ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের বাইরে » বিস্তারিত

ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হবে?

২০২২ অক্টোবর ০২ ১৭:৪০:২১
ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৬০ বছর আগে বিশ্ব একটি ভয়াবহ পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। কিউবান মিসাইল সংকট শুরু হয় ১৯৬২ সালে। তখন যুক্তরাষ্ট্র কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো পারমাণবিক অস্ত্র শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরপর নানা কূটনৈতিক পদক্ষেপের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের পারমাণবিক অস্ত্র সরিয়ে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রও একইভাবে তুরস্ক থেকে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এভাবে একটি বড় বিপর্যয় থেকে বেঁচে গিয়ে ছিল বিশ্ব।

কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এখন সেই স্মৃতি আবার সামনে চলে এসেছে। কারণ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বার বার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। ২১ সেপ্টেম্বর তিনি বলেছেন, রাশিয়ার ভূমি রক্ষায় সব ধরনের অস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করবেন তিনি। এর মানে হলো ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেছে সেক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। এই অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি কোনো ধাপ্পাবাজি নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এর জবাবে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। রাশিয়াকে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আমেরিকান লবি গ্রুপ আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের ড্যারিল কিমবল বলেছেন, কিউবার সেই সময়ের পরিস্থিতির মতোই খারাপ সময় পার করতে পারে বিশ্ব। রাশিয়ার বিশ্লেষকরাও দুই ঘটনার মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছেন। পার্থক্য শুধু সে সময় ছিল কিউবা এখন ইউক্রেন।

যদিও কয়েকটি কারণে এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। কিউবার সংকট স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ১৩ দিন। আর ইউক্রেনের সংঘাত ২০০ দিন পেরিয়ে গেছে, যা কবে বন্ধ হতে পারে তার সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। এদিকে রাশিয়ার সফলতার কারণে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে কিছুটা চিন্তিত পশ্চিমা নেতারা। কারণ রাশিয়া যদি ইউক্রেনে পুরোপুরি বিজয় লাভ করে তাহলে দেশটি বাল্টিক অঞ্চলেও নজর দিতে পারে। একই সঙ্গে ন্যাটোর ডিপোতেও হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। এতে যুদ্ধ আরও প্রসারিত হতে পারে। যা রূপ নিতে পারে ভয়াবহ পারমাণবিক যুদ্ধে।

অন্যদিকে বর্তমানে চিন্তা বাড়ছে রাশিয়ার ব্যর্থতা নিয়েও। এরই মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনর্দখল করেছে ইউক্রেনের সেনারা। তাছাড়া রিজার্ভ সেনাদের ডেকেও নতুন সংকটে পড়েছেন পুতিন। ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি বা রুশ নেতা ইকিতা ক্রুশ্চেভ কেউই মূলত পারমাণবিক যুদ্ধ চায়নি। কিন্তু পুতিন নিজের ব্যর্থতা ও দুর্ভাগ্য ঠেকাতে পারমাণবিক অস্ত্রের খেলা খেলতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কয়েকটি উপায়ে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া। প্রথমত এমনভাবে হামলা করতে পারে যাতে মূলত কেউ মারা যাবে না। ইউক্রেনে অথবা ন্যাটোর ওপর এই হামলা চালাতে পারে। ভূগর্ভস্থ বা আরও নাটকীয়ভাবে বায়ুমণ্ডলে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েও পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করতে পারে রাশিয়া। এটা কৃষ্ণ সাগরে অথবা রাশিয়ার আকাশ সীমার অনেক উপরে হতে পারে। এতে প্রাণহানি না হলেও একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পন্দন সৃষ্টি করবে যা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অধিকৃত চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ন্যাটোয় যোগ দিতে মরিয়া প্রচেষ্টা শুরু করেছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এ সামরিক জোটের সদস্য হওয়ার জন্য ‘দ্রুততর’ আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এমন পরিস্থিতিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ০২, ২০২২)