ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » মুক্তিযুদ্ধ » বিস্তারিত

স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও সংরক্ষিত হয়নি খানসামার ৩ বধ্যভূমি

২০২২ ডিসেম্বর ১৬ ১৫:১৭:৫৮
স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও সংরক্ষিত হয়নি খানসামার ৩ বধ্যভূমি

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও সংরক্ষিত হয়নি দিনাজপুরের খানসামায় পুলহাট ইছামতি নদীর ধার, জিয়া সেতুর পশ্চিম পাড় ও পূর্ব গোবিন্দপুরসহ ৩টি বধ্যভূমি। ফলে প্রতি বছর অস্থায়ী বাঁশের বেড়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছেন শহীদ পরিবার ও তাদের স্বজনেরা। বিজয়ের এই মাসে এই গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো শিগগির সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়ে খানসামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিলেন বাবু অমিয় কুমার গুহ। তাঁকে ১৯৭১ সালের ১ জুন গভীর রাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহির উদ্দিনের বাড়ি থেকে আটক করে পাকিস্তানি দালালরা ২ জুন খানসামা থানায় বন্দি করে রাখে। তার পরের দিন পাকবাহিনীকে খবর দিয়ে রাজাকাররা বাবু অমিয় কুমার গুহকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এরপর সাইকেলে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে পাশের নীলফামারী ও খানসামা উপজেলার সংযোগস্থল পুলহাট নামক স্থানে ইছামতী নদীর তীরে গুলি করে ও বেয়োনেট দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে রেখে যায়। একই স্থানে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া টেডি ডাক্তার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী খ্ট্টু মিয়াকে হত্যা করে পাকবাহিনী। পরে স্থানীয় তরণী কান্ত, নজরুল ইসলামসহ অনেকে তাদের লাশ নদী থেকে তুলে কবর দেন।

এছাড়াও পূর্ব গোবিন্দপুর গ্রামে খানসামা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার ১১ জনের মরদেহ দুটি কবরে ও আত্রাই নদীর ধারে জিয়া সেতুর পশ্চিমে ৮ জনের মরদেহ কবর দেওয়া হয়। কিন্তু স্বাধীনতা ও শহীদদের মৃত্যুর ৫১ বছরেও এসব পরিবার শহীদ পরিবার হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়নি। শুধু অমিয় কুমার গুহের নামে একটি রাস্তার নামকরণ ও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন দিবসে খেলাধুলার নামকরণ ছাড়া আজ পর্যন্ত কোন সাহায্য পায়নি পরিবারগুলো। আর স্বাধীনতার ৫১ বছরেও গণকবরের তালিকা ও সংরক্ষণ, শহীদ পরিবারের তালিকা তৈরি ও রাজাকারের তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

গত ৯ বছরের ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের ২৫ মার্চ খানসামা ডিগ্রি কলেজের আয়োজনে ইছামতী নদীর তীরে অসংরক্ষিত বধ্যভূমিতে অস্থায়ী বাঁশের বেড়ার স্মৃতিস্তম্ভে গণহত্যা দিবসে শহীদদের স্মরণ করা হয়।

এই গণকবরের প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা বয়সেরভারে নুয়ে নুয়েপড়া মো. নজরুল ইসলাম জানান, অমানবিকভাবে নির্যাতন করে অমিয় বাবুসহ কয়েকজনকে এখানে হত্যা করা হয়। সেই স্মৃতি আজও আমাদের চোখে ভাসে, বর্বরতা।

কিন্তু এই স্মৃতিময় স্থানে সংরক্ষণে কোন উদ্যোগ নেই। যা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক। তা না হলে কবরগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

শহীদ অমিয় কুমার গুহের দৌহিত্র ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাকেশ গুহ বলেন, স্বাধীনতা ও আওয়ামী লীগের স্বার্থে আমার দাদু মৃত্যু পর্যন্ত আপস করেননি। ফলে তার এই করুণ মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করলেও আমরা এখনও সরকারি তালিকভুক্ত হয়নি এবং গণকবর সংরক্ষণ করা হয়নি। তাই গণকবর সংরক্ষণ ও শহীদ পরিবার হিসেবে তালিকা ভুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর অনুরোধ রইল।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমান জানান, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে মাতৃভূমিকে হানাদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন তাদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৩টি বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে খানসামা উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে এই বধ্যভূমি ও গণকবর সংরক্ষণ ও সংস্কার করার দাবি জানান তিনি।

(এসএএস/এএস/ডিসেম্বর ১৬, ২০২২)