প্রচ্ছদ » অগ্নিকন্যা » বিস্তারিত
টুঙ্গিপাড়ায় তরুণ উদ্যোক্তা উর্মি আক্তারের কেক সমাদৃত
২০২৩ জুলাই ১২ ১৬:০৫:৩৮তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : উদ্যোক্তা উর্মি আক্তারের কেক সাড়া জাগিয়েছেন। তার কেক ছাড়া জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী বা অন্যকোন অনুষ্ঠান জমেই না। তার কেকের স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। এই জন্য উর্মি আক্তারের কেকের চাহিদা ব্যাপক। তাই প্রতিদিন তিনি কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ পাউন্ড কেক বিক্রি করেন। কেক বিক্রি থেকে আয় করেন মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই তিনি পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন। আয়ের কিছু টাকা সঞ্চয় করছেন।
উর্মি আক্তার একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটাগাতী সাহাপাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের মেয়ে। পিতা হাফিজুর রহমান পাটগাতী বাজারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছেন উর্মি আক্তার। তিনি পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এসএসসি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছেন। প্রাথমিক ও জুনিয়রে পেয়েছেন বৃত্তি। এখন গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স ২য় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তৈরী করছেন কেক। তার কেক টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় জনপ্রিয় ও সমাদৃত হয়ে উঠেছে।
পাটাগাতী গ্রামে উর্মি আক্তারের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মধু মাসে তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় সব ধরনের ফলের গাছে আম সহ বাহারী ফল ঝুলছে। এছাড়া বাড়ির বিভিন্ন পাশে রকমারি ফুল আর একপাশে শোভাপাচ্ছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান। ফুল, ফল ও সবজিতে সাজানো বাড়িটি দেখতে মনোরম। তাদের ওয়াল সেট ঘরটি বেশ পরিপাটি। এই ঘরের একটি সুদৃশ্য কক্ষে রয়েছে কেক তৈরীর উপকরণ এবং ওভেন। ওই কক্ষেই শৈল্পিক হাতের নৈপূণ্যে উর্মি আক্তার তৈরী করেন কেক। এই কেকে ব্যাবহার করা হয় স্বাস্থ্যকর সব উপকরণ। কেক সাজানো হয় নান্দনিকতায়। এই কারণে উর্মি আক্তারের কেক টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় সর্বজন প্রিয় হয়ে উঠেছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শ্রীময়ী বাগচি বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী উর্মি আক্তার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার একজন সৃজনশীল তরুণী। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম টুঙ্গিপাড়ায় উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহন করেন। এখন থেকে উর্মি আক্তার কেক তৈরীর ওপর প্রশিক্ষণ নেন। তারপর কেক তৈরী শুরু করেন। তার কেকে স্বাস্থ্যসম্মত উপাদান ব্যবহার করা হয়। তার কেক খেতে সুস্বাদু। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এই কেক টুঙ্গিপাড়ার ঘরে ঘরে সমাদৃত। জন্মদিন বিবাহ বার্ষিকী সহ যে কোন অনুষ্ঠান আরো আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে উর্মি আক্তারের কেকে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশের অনুষ্ঠানেও উর্মি আক্তারের কেক স্থান করে নিয়েছে।
উদ্যোক্তা উর্মি আক্তার বলেন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ থেকে ২ বছর আগে কেক তৈরীর প্রশিক্ষণ গ্রহন করি। প্রশিক্ষণ পেয়ে কেক তৈরী শুরু করি। ফেসবুকে পেজ খুলে এই কেকের প্রচার প্রচারণা শুরু করি। তারপর থেকে অনলাইনে কেকের অর্ডার আসতে শুরু করে। এখন প্রতিদিন গড়ে ৫ পাউন্ড থেকে ১০ পাউন্ড কেক তৈরী করে বিক্রি করছি। প্রতি পাউন্ড কেক ৪৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। পড়াশোনার পাশাপাশি কেক তৈরী করে মাসে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করছি। এই টাকা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি। এছাড়া কিছু টাকা সঞ্চয় করছি। ভবিষ্যতে এ্যাডমিন ক্যাডার ও সেই সঙ্গে বড় উদ্যোক্তা হতে চাই। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটাগাতী সাহাপাড়া গ্রামের সজল সরকার বলেন, আমাদের গ্রামের উর্মি আক্তার খুবই মান সম্মত কেক তৈরী করেন। এই কেকের ডেকরেশন খুবই নান্দনিক। এই কেক সবার নজর কারে। কেক খেতে খুবই সুস্বাদু। তাই টুঙ্গিাপাড়া উপজেলায় উর্মি আক্তারের এই কেকে চাহিদা প্রচুর। কেক তৈরী করেই উর্মি আক্তার বেশ ভাল রোজগার করছেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন বলেন, ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ’ প্রশিক্ষণ গ্রহন করে উর্মি আক্তারের মতো আরো অনেকেই আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে আমরা সহেযোগিতা করেছি। তাই উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য টুঙ্গিপাড়া সহ আশপাশের উপজেলায় সমাদৃত হয়েছে। উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করার জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ সব সময় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার যুবকদের পাশে রয়েছে।
(টিবি/এসপি/জুলাই ১২, ২০২৩)