ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » মুক্তচিন্তা » বিস্তারিত

‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ একমাত্র সমাধান

২০২২ আগস্ট ০৯ ১৮:১৯:২২
‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ একমাত্র সমাধান

শিতাংশু গুহ


বাংলাদেশের কোন হিন্দু’র সাহস নেই, বা থাকার কথা নয়, ইসলাম বা নবী’র অপমান করার। হয়তো ইচ্ছেও নেই, কারণ ছোটবেলা থেকে তাদের শেখানো হয়, ‘যত মত তত পথ’। পূজা-অর্চনার পর তাদের প্রার্থনা হচ্ছে, ‘সর্বজীবের মঙ্গল’। কাজেই বিদ্বেষ কম, তদুপরি ভয় তো আছে? এমনকি আমরা যাঁরা বাইরে থাকি, আমাদের বাড়ীঘর পোড়ানোর আশংকা না থাকলেও আমরা কিন্তু ইসলাম বা নবী’র অপমান করিনা, এটি আমাদের রুচি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্ম।

বাংলাদেশে ইসলামের অবমাননার ভুয়া ধোঁয়া তুলে হিন্দু বাড়ীঘর আক্রমন শুরু ২০১২সালে রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে আক্রমণের মধ্যে দিয়ে। মন্দির তখনও ভেঙ্গেছে, আগেও ভেঙ্গেছে। আগে নির্বাচন হলেই হিন্দুর বাড়ীঘর আক্রমন হতো। বর্তমান সময়কার অজুহাত, ‘ইসলাম অবমাননা’। রামু’র ঘটনার পর জাপান ও শ্রীলংকা নাখোশ হয়, সরকার তড়িঘড়ি রামুতে নুতন বাড়ীঘর, মন্দির তুলে দেন্। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং রামুতে যান। রামু’র এক বৌদ্ধ পুরোহিত তখন বলেছেন, বিল্ডিং হয়েছে, আস্থা ফিরে আসেনি।

অতঃপর একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। ২০২১শে দুর্গাপূজার পর সর্বশেষ সাহাপাড়া, নড়াইল। সংখ্যালঘুরা বারবার আস্থার অভাব অনুভব করেছে। প্রশাসন, সরকার, নেতানেত্রীরা টুকটাক করেছেন, রিলিফ দিয়েছেন, গা-ছাড়া ভাব, কোন কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেননি। কোন ঘটনার বিচার হয়নি, হওয়ার সম্ভবনাও নেই? বারবার পুলিশ সন্ত্রাসী না ধরে ভিকটিম হিন্দুকে ধরেছে। দু’একজন নমনীয় বিচার ব্যবস্থার কারণে দণ্ডিত হয়েছেন, বিনা বিচারে অনেকে জেলে আছেন।

রামু’র ঘটনার পর তথাকার একজন পুলিশ অফিসার বলেছিলেন, ‘উর্দি পড়া না থাকলে আমিও তৌহিদী জনতার সাথে মিছিলে যোগ দিতাম’। এটাই বাস্তবতা, অনেকেই যোগ দিচ্ছেন? ফলে তৌহিদী জনতার সহিংসতা বেড়েছে, এবং প্রতিদিনই বাড়ছে। রামু’র সেই পুলিশ অফিসারের শাস্তি হয়েছে এমন কোন সংবাদ চোখে পড়েনি; তবে মূর্তি ভাঙ্গার কারণে দল থেকে বহিস্কৃত এক নেতা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন?

সদ্য সরকার দলীয় এক নেতা বলেছেন, বাংলাদেশে যেসব হিন্দু আছেন, তাঁরা সবাই নিকৃষ্ট। মন্ত্রীরা মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা বলেন? সংখ্যাগুরুর অনুভূতি সামলাতে হিন্দুরা ব্যতিব্যস্ত। কোথায় কার অনুভূতিতে আঘাত লাগে, সেই ভয়ে হিন্দুদের মধ্যে আস্থার যথেষ্ট অভাব ঘটেছে। শিক্ষককে জুতার মালা দেয়া, হত্যা বা অবমাননা তো আছেই? ফলে হিন্দুরা দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। খসড়া গণনায় এর প্রতিফলন ঘটেছে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান, বা অন্যান্যরা কমেছে; মুসলমান বেড়েছে।

বাড়ীঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আক্রমন ইত্যাদি‘র সাথে হয়তো আর্থিক যোগ আছে, কিন্তু মন্দির-মূর্তি ভাঙ্গার সাথে ধর্মীয় বিদ্বেষ থাকা স্বাভাবিক। হিন্দু মূর্তি (প্রতিমা) পূজা করে তাই মূর্তি ভাঙ্গছে। হিন্দু তো সূর্য্যের পূজা করে, সূর্য্য কি ভাঙ্গা যাবে? আর মূর্তি ভাঙ্গলেই কি বিশ্বাস ভাঙ্গা যায়? বাংলাদেশে বড়ছোট এমন একটি মন্দির নেই, যা কখনো না কখনো আক্রান্ত হয়নি। আজ পর্যন্ত এই অপরাধে কেউ শাস্তি পায়নি, কারণ প্রশাসন, সরকার বা অপরাধী কেউ এটিকে অপরাধ মনে করেনা!

ফরিদপুরের ‘বেয়াই’ যখন অরুন গুহ মজুমদারের বাড়িটি দখল করেন, তখন আবদুল গাফফার চৌধুরী নিউইয়র্কে ছিলেন। তাঁকে এঘটনা জানালে তিনি বলেন, ‘শিতাংশু, হিন্দু’র জমিবাড়ী তো গনিমতের মাল’। ঘটনা তাই-ই। নড়াইলে মৌলবাদী সহিংসতার পর একটি ইসলামী দল একটি লোক দেখানো সমাবেশ করে, তাদের ব্যানারে লেখা ছিলো, ‘সংখ্যালঘুরা আমাদের আমানত’। আমানত হচ্ছে গৃহস্থের ‘মুরগী পোষা’-র মত, এদের কে বোঝাবে দেশটি এজন্যে স্বাধীন হয়নি।

হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের জন্যে দেশটি এখনো ‘পাকিস্তানের মতোই’ আছে। হিন্দুরা দেশে থাকুক এটি খুব বেশি মানুষ চায় বলে মনে হয়না? স্বাধীনতার পর এক কোটি হিন্দু দেশে ফিরে আসুক তা অনেকেই চাননি, তখন ঠেকানো যায়নি, এখন চেষ্টা করতে অসুবিধা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে, এটি ইন্টারনেটের যুগ, দুই কোটি হিন্দুকে দেশত্যাগ করানো যাবেনা, জোর করে ধর্মান্তরিত করা যাবেনা। ইচ্ছে বা অনিচ্ছেই হোক, একসাথে থাকতে হবে; ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই একমাত্র সমাধান। বিশ্বব্যাপী হিন্দু জাগছে, তাঁদের সম্ভবত: খুব বেশিদিন দমিয়ে রাখা যাবেনা। কবিগুরু গেয়েছেন, ‘দিনে দিনে বাড়িতেছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।