ঢাকা, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

প্রচ্ছদ » বিশেষ খবর » বিস্তারিত

পঞ্চগড় মুক্তাঞ্চল: নৈসর্গিক প্রকৃতির রূপসী কন্যা

২০২৩ জুন ২৫ ১৫:৪৩:৫৪
পঞ্চগড় মুক্তাঞ্চল: নৈসর্গিক প্রকৃতির রূপসী কন্যা

রহিম আব্দুর রহিম


দেশের উত্তর সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়। জেলার ভৌগোলিক অবস্থান অন্যান্য সীমান্ত জেলার মত নয়। ৫টি প্রশাসনিক উপজেলা, ৪৩টি ইউনিয়ন, ৩টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নৈসর্গিক।জেলার তিন দিকে ভারত। এর মাঝেই অবস্থান সীমান্তের রূপসী কন্যা পঞ্চগড় জেলা। আজ থেকে প্রায় শত বছর আগে এই ভূখণ্ডের সৌন্দর্য-পরিমন্ডল প্রাণান্ত ও উজ্জ্বীবিত ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সৃষ্ট ৩৩টি প্রবাহমান নদীর গতিপথের কলকল ছলছল শব্দে। যে নদী পথেই বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলের জনযোগাযোগের বড় মাধ্যম ছিল পালতোলা বা দাঁড়টানা নৌকা, ছিল স্টীমারের মত যান্ত্রিক জলযানও। আস্তে আস্তে সেই স্বর্গময় প্রকৃতি বিলীন হয়ে পড়েছে।সারা দেশের সেকালের সেই সৌন্দর্যময় প্রকৃতি এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায়, কয়েক ধাপ রূপ লাবণ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আগের মত নেই প্রকৃতির যশ-জৌলুশ,রূপ-রস। তবে পঞ্চগড়ের প্রকৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি; রবং নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সমতল ভূমিতে সবুজ চা বাগানের মায়াবী প্রকৃতি মানবমনের মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি করেছে। এখনও স্রোতস্বীনি করতোয়া ও চাওয়াই নদীর কলতান মনে করিয়ে দেয় দেশটি সত্যই নদীমাতা, এটাই সোনার বাংলা, আমাদের প্রাণের স্পন্দন, বেঁচে থাকার অবলম্বন।

ঈদ, পূজাপার্বণে প্রকৃতির সন্ধানে প্রকৃতি প্রেমীরা একজেলা থেকে অন্য জেলা,নিজ দেশে থেকে ভীনদেশ ভ্রমণ করেন,করে আসছেন, উপভোগ করছেন, স্রষ্টার সৃষ্টি। ঈদুল আযহায় প্রতিবছর ন্যায় এবারও হয়তবা যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর, বয়ঃবৃদ্ধরা তার মাতৃভূমির প্রাকৃতিক ঘ্রাণ নিতে মেতে উঠবে। এবার ঈদে পঞ্চগড়ে এরকম একটি প্রকৃতি নির্ভর স্থান বাছাই করতে পারেন।যেখানে গেলে মন প্রাণ ভরে উঠে প্রকৃতির মায়াবী টানে।

পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১৫কিলোমিটার উত্তরে,পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের শেষ উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত এবং সাতমেড়া ইউনিয়নের শেষ পূর্ব-উত্তরের 'একাত্তরের মুক্তাঞ্চল।' এলাকাটি ভারত থেকে বয়ে আসা চাওয়াই নদীর দু'ধারের সবুজ-শ্যামলীতে স্নান করা একটুকরো ভূস্বর্গ বলেই আপনার মনে হবে।পুরাতন চাওয়াই ব্রীজটি পরিত্যক্ত, ফলে এই ব্রীজে দাঁড়িয়ে চাওয়াই নদীর দু'ধারের প্রকৃতি-পরিবেশও উপভোগ করতে পারবেন। পাশে নির্মিত নতুন চাওয়াই ব্রীজ, যথেষ্ট দৃষ্টি নন্দন। নদীর কিনারাই দাঁড়িয়ে উত্তরদিকে যতদূর চোখ যায়, তাঁকিয়ে দেখুন,ওপারে প্রতিবেশী দেশ ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার গ্রামীণ বাংলার প্রকৃতি।

এপারের যেদিকেই তাঁকাবেন, ডানে-বামে, পেছনে সে কি অপূর্ব দৃশ্য! এযেনো, সবুজ-শ্যামলে ভরা পল্লী কবির গ্রামবাংলা, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা,আপনার -আমার এবং আমাদের স্বর্গীয় বাংলা। বিকাল ৫টা থেকে সূর্যাস্তমিত হবার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত যেকোন সময় এই স্বর্গে সপরিবারে আসতেই পারেন। নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই,পঞ্চগড় শান্তিপ্রিয় এলাকাকে।এছাড়া পাশেই রয়েছে অমরখানা বিজিবি ক্যাম্প।

এপারে বাংলাদেশের, ওপারে ভারতের সবুজ চা বাগান,নয়ন-মন জুড়িয়ে যাবে।নদীর স্রোতধারা, দুদেশের সীমান্তের প্রকৃতি; এযেনো সৌন্দর্যের মহাসমুদ্রে লুকিয়ে থাকা প্রকৃতির এক রহস্যঘেরা 'রূপসী কন্যা একাত্তরের মুক্তাঞ্চল!' ও হ্যা! আসল কথা বলাই হয়নি,পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া হাইওয়ে সড়ক উন্নয়নের নামে 'সড়ক বিভাগ যে নির্লজ্জ কাজ করছে, তাতে করে এই রাস্তাটি স্থায়ী মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। বিগত ছয় মাসের ব্যবধানে প্রায় ৪৬জনের প্রাণ গেছে।

প্রকৃতি প্রেমিরা মনে রাখবেন, আপনি বেঁচে আছেন বলেই,প্রকৃতি আপনার আপন হয়ে দাঁড়িয়েছে।অতএব, সাধু সাবধান, চলার পথে। তরুণ বাইকারদের মনে রাখতে হবে, "এই প্রকৃতি আপনার, আপনিই প্রকৃতির। আপনি বেঁচে থাকলেই প্রকৃতি আপনার মত মহামানবের সাণিধ্য পাবে; মৃত্যু অবধারিত জেনেও, চলার পথের ক্ষণিক রাজা হওয়া যাবে না। ক্ষণকালের রাজা বেশীক্ষণ টিকে না।কারো রাস্তায় মৃত্যু হোক এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। অতএব গাইতে থাকুন রবীন্দ্র নাথের অমর কবিতা,র"মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবন।" দেখতে থাকুন কবির, "এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবে নাকো তুমি,সকল দেশের রাণী সেজে আমার জন্মভূমি।"

লেখক: শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সাহিত্যিক।