ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচ্ছদ » আইন আদালত » বিস্তারিত

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

রাজনীতিবিদরা রক্ষক থেকে ভক্ষক হলে জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে

২০২৩ মে ৩০ ১৭:১০:৩৮
রাজনীতিবিদরা রক্ষক থেকে ভক্ষক হলে জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে

স্টাফ রিপোর্টার : রাজনীতিকরা হলেন দেশের রক্ষক। তারা (রাজনীতিক) রক্ষক হয়ে যদি ভক্ষক হয়ে যান তাহলে পুরো দেশ ও জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন উচ্চ আদালত হাইকোর্ট। টুকু ও আমান এবং তার স্ত্রীর রায় ঘোষণার পর মঙ্গলবার (৩০ মে) বিষয়টি সাংবাদিকদের বলেছেন দুদকের সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

এদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যা্টর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন, বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড বহাল রয়েছে। টুকুর ৯ বছর আর আমানের দুটি ধারায় (২৬ এবং ২৭) ১০ এবং ৩ মোট ১৩ বছর, আর তার স্ত্রীর তিন বছরের সাজা বহাল রেখেছেন আদালত। রায়ের কপিটা হাতে পাওয়ার পর দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাজনীতিকরা হলেন রক্ষক, তারা কখনো বক্ষকের ভূমিকায় থাকতে পারেন না। আফ্রিকান দেশের প্রধানের রেফারেন্স দিয়েছেন। রাজনীতিকরা সাধারণভাবে জীবন-যাপন করতে বলেছেন, আর তারা সাধরণ জীবন-যাপন না করলে মানুষের সেবা করতে পারবেন না। বাস্তবে এটা সম্ভব কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, উচ্চ আদালত একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

ভারতের জয় ললিতার প্রসঙ্গ কেন এ মামলায় আসলো জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জয়ললিতার বিষয়টি দুদকের আইনজীবী রেফারেন্স হিসেবে বলেছিলেন, তাই এটি এখানে এসছে।

রাজনীতিকরা যদি দেশের করাপশনের সঙ্গে জড়িত হয় তা হলে দেশের ভবিষ্যাৎ কী হবে বলে প্রশ্ন তুলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সে বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন আদালত। রায় প্রকাশের পর পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আরও বেশি জানা যাবে বলেও জানান দুদকের আইনজীবী।

এর আগে রাজনীতিকদের ভক্ষক নয়, দেশের সম্পদের রক্ষক হতে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (৩০ মে) বিএনপির দুই নেতার দুর্নীতি মামলার রায় বহাল রেখে দেওয়া এক পর্যবেক্ষণে এ মন্তব্য করেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

মোট চারশ পৃষ্ঠার রায়ে দুর্নীতির বিষয়ে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ দেন আদালত। আদালত বলেছেন, রাজনীতিকরা দেশের সম্পদের রক্ষক হবেন, ভক্ষক নয়।

রাজনীতিকরা জনগণ ও দেশের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করেই রাজনীতিতে জড়িত হন উল্লেখ করে আদালত বলেন, জনগণ ও দেশের কল্যাণের জন্য এক ধরনের মহান ত্যাগ ও নিষ্ঠার জন্য কাজ করে রাজনীতিকরা।

টাকা উপার্জনের অনেক পথ রয়েছে। বৈধ ও আইনগতভাবে অনেকভাবেই টাকা উপার্জন করা যায়। কিন্তু রাজনীতি কখনো টাকা অর্থ উপাজনের পেশা হতে পারে না। রাজনীতিকেরা সময় ব্যয় করেন মানুষ ও দেশের কল্যাণে।

এ অর্থ উপার্জনের পেছনে রাজনীতিতে লিপ্ত হওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন আদালত। দেশের সব মানুষ ও জনসাধারনের ওপর দুর্নীতি বিস্তর প্রভাব পড়ে।

এ বিশ্বায়নের পরিবর্তনের অপেক্ষায় দেশের নাগরিকরা বসে থাকতে পারে না। আমাদের প্রত্যেককে সেই পরিবর্তনের অংশ হতে হবে। বাংলাদেশিদের জন্য বাংলাদেশি ছাড়া কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাইকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।

একটি বৈশ্বিক আন্দোলন হিসেবে, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বে এবং বাংলাদেশে দুর্নীতির অবসান ঘটানো, তা যেখানেই হোক বা যে রূপেই হোক না কেন।

এর আগে বিএনপির দুই নেতা আমান উল্লাহ আমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের পযর্বেক্ষণে এসব কথা বলেন উচ্চ আদালত।

(ওএস/এসপি/মে ৩০, ২০২৩)