ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » অর্থ ও বাণিজ্য » বিস্তারিত

আমদানি কমেছে বেনাপোল স্থলবন্দরে

২০২২ নভেম্বর ২৫ ১৬:০৮:৫৫
আমদানি কমেছে বেনাপোল স্থলবন্দরে

যশোর প্রতিনিধি : দুর্বল অবকাঠামোর কারণে বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমছে দেশের সবচেয়ে বড় বেনাপোল স্থলবন্দরে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ক্রমেই আমদানি বাণিজ্য কমে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধ্বস নামতে শুরু করেছে।

১১০ একর জমির ওপর বেনাপোল স্থলবন্দরের অবস্থান। ৫৯ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এ বন্দরে প্রায় দেড় লাখ থেকে দুই লাখ পণ্য ওঠানামা করে। ৩৪টি গুদাম ও আটটি ইয়ার্ড, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, দুটি ট্রাক টার্মিনাল ও একটি রপ্তানি টার্মিনাল থাকলেও বর্তমানে এডিবির অর্থায়নে আটটি ওয়্যারহাউজ ভেঙে বড় দুটি ইয়ার্ড নির্মাণ হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রচণ্ড যানজট, পণ্যাগারসহ অবকাঠামো সংকট, অব্যবহৃত ওয়্যারহাউজ ও শেড, কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতির তীব্র সংকট আর বন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা সমস্যার জটকে তীব্র করে তুলেছে। আমদানির ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সমস্যায় প্রয়োজনীয় সুফল পাচ্ছেন না তারা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্দরে পণ্য রাখার জায়গা না থাকায় ভারত থেকেও আমদানি পণ্য নিয়ে আসতে পারছেন না ভারতীয় ট্রাক চালকরা। বন্দরের ক্রেন ফর্কলিফট বিকল থাকায় ভারী মেশিনারিজ লোড আনলোড করতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ জানানোর পরও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে ভোগপণ্য, কাঁচা তুলা, যানবাহন, মোটর পার্টস, গাড়ির চেসিস, মেশিনারি, তৈরি পোশাক, লোহা এবং লোহাজাতীয় পণ্য, প্রসাধনী সামগ্রী, শিশুখাদ্য, রাসায়নিক দ্রব্য, কারখানার কাঁচামাল।

আর ভারতে রপ্তানি হয় গার্মেন্টস ঝুট, কেমিক্যাল, পাট, পাটজাতীয় পণ্য, তৈরি পোশাক, বাটারি, সাবান, মাছ, প্লাস্টিক। তবে দেশের বেশিরভাগ শিল্প-কলকারখানা ও বিভিন্ন প্রকল্পের মেশিনারিজ আমদানি করা হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে।

বন্দর সূত্র জানায়, স্থলপথে প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। তবে বন্দরের নানা অব্যবস্থাপনার কারণে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দরে দীর্ঘদিনের এ সমস্যার কোনো সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ বাণিজ্য সংশ্লিষ্টদের।

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বেনাপোল কাস্টম হাউজে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি। এই চার মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৯৯৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

সবশেষ চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম চার মাসে বন্দরে আমদানি ও খালাস হয়েছে ১২ লাখ ৩০ হাজার ৯০৪ মেট্রিক টন পণ্য। এর মধ্যে জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৫ মেট্রিক টন পণ্য। বন্দর থেকে পণ্য খালাস হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৬৩ মেট্রিক টন পণ্য।

আগস্ট মাসে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৪ মেট্রিক টন পণ্য। খালাস হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন। সেপ্টেম্বর মাসে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৮ মেট্রিক টন আর খালাস হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন পণ্য।

বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে। অথচ বেনাপোল বন্দরের অভ্যন্তরে জায়গা সংকটের কারণে পণ্য খালাস করতে দিনের দিন দিন দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ভারতীয় ট্রাক চালকদের। আমদানিকারকরা বন্দর থেকে সময়মতো তাদের পণ্য খালাস করতে না পারায় বন্দরে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ পণ্যজট।

প্রতিদিন ভারত থেকে ৪০০ ট্রাক পণ্য আসে বেনাপোল বন্দরে এবং রপ্তানি হয় ১৩০ ট্রাক পণ্য। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও ডলার সংকটে মালামাল আমদানি কিছুটা কমেছে।

বেনাপোল কাস্টম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে। আমদানিতে জটিলতার কারণে এসব পচনশীল পণ্য নষ্ট হচ্ছে এবং অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। এতে রাজস্ব আদায়ও কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দরের জায়গা সংকটসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। তবে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।

বেনাপাল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিছু কাজও শেষ হয়েছে। অটোমেশন ও সিসি টিভির কাজ শেষ পর্যায়ে। নতুন করে কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৫, ২০২২)