ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মিডিয়া » বিস্তারিত

সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মিলনের নামে 'পদক' চালুর জোর দাবি

২০২২ জুন ২১ ১৩:২৭:২৬
সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মিলনের নামে 'পদক' চালুর জোর দাবি

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট প্রয়াত হাবিবুর রহমান মিলন ছিলেন একজন আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তিনি কখনও ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কিংবা রাজনীতি করা কখনই পছন্দ করতেন না।

তিনি শুধু একজন ভালো মানুষই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন পরোপকারী বন্ধুও বটে। সাংবাদিকতায় তাঁর মতো আপোষহীন, সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আজ নেই বলেই, সাংবাদিকেরা আজ পদে পদে বিপদে পড়ছেন। তাঁর আদর্শ ও গুণকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মিলনের নামে সহসাই 'সাংবাদিক পদক' চালু করে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে তাঁর কর্মময় জীবন ও আদর্শকে তুলে ধরতে হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট প্রয়াত হাবিবুর রহমান মিলনের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এক স্মরণ অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিকেরা জোরালোভাবে এ দাবি করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে প্রচারিত দর্শকনন্দিত নিউজ পোর্টাল নবীনগরের কথা গতকাল সোমবার রাতে এই ভার্চুয়াল স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

দৈনিক বাংলা ৭১ এর বিশেষ প্রতিনিধি ও নবীনগরের কথার সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় নবীনগরের কথার ১৫৫-তম পর্বে অনুষ্ঠিত এ স্মরণ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মিলনের কর্মময় জীবনের ওপর সারগর্ভ আলোচনা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে'র মহাসচিব দ্বীপ আজাদ, মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার সাধারণ সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ, দৈনিক কালের কণ্ঠের অনলাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (ইনচার্জ) গাউস রহমান পিয়াস এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি, বাংলা টিভির জেলা প্রতিনিধি ও স্থানীয় সাপ্তাহিক নতুন মাত্রার সম্পাদক বাচিকশিল্পী আল আমীন শাহীন।

আলোচকেরা বলেন, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মিলন দৈনিক ইত্তেফাকে তাঁর 'ঘরে বাইরে' নামে নিজের নিয়মিত কলামে 'সন্ধানী' ছদ্মনামে বহু বছর আগে লিখে গিয়েছিলেন,'রাজনীতি চারটি ধারায় বহমান। সেগুলো হলো হিংসা, বিদ্বেষ, গালাগাল ও সুবিধাবাদ। অথচ দেশে তিন দশক ধরে নতুন করে গণতন্ত্র চালু হলেও রাজনীতি নিয়ে সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মিলনের তীর্যকভাবে করে যাওয়া উচ্চারিত এই বাণী থেকে রাজনীতিবিদেরা আজও বের হতে পারেননি। যা গণতন্ত্রের জন্য মোটেই শোভন নয়।

বক্তারা বর্তমান সাংবাদিকতার নানা নেতিবাচক কর্মকান্ড তুলে ধরে আরও বলেন, বর্তমানে আমরা যতটা না সাংবাদিকতা করছি, মনে হয় তার চেয়ে বেশী বেঁচে থাকার জন্য কেবল লড়াই করে যাচ্ছি। ফলে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ খ্যাত বর্তমান সাংবাদিকতা যেন এক নতুন সংস্কৃতির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। যার উদাহরণ সাংবাদিকতা এখন কর্পোরেট সাংবাদিকতায় পরিণত হয়েছে। যেজন্য সমাজে 'বাতিঘর' খ্যাত সাংবাদিকতা আজ সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে 'পক্ষপাততুষ্ট'! সাধারণ পাঠকের অভিযোগ, 'বর্তমান সাংবাদিকতা যেন একটি মহলের বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। এ থেকে বের হতে হলে, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মিলনের অনুকরণীয় কর্ম ও আদর্শকে আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। তাঁর রেখে যাওয়া স্মৃতিময় কর্মকে আমাদের জীবনাদর্শে প্রতিনিয়ত চর্চা করতে হবে।

বক্তারা সাংবাদিক নীতিমালা তৈরীরও কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সাংবাদিকতায় প্রশ্নবিদ্ধ নীতিমালা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। এতে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে। সেজন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সাংবাদিকেরা নিজেদের মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে, কোন নীতিমালাই সাংবাদিকদেরকে পরাভূত করতে পারবে না।

প্রসংগত, বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের (পিআইবি) সাবেক চেয়ারম্যান, দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক উপদেষ্টা সম্পাদক, ঐক্যবদ্ধ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুইবারের সভাপতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট প্রয়াত হাবিবুর রহমান মিলন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে এক মুসিলম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

(জিডিএ/এএস/জুন ২১, ২০২২)