ঢাকা, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া

নওগাঁয় বাঁশের তৈরি কুটির শিল্পের হালচাল 

২০২৩ জানুয়ারি ১৯ ১৬:২৫:৫৩
নওগাঁয় বাঁশের তৈরি কুটির শিল্পের হালচাল 

নওগাঁ প্রতিনিধি : বাঁশের তৈরী কুটির শিল্পের কারিগর। এই দম্পতি বাড়িতে বরে বাঁশের তৈরী বিভিন্ন রকম ডালা, চালুন, কুলা, ডালি, হাতপাখা, ঝাড়ুসহ নানা রকম সাংসারিক সামগ্রী তৈরী করে এসব হাটেবিক্রি করে সংসার চালায়। সংসারে স্বামীকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি সে নিজেই এখন বড় ব্যবসায়ী। তার দোকানে সাজানো আছে তরলা (তল্লা)বাঁশ দিয়ে হাতের তৈরি বিভিন্ন রংয়ের কুলা, চালন, ডালি, হাতপাখা, ঝাড়ুসহ অনেক কিছু। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সারপট্রি এলাকায় হাটে বসে এই শিল্পের ব্যবসায়ীরা এসব তৈরীও করে আবার খদ্দের এলে বিক্রিও করে থাকে।

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় তাদের সাথে, উজ্জ্বল তরনী দম্পতির সঙ্গে। তারা বলেন, আমরা থাকি উপজেলার কালিতলা মন্দিরের কাছে সুলতানপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার ঘরে। তিনি বলেন, আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনেই ব্যবসা করছি। কিছু জিনিস আমরা কিনে নিয়ে আসি। আর কিছু হাতের তৈরি। তার ওখানে দেখা যায়, রঙিন গোমাই। সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা করে। হাঁস মুরগী ঢাকা টোপা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে। এছাড়া বিভিন্ন দামের বিভিন্ন শিল্প আছে তাদের দোকানে।

পুষ্প তরনী বলেন, ডালি, হাতপাখা, চালন, কুলাসহ অনেক কিছু আমরা নিজেই তৈরি করি। দিনে মাঝারি ডালি ৬-৭টা, কুলা ২০টি তৈরি করা যাবে। কুলার দাম ৫০-৭০ টাকা। এগুলো হাতের তৈরি আদীয় শিল্প। সারাবছর এই ব্যবসা চলে। সপ্তাহে শনি ও বুধবার হাট হলেও আমরা প্রতিদিন এখানে নিয়ে এসে বিক্রি করি। এছাড়া বাড়ি থেকেও অনেকে নিয়ে যায়। প্রকারভেদে এবং মানঅনুযায়ী ৫০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত ঝাড়ু বিক্রি হয়।

পাশাপাশি পাইকারি নিয়ে এসে বিক্রি করছে অনেক কিছু। টিকিয়ে রেখেছে তরলা (তল্লা) বাঁশের তৈরি আদীয় শিল্পকে। তারা দুজনেই বলেন, ৪ মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছি। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আরেক মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। অন্য মেয়েরা পড়াশোনা করছে।

অপরদিকে উপজেলার শিবগঞ্জ সুলতানপুরের ৬৫-৬৮ বছরের ব্যবসায়ী ওসমান। তিনি প্রায় ৪৫ বছর ধরে এই শিল্পের ব্যবসা করছেন। এই ব্যবসা করেই চালিয়ে যাচ্ছেন সংসারের খরচ। তিনি সপ্তাহে দুই দিন শনি ও বুধবার হাটে আসেন। তিনি বলেন আগের মতো আর লাভ হয়না। কারণ এখন বাঁশ ও নারকেলের খিলনির দাম বেশি। একটা বাঁশ থেকে ভালো মানের ঝাড়ু হয় দুটো। বিক্রি ১০০-১৩০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া কম মানের পাঁচটা এবং মাঝারি ও ছোট আরও বেশ কিছু ঝাড়ুও তৈরি করা যায়। সেগুলো ৪০-৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর নারিকেলের খিলনি ৮০ টাকা কেজি। নারিকেলের ঝাড়ুও প্রকারভেদে ৬০-১২০ টাকা বিক্রি হয়।

তিনি বলেন, তারপরও আজকে হাজার টাকা লাভ থাকবে। তিনি একটু অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রতিদিন এখানে বিক্রি করতে পারিনা। কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ওদের (পুষ্প, উজ্জ্বলতরনীসহ কয়েকজনের) কাছে পাইকারি বিক্রি করি। তাই প্রতিদিন বসতে পারিনা।
স্থানীয় তুহিন, রবিউল নামের দুই ক্রেতা বলেন, যখনই প্রয়োজন হয় তখনই আমরাও কিনি এই সকল হারিয়ে যাওয়া বাঁশের তৈরি শিল্প। তারা আরও বলেন, বাঁশের তৈরি কিছু শিল্প আছে যা সাজসজ্জার কাজে লাগে। তাই এই শিল্পকে ধরে রাখা উচিৎ বলে তারা মন্তব্য করেন।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু হাসান মুঠোফোনে গনমাধ্যমকে বলেন, তারা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে এটা অবশ্যই সবার জন্য একটা অনুপ্রেরণামূলক কাজ। আবহমানকাল ধরে চলমান ব্যবহার্য শিল্পকে এরা ধারণ করছে। এটা আগে ছিল নিত্য প্রয়োজনীয়। তবে এখন এই শিল্পগুলো অনেক জায়গায় সৌখিন হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তিনি বলেন, তারা যদি কোন সহযোগিতার জন্য আসে আমি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।

(বিএস/এসপি/জানুয়ারি ১৯, ২০২৩)