ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » পাশে দাঁড়াই » বিস্তারিত

বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু আকাশ

২০২৩ মে ১২ ১৮:২২:০৩
বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু আকাশ

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছে, শিশু আকাশ (৪)। বিরল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বনগাঁও পুর্বপাড়া বাঁধসংলগ্ন আরজিনা-জুয়েল দম্পত্তির ঘরে দু’টি ছেলে সন্তান। বড় ছেলে সুস্থ স্বাভাবিক হলেও ছোট ছেলে আকাশ জন্মের মাত্র ১ মাস অতিবাহিত হতে না হতেই গায়ে অজ্ঞাতনামা চর্ম রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে।

পর্যাক্রমে হাতে-পায়ে-গলায়সহ গোটা শরীরে অজ্ঞাতনামা চর্মরোগ ছড়িয়ে পরে। দেখতে ফাঙ্গাস জাতীয় এক ধরণের পদার্থ দেখা দেয়। যা প্রচুর চুলকায় এবং অনেকটা খসখসে এবং কালো দাগ গোটা শরীরে দেখা দিয়েছে। বাবা দিনমুজুর জুয়েল-আরজিনা দম্পত্তি দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ধরে সন্তানের অজ্ঞাতনামা চর্মরোগের চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছে। দুরারোগে আক্রান্ত হয়ে ৪ বছর থেকে ভুগছে শিশু আকাশ।

ভারত সীমান্ত ঘেঁষা বিরল উপজেলার ০৮নং কামদেবপুর ইউনিয়নের বনগাঁও পুর্বপাড়া বাঁধসংলগ্ন এলাকায় দুরারোগ্য বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু আকাশের বাড়ী।

দুরারোগ্য বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু আকাশের মা আরজিনা বেগম কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, তাঁর স্বামী দিনমুজুরের কাজ করে কোনভাবে সংসার পরিচালনা করে আসছে। আমার ২টি ছেলে সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের বয়স ৬ বছর। ছোট ছেলে আকাশ জন্মের ১ মাস যেতে না যেতেই আকাশের শরীরে চর্মরোগের দেখা দিলে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের চিকিৎসা নেই। পর্যায়ক্রমে শীররের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যেতে থাকলে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা নেই। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা গ্রহন করা সম্ভব হয়নি। এখন এলাকাবাসীর সহায়তায় শিশুটিকে রংপুরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবে বলে অভিভাকেরা জানায়।

দীর্ঘ ৪ বছর থেকে দুরারোগে আক্রান্ত সন্তানের চিকিৎসার যোগান দিতে দিনমুজুর স্বামীর পক্ষে সম্ভব আর হচ্ছে না। নিজেও বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করে যা পাই সংসারে যোগান দিতেই চলে যায় অর্থের অভাবে ঠিকমত দুরারোগে আক্রান্ত আকাশের আর ঠিকমত চিকিৎসা করা হয়না বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরে মা আরজিনা।

দিনাজপুর জেলার সির্ভিস সার্জন ডা:এইচ এম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান,',বিরল এই রোগটি জেনেটিক স্কীন ডিজিজ(ইকথিওসিস), সূর্যের আলো তে বৃদ্ধি পাবে, এটা নির্মূল হবে না তবে চিকিৎসা দ্বারা কমানো যেতে পারে।

প্রতিবেশি একনারী মোসলেমা খাতুন জানান, শিশু টি জন্মের এক মাস পরে রোগটি দেখা দেয়, সে অন্য শিশুদের সাথে স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা করতে পারেনা। মাটিতে পড়ে গেলে চামড়া ফেটে রক্ত বের হয় শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুর ইসলাম জানান, শিশুটির চিকিৎসার জন্য আমরাও সহযোগিতা করে থাকি। রংপুরে চিকিৎসককে দেখাতে নিয়ে যাবে এজন্য আমি টাকাও দিয়েছি। শিশুটিকে তার অভিভাকেরা রংপুরে নিয়ে গেছে।'

শিশুটির দাদি রহিমা বেগম জানান, বাচ্চা সব খায় যা রান্না হয় ভালো মন্দ সব খাবার খায় কিন্তু রোগ কমে না দিন দিন বেড়েই চলেছে আকাশের চর্ম রোগ। তাই অজানা এ চর্মরোগ থেকে মুক্তি পেতে কেউ শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিলে তবেই সম্ভব ওই দম্পত্তির পক্ষে উন্নত চিকিৎসার, নতুবা সম্ভব হচ্ছে না। শিশুর চিকিৎসার ব্যাপারে দরিদ্র পিতা- মাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

শিশুর চিকিৎসার বিষয়ে স্থানীয় যুবক শামসুজ্জোহা বলেন, এই শিশুটি র জন্য একটি গানের কলি মনে পড়ছে, 'মানুষ মানুষের জন্যে-জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভুতি কি
মানুষ পেতে পারে না।'

(এস/এসপি/মে ১২, ২০২৩)