ঢাকা, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

অত্যাচার সইতে না পেরে মাদকাসক্ত ছেলেকে গলাকেটে হত্যা করলো বাবা

২০২৩ মে ০৮ ১৯:০১:২০
অত্যাচার সইতে না পেরে মাদকাসক্ত ছেলেকে গলাকেটে হত্যা করলো বাবা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : গাজীপুরের সদর উপজেলার বানিয়ারচালা এলাকায় মাদকাসক্ত ছেলেকে গলাকেটে হত্যার অভিযোগে বাবাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ গাজীপুর ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে বাবা।

সোমবার (৮ মে) বিকেলে গাজীপুর ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, গত শনিবার (৬ মে) সন্ধ্যায় গাজীপুরের সদর উপজেলার বানিয়ারচালা এলাকার মো. হযরত আলীর ভাড়া বাড়ির একটি ঘর থেকে মো. আশরাফুল আলমের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে জয়দেবপুর থানা। ছেলে হত্যার ঘটনায় নিহতের পরদিন রোববার (৮ মে) মা মোছা. দিলুয়ারা আক্তার বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি গাজীপুর পিবিআই হত্যার রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে রোববার রাত ১১টায় নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কান্দুরা এলাকা থেকে ছেলে হত্যার অভিযোগে বাবা ওমর ফারুককে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার বাবা মো. ওমর ফারুক (৬০) নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার কানুহারী গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। সে পরিবার নিয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার বানিয়ারচালা উত্তরপাড়া গ্রামের হাজী মো: হযরত আলীর বাড়িতে ভাড়া থাকতো। ওই বাড়িতেই শনিবার ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৩৩)কে গলাকেটে হত্যার পর পালিয়ে যায় সে।

নিহত আশরাফুল ইসলাম তার বড় ছেলে। চাকুরির সুবাদে বাবা ওমর ফারুক গাজীপুরের বানিয়ারচালা এলাকায় ভাড়া থাকেন। আশরাফুল নিজে নিজে সাত-আটটি বিয়ে করে বিভিন্ন জায়গায় চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াতো।

তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান জানান, পরিবার নিয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার বানিয়ার চালা উত্তরপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন ওমর ফারুক। নিহত আশরাফুল ইসলাম তার বড় ছেলে। আশরাফুল নিজে নিজে সাত-আটটি বিয়ে করে বিভিন্ন জায়গায় চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াতো। বড় ছেলে আশরাফুল আলম বিভিন্ন ধরনের নেশা খেলে বাসায় আসতো এবং নেশার জন্য টাকা দাবি করতো। তার বাবা-মা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার করতো। গত শুক্রবার (৫ মে) রাতে আশরাফুল বাজার থেকে একটি ধারালো চাপাতি কিনে ভাড়া বাসায় আনে এবং শ্বশুড়বাড়ি যেতে বাবা ওমর ফারুকের মাসিক বেতন ৯ হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা চায়। বাবা-মা টাকা দিতে না চাইলে বাজার থেকে কেনা চাপাতি দিয়ে তাদের টুকরো টুকরো করে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। ওইদিন রাতে ছেলে আশরাফুল বাসায় আসায় রুমের স্বল্পতার কারণে আশরাফুল ও তার বাবা তাদের ভাড়া ঘরে এবং মা পাশের রুমের ভাড়াটিয়া শ্রাবণীর ঘরে রাত যাপন করে। রাত সাড়ে তিনটায় বাবা ওমর ফারুক তার স্ত্রীকে ফোন করে দ্রুত ঘরের বাইরে আসতে বলে। স্ত্রী বাইরে আসলে ওমর ফারুক তাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হয়ে বাঘের বাজার বাস স্ট্যান্ডে আসে। এসময় স্ত্রী তাকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ওমর ফারুক জানায়, ভাড়াকৃত রুমে ছেলে আশরাফুলকে ঘুমন্ত অবস্থায় ছেলের কেনা চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

গাজীপুর ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, ঘটনায় জড়িত আসামি ওমর ফারুক ও নিহত আশরাফুল সম্পর্কে পিতা-পুত্র। মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পেরে ক্ষোভে দুঃখে বাবা সন্তানকে গলাকেটে হত্যা করেছে। একমাত্র আসামি ওমর ফারুককে নেত্রকোনা গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামী ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

(এস/এসপি/মে ০৮, ২০২৩)