ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » ফিচার » বিস্তারিত

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর

২০২২ অক্টোবর ০৯ ১৩:০৪:৪৩
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। মাটির ঘরের কদর কমিয়ে দিয়েছে বন্যা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অথচ দিনাজপুর অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামেই একসময় দেখা যেত নজর কাড়া মাটির ঘর। একতলা কিংবা দোতলা বাড়ি ছিলো অনেকের। শুধু মাটির বাড়িই নয়, ছিল ধান-চাল রাখার জন্য মাটির তৈরি গোলা ঘর ও কুঠি। তবে দিন দিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এসব আজ হারাতে বসেছে।

এই মাটির ঘর ঠান্ডা থাকায় এক সময় এটাকে গরীবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরও বলা হতো। এ ঘর গরমের সময় আরামদায়ক। তাই অনেক গ্রামেই বিত্তশালীদেরও দোতলা মাটির ঘর ছিল। এখনও এ অঞ্চলের অনেক গ্রামে রয়েছে মাটির ঘর।

তবে, দিনাজপুর জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় এসব মাটির ঘরের বেশিরভাগই ভেঙ্গে গেছে। যেগুলো আছে,তারমধ্যে ফেটেও গেছে বেশ কিছু। এ নিয়ে চিন্তিত অনেকে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারগুলোর ভরসা ওই মাটির ঘরই।
মাটির সহজলভ্যতা, এর প্রয়োজনীয় উপকরণ আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় আগের দিনে মানুষ মাটির ঘর বানাতে বেশী আগ্রহী ছিল। মাটির ঘর যাদের আছে তারা প্রতিবছরই মাটির প্রলেপ দেয়। অনেকে আবার চুনকামসহ বিভিন্ন রংও করেন। দ্বিতল মাটির বাড়িও আছে এ অঞ্চলে।

বিরল উপজেলার পলাশবাড়ী ইউপি’র ইবরাহিমপুর গ্রামের আজাহার আলী জানায়, সাধারণত এটেল বা আঠালো মাটি দিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে কাদায় পরিণত করা হয়। এরপর ২০/৩০ইঞ্চি চওড়া দেয়াল তৈরী করা হয়। প্রতিটি ঘর তৈরী করতেও মাসখানেক সময় লেগে যায়। কারণ একেবারে দেয়াল তোলা যায় না। কিছু দেয়াল তোলার পর শুকাতে হয়। ১০/১৫ ফুট উচু দেয়ালে কাঠ বা বাশের সিলিং তৈরী করে তার উপর খড় বা টিনের ছাউনি দেয়া হয়। তার দ্বিতল মাটির বাড়ি এখনও রয়েছে। এ গ্রামে অনেকের এই মাটির ঘর আছে।

দিনাজপুর দক্ষিণ কোতয়ালীর আস্করপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারমান জিয়াউর রহামান জানায়, অনেকে বাশ, মাটি, টিন সংগ্রহ করে নিজেরাই মাটির ঘর তৈরী করেন। এক্ষেত্রে সময় বেশী লাগে। তবে খরচ কম পড়ে। শ্রমিক না নিলে কমপক্ষে ১২/১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তাই এ অঞ্চলের গ্রামগুলোতে এখনও মাটির বাড়ি-ঘর রয়েছে।

এই মাটির ঘর ভুমিকম্প বা বন্যা না হলে এর স্থায়িত্ব শতবছরও হতে পারে বলে জানিয়েছেন, মাটির ঘর ব্যবহারকারীরা।

(এসএএস/এএস/অক্টোবর ০৯, ২০২২)