প্রচ্ছদ » জাতীয় » বিস্তারিত
অবৈধ ভ্যান গাড়ির ব্যবসা করে কোটিপতি ইসরাফিল
২০২২ সেপ্টেম্বর ১৭ ১৩:৫৩:০২ফয়েজ উল্যাহ আশিক, ঢাকা : উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজধানীতে বেপরোয়াভাবে চলছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যানগাড়ি। এতে বিদ্যুতের অপচয়ের পাশাপাশি নিয়মিত ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে তবু প্রশাসনের বিকার নেই। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক পুলিশ, ভুয়া সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পক্ষ ম্যানেজ করে শক্তিশালী একাধিক সিন্ডিকেট অবৈধ এ ব্যবসা করে বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, পুরান ঢাকা ও হাজারীবাগ এলাকায় এই সিন্ডিকেটটির রয়েছে শক্ত ঘাঁটি।
সরেজমিনে পাওয়া তথ্য বলছে, কামরাঙ্গীরচরের সেকশন ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে সদরঘাট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সড়কে ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়ির উতপাত সবচেয়ে বেশি। স্থানীয়রা বলছেন, ইসরাফিল নামে এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব গাড়ি চলাচল করছে। তার অধীনে ৩০০ ভ্যানগাড়ি চলাচলের প্রমাণ পেয়েছেন এই প্রতিবেদক।
ভ্যান গাড়ি চালকরা জানিয়েছেন গাড়ি প্রতি মাসিক ২/৩ হাজার টাকা করে আদায় করেন ইসরাফিল। এতে তার মাসিক আয় হয় প্রায় ৯ লাখ টাকা। বছরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি টাকার ওপরে । তবে এ টাকার ভাগ ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় কার্ডধারী ভুয়া সাংবাদিক, তথাকথিত রাজনৈতিক নেতারাও পান বলে ভ্যানগাড়ি চালকরা জানিয়েছেন।
বিশ্বস্ত সুত্র বলছে, কিছুদিন আগে ইসরাফিল নিজেই একজন ভ্যানগাড়ি চালক ছিলেন। অথচ এখন কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এলাকায় তাকে সবাই ভ্যান ইসরাফিল নামে চেনেন। রফিকুল ইসলাম নামে কামরাঙ্গীরচরের একজন বাসিন্দা বলেন, ভ্যান ইসরাফিল এখন কোটি কোটি টাকার মালিক, সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বড় বড় পুলিশ অফিসাররা হ্যার লোক! সম্প্রতি টাকার গরমে দুই সন্তানের মাকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইসরাফিলের ব্যবহৃত মোবাইলে কল দিয়ে তার পরিচয় জানতে চাওয়া হলে প্রথমে স্বীকার করেন। কিন্তু অভিযোগ জানানোর পর রঙ নাম্বার বলে কেটে দেন। পরে তাকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও ধরেননি।
বিশস্ত সূত্রে জানা যায়, ইসরাফিলের এই অবৈধ সাম্রাজ্যের সঙ্গে কতিপয় অসাধু থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত। এমনকি মোটা অঙ্কের মাসোহারার বিনিময়ে কতিপয় কার্ডধারী ভুয়া সাংবাদিকরা ইসরাফিলকে সহযোগিতা করেন। এর স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এই কার্ডধারী ভুয়া সাংবাদিকরা পুলিশের সঙ্গে সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ইসরাফিলের অবৈধ গাড়ি ডাম্পিং করা থেকে রক্ষা করেন।
সেজন্য উপরী মহলের চাপে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও বেছে বেছে ইসরাফিলের গাড়ি ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। খোদ ইসরাফিলের ভ্যান চালকরাই এ কথা জানিয়েছেন। তবে যেসব ভ্যানগাড়ি চালক ইসরাফিলকে চাদা দেয় না তাদের গাড়ি ধরে ডাম্পিং করে পুলিশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এটিএসআই জানান, ইসরাফিলের ভ্যান ধরা হলে উপর থেকে অনেক হুমকি দেয়া হয়। কাউকে কাউকে বদলির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। ইসরাফিলের এত ক্ষমতার উৎস কি ? অভিযোগের বিষয়ে লালবাগ ট্রাফিক পুলিশের টিআই বুলবুল আহমেদের দাবি ইসরাফিলের কাছ থেকে একটি পয়সাও নেয় না পুলিশ। বরং রেকারিং করতে করতে ইসরাফিলের গাড়ির সংখ্যা এখন ৩০-৩৫টিতে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।
যদিও বুলবুল আহমেদের এই বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, একদল নামধারী সাংবাদিক ইসরাফিলের মতো অবৈধ বহু যানবাহন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। পয়সা খেয়ে তারা পুলিশের সঙ্গে দেন দরবারের চেষ্টা করে। অনেক সময় সন্মানের দিক চেয়ে মেনে নিতে হয়। তবে এখন কারও সুপারিশ শোনা হয় না বলে জানান বুলবুল আহমেদ। টি আই বিকাশ (সোয়ারীঘাট ) এর কাছে সন্তোষ জনক উত্তর পাওয়া যায়নি . টি আই মঞ্জুর (বাবু বাজার ) জানান ইস্রাফিল কে তিনি জানেন না, প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে।
সম্প্রতি একই বিষয়ে জানতে ফোন করা হয়েছিল লালবাগ ট্রাফিক জোনের উপঃ পুলিশ কমিশনার মেহেদী হাসানকে তিনি বলেন, দরিদ্র এলাকা বিবেচনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশকে ছাড় দিতে হয়। তবে এসব সিন্ডিকেট থেকে ট্রাফিক পুলিশ কোনো পয়সা নেয় না বলে দাবি করেছিলেন মেহেদী হাসান।
(এফএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২)