ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » খেলা » বিস্তারিত

দিয়াবাতে-আলফাজের স্বপ্নের রাত

২০২৩ জুন ০১ ১৮:১৮:২৩
দিয়াবাতে-আলফাজের স্বপ্নের রাত

স্পোর্টস ডেস্ক : ‘স্বপ্নের ফাইনাল’ বলতে যা বোঝায় ফুটবলামোদীরা আক্ষরিক অর্থেই সেটা দেখলেন মঙ্গলবার। ক্ষণে ক্ষণে রং বদলানো ম্যাচ জয়ের পর থেকে উৎসবের আমেজে ভাসছে গোটা মোহামেডান শিবির। উৎসবের কেন্দ্রে আছেন ফাইনালের নায়ক সুলেমান দিয়াবাতে ও কোচ আলফাজ আহমেদ। দিয়াবাতের কল্যাণে ফেডারেশন কাপ ফাইনাল স্বপ্নের মতো হয়েছে; আলফাজ টাচ লাইনে থেকে মোহামেডানকে বদলে দেওয়ার নায়ক। দুই তারকার কথোপকথন নিয়েই সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন।

মাঠের নায়ক দিয়াবাতে

ম্যাচটা সবার জন্যই ছিল বেশ কঠিন। এমন ম্যাচে একাধিকবার পিছিয়ে যাওয়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। কঠিন কাজটা আমরা করতে পেরেছি হার না মানা মানসিকতা ও কঠোর মনোবলের কারণে। এমন দলকে নেতৃত্ব দিতে পেরে আমি গর্বিত।

প্রথমার্ধে আমরা ০-২ গোলে পিছিয়ে ছিলাম। মাঝ বিরতির সময় আমি সতীর্থদের বলেছি—‘এখনও সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। হাল ছাড়া যাবে না। ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। আমরা দলগতভাবে নিজেদের মতো করে চেষ্টা করে যাব। সেটা শেষ পর্যন্ত করতে হবে। সুযোগ এলে কাজে লাগাতে হবে।’ আমার সে ডাকে সতীর্থরা সাড়া দিয়েছেন। তাদের নিয়ে আমি গর্বিত। সত্যিই স্বপ্নের মতো একটা ম্যাচ খেলেছি, স্বপ্নের মতো একটা রাত কাটিয়েছি।

ম্যাচের পরই আমি পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছি। উৎসবের মুহূর্তটা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। ফেডারেশন কাপ ফাইনালের অমন নৈপুণ্যের বিশেষ কোনো ফর্মুলা নেই। ফুটবল মাঠে আমি বরাবরই শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এ ম্যাচেও সেটা করেছি। বিশ্বাস ছিল, সুযোগ আসবেই। চেষ্টা করেছি সে সুযোগ কাজে লাগাতে। সতীর্থদের সমর্থন, সহযোগিতা ছাড়া এমন ম্যাচ জেতা কঠিন নয়, অসম্ভব ছিল। আমি মনে করি এ সাফল্যের পেছনে বিশেষভাবে কারও কৃতিত্ব নেই, এটা ছিল দারুণ দলগত প্রচেষ্টার ফল।

যেখানে ফুটবলার, কোচিং স্টাফ, ক্লাব অফিসিয়াল থেকে শুরু করে সর্বস্তরের ব্যক্তিদের সমান ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের হয়ে খেলার আগ্রহ নিয়ে আগেও কথা বলেছি। আমি এখনো এ বিষয়ে আগ্রহী। দীর্ঘদিন ধরে আমি এখানে খেলছি। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। এ দেশের হয়ে খেলতে চাই। কিন্তু আমি নিজে থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট চাইতে যাব না। বাংলাদেশ ফুটবল নীতিনির্ধারকরা যদি মনে করেন আমাকে খেলাবেন, আমি তাদের ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত। বিষয়টা এখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ওপর নির্ভর করছে।

ডাগআউটের নায়ক আলফাজ

যে প্রক্রিয়ায় দল জিতেছে সেটা ছিল অসাধারণ। সমর্থকদের চাপ, সেটা দ্বিগুণ হয়েছিল পিছিয়ে যাওয়ার পর। আমরা একাধিকবার ম্যাচে পিছিয়ে পড়েছি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সব কৃতিত্ব ফুটবলারদের। তাদের প্রচেষ্টা ছিল অসাধারণ। ক্লাবের প্রতি তাদের নিবেদন ছিল বিস্ময়কর! সুলেমান দিয়াবাতে লড়াকু, সেটা আবারও প্রমাণ করল সে। ম্যাচে মুজাফফর মুজাফফরভ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দেখিয়েছে।

হাতে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়েও দলের জন্য লড়াই করেছে এ ফুটবলার। ম্যাচ চলাকালে তো বটেই, ম্যাচের পরও আমরা একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। সে ঘোর কাটতে অনেক সময় লেগেছে। ম্যাচের পর আমার এবং ক্লাবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত সবার ভালো ঘুম হয়েছে। মোহামেডানে অনেকদিন পর এসেছে এমন রাত। কিছুদিন ধরেই ফাইনাল-সংক্রান্ত বিষয়ে ডুবে ছিলাম আমরা। তার সমাপ্তি হয়েছে দারুণ।

এমন ম্যাচ জয়ের পর উৎসব-উচ্ছ্বাস প্রত্যাশিতই ছিল। ক্লাবে সবাই বেশ মজা করেছে। এ দৃশ্যটা আমাদের পুরোনো দিনে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা যখন খেলেছি, তখন সাফল্যের পর এমন উৎসব হতো। ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই চান মোহামেডানে এমন উৎসব নিয়মিত হোক। এ সাফল্যের পর আসন্ন মৌসুম নিয়ে কথা হবে স্বাভাবিক, সেটা হচ্ছেও। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ক্লাব অথরিটির সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার এখনো কথা হয়নি। সিদ্ধান্ত ছিল এ মৌসুমের বাকি অংশে কোচের দায়িত্ব পালন করব আমি।

পরবর্তী সময়ে বিদেশি কোচ আনা হতে পারে। দায়িত্ব গ্রহণের পর মোহামেডানের খেলার ধরন নিয়েও কথা হচ্ছে। আসলে একেক কোচ একেক দর্শনে দলকে খেলান। সবার স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। সেটা আমারও রয়েছে। আমার কোচিং ও কৌশলে খেলাটা বর্তমান স্কোয়াডের সদস্যদের জন্য হয়তো সহজ। এটিও পরিবর্তনের একটা কারণ হতে পারে। মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ বরাবরই ভিন্নমাত্রায় পৌঁছায়। সেটা আরও একবার প্রমাণ হলো। এমন ম্যাচ নিয়ে আমি গর্বিত, গর্বিত গোটা দল নিয়ে। মোহামেডান ক্লাবসংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।

(ওএস/এসপি/জুন ০১, ২০২৩)