ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » অগ্নিকন্যা » বিস্তারিত

কানের দুল বিক্রি করে ব্যবসা করা মেয়েটি আজ শ্রেষ্ঠ জয়িতা 

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ২৫ ১৬:৩৭:২৫
কানের দুল বিক্রি করে ব্যবসা করা মেয়েটি আজ শ্রেষ্ঠ জয়িতা 

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার, ঈশ্বরগঞ্জ : সারাদেশের বেকার নারীদের আইডল হতে পারে কানের দুল বিক্রি করে ব্যবসা শুরু করা ঈশ্বরগঞ্জের নুসনাত আরা প্রিয়া (৩১)। অন্য মেয়েদের মতোই পড়াশুনা শেষ করে স্বপ্ন ছিল চাকুরি করা কিন্তু পড়াশুনা শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে যায় সে স্বপ্ন। নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পরই হাতে লাগানো হয় বিয়ের মেহেদি। গৌরপুর উপজেলা থেকে বিয়ে হয় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। বিয়ের পর পড়াশুনা থেমে না গেলেও সংসারের পাশাপাশি ভালোভাবে লেখাপড়া করা হয়নি। গৌরিপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন প্রিয়া।

স্বামীর বড় সংসার তারপর বিয়ের পরপরই সন্তান এবং পরিবারের আর্থিক সংকটে অনিশ্চয়তায় দিন কাটে প্রিয়ার। ২০১৭ সনে অনলাইনে প্রথম নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ড্রেস বিজনেস দিয়ে যাত্রা শুরু। ভালোই চলতে থাকে ব্যবসা কিন্তু প্রথম ধাক্কা আসে করোনার কারণে। এরমধ্যে গত পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে অল্প ভোটে পরাজিত হন তবে বর্তমানে ব্যবসা ভালো হওয়ার কারণে আর রাজনীতি না করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। হতাশাগ্রস্থ হয়ে নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়ে নিজের কানের দুল বিক্রি করে বাসার সামনে ছোট একটি দোকান নিয়ে বসে প্রিয়া। ব্যবসায় সাফল্য আসতে থাকার কারণে স্বপ্ন দেখে ব্যবসা সম্প্রসারণ করার।

গৌরিপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ফুড প্রসেসিং এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে স্বামীর সহায়তায় প্রিয়া’স হোম কিচেন নামে খোলা হয় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সকল প্রকার হোম মেইড ফুড কাস্টমাইজড খাবার ও বেকিং আইটেম এর অর্ডার অর্ডার নেওয়া হয় এবং বিভিন্ন মাছের শুটকি আইটেম পাওয়া যায় ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সংলগ্ন তার বাসাতে। আবার এই প্রতিষ্ঠানের আয় দিয়ে গড়ে তুলেছেন স্বামীর জন্য খাজা বাবা রেন্ট-এ কার ওয়াশ এন্ড সার্ভিসিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ৪০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান প্রিয়া। পাশাপশি ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কর্মসংস্থান হয়েছে ১ জনের।

হোম ডেলিভারি ছাড়াও প্রতি মাসেই ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জায়গায় স্টল দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে নারী উদ্যোক্তা ছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসায়ের গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়েছেন। স্বামী দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার এখন অনেকটাই স্বচ্ছল। সমাজ ও পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে প্রথমে সমর্থন না পেলেও এখন অনেকেই উৎসাহ দেন এগিয়ে যাওয়ার জন্য। শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করায় উপজেলা পর্যায়ে এবছর শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।

উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে প্রিয়া জানান, নিজের চেষ্টা এবং কাজের সাথে সাহস নিয়ে লেগে থাকা ও স্বামীর সহায়তায় আজকে আমি সফলতার মুখ দেখছি। আগামীতে ময়মনসিংহ শহরে আমার ব্যবসার ব্রাঞ্চ খুলে সুনামের সাথে ব্যবসা করতে চাই। তবে এই মুহূর্তে আমার কিছু ব্যাংক ঋণ হলে ব্যবসায় আরো সফলতা আসতো।

(এন/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩)