প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
টাঙ্গাইলে আমের মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ
২০২৩ ফেব্রুয়ারি ২৮ ১৮:২২:২৪.jpg)
মো: সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : প্রকৃতির খেয়ালে শীতের বিদায়ী ঘণ্টায় আর ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতির কাঁধে হাত রেখে চলছে প্রেম প্রেম খেলা। সকাল কিবা সাঁঝে অথবা অলস দুপুরে প্রকৃতির পানে তন্ময় তাকিয়ে থাকা সাজানো গোছানো পরিপাটি সোনার বাংলা যেন এই বসন্তে আরো জীবন্ত হয়ে উঠে। এমন বাংলার প্রেমে পরেনি কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সময়ের পালাবদলে প্রকৃতির এই খেলায় ঋতুরাজ বসন্তে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। আগুন ঝরা ফাল্গুনের আহ্বানে শিমুল ফুটেছে, পলাশ ফুটেছে। নানা ফুলের সঙ্গে প্রকৃতিকে অপরুপ করে তুলছে আমের মুকুল। আমের মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। মুকুলের মনকাড়া সুমিষ্ট সুবাসে আন্দোলিত হচ্ছে মানুষের হৃদয়।তাইতো কবি গুরু গেয়ে উঠলেন-"ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,মরি হায়, হায় রে"।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলার সমতল ও পাহাড়ি অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি আম গাছের সারি। সারি সারি গাছে শোভা পাচ্ছে সোনা রঙের মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। আর দক্ষিণা হাওয়ায় আম্রমুকুলের ঘ্রাণে উতলা গ্রামের মেঠোপথ। এক বুক আশা নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন আমচাষীরা। আমের ফলন নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরা। পুষ্টিমান এবং স্বাদ-গন্ধে আম একটি অতুলনীয় রসালো ফল। তবে আমের বিভিন্ন জাত রয়েছে।
নাগরপুর উপজেলার পংবাইজোড়া গ্রামের আম চাষি মো: হাবিবুর রহমান হাবিব ও নরদোহী গ্রামের মো: উজ্জ্বল মিয়া জানান, এ বছরে আবহাওয়া আমের মুকুলের জন্য বেশ অনুকূলে। টানা শীত ও কুয়াশার দাপট কেটে আবহাওয়া আমের মুকুলের অনুকূলে এসেছে। গতবারের মতো এ মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়ার তেমন বিপর্যয়ও ঘটেনি। এরই মধ্যে আমের গাছে গাছে মুকুল ব্যাপকভাবে এসেছে। আশা করছে ভরা ফাল্গুনে এবার আম গাছে ব্যাপক আম ধরবে। মুকুল আসার পর থেকেই তারা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন। মুকুল রোগ বালাইয়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করছেন তারা। শীলা বৃষ্টি হলে আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। আবহাওয়া ও প্রকৃতির দুর্ভোগ নিয়েই যথেষ্ট শঙ্কায় রয়েছে এই আম চাষিরা। তবে গাছে গাছে আমের যেভাবে মুকুল এসেছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের ব্যাম্পার ফলন হবে বলে জানান।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আ: মতিন বিশ্বাস বলেন,বরাবরারের মতই কৃষকের যেকোন প্রয়োজনে কৃষি অধিদপ্তর পরামর্শ ও সহযোগী করে আসছে। গাছে গাছে আমের মকুল শোভা পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমচাষীদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে ও বালাই নাশক স্প্রে করা হয়েছে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের ব্যাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আহ্সানুল বাসার জানান, জেলায় প্রায় ৫৭৮৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৬৫ হেক্টর বেশি।আম চাষ যোগ্য জমির মধ্যে বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল মধুপুর,ঘাটাইল ও সখিপুরে সবচেয়ে বেশি আম চাষ করেন আমাদের আম চাষিরা। জেলায় আমচাষীদের ট্রেনিং, স্প্রে ও সারের ব্যবস্থা করেছে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি অধিদপ্তর। আম চাষীদের আমের মুকুল আসার আগে ও গুটি ধরার পরে দুটি স্প্রে করার জন্য ট্রেনিং এ বলা হয়েছে। তবে আম চাষের ক্ষেত্রে 'অল্টারনেট বেয়ারিং ' একটা সমস্যা রয়েছে। আর এ সমস্যার কারনেই আম উৎপাদন কম বেশি হয়ে থাকে। এটা আমের একটি 'জেনেটিক' বিষয়। এ সমস্যা কাটাতে কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী আমচাষীরা টাঙ্গাইলে আম্রপালি, বারি আম ৪ ও বারি আম ১১ জাতের চাষ করছেন। আশার কথা হলো, আম গাছে যথেষ্ট পরিমাণ মুকুল দেখা যাচ্ছে। আবহাওয়াও অনুকূলে। এ বছর মকুলের সময় যেহেতু বৃষ্টি নেই তাই জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আম উৎপাদিত হবে- এমনটাই আশা করছি।
(এসএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩)