কমিশনার-বেশ কিছু সংখ্যক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার-তাদের বিপুল সংখ্যক অধঃস্তন কর্মচারী-সুসজ্জিত এসি সংলগ্ন অফিস ও বাসভবন বহু সংখ্যক সরকারি গাড়ী প্রভৃতি।
আর এই সব নির্মানের বাবদে হাজার হাজার কোটি টাকা ছাড়াও বিপুল সংখ্যক জমির অপচয় ঘটছে সকল পর্য্যায়ে।
এখন দেখা যাচ্ছে জেলা পরিষদের আমলাতন্ত্র ও দলীয়করণকে একটি প্রথা হিসাবে দাঁড় করানো হচ্ছে।

লেখক : সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত।