প্রচ্ছদ » পাশে দাঁড়াই » বিস্তারিত
জিপিএ -৫ পেয়েও চার অদম্য মেধাবীর প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন পূরণে অনেক বাধা
২০২৩ আগস্ট ০৭ ২০:০৭:১০সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র চার অদম্য মেধাবী আব্দুল মামুন হৃদয়, রিমন আহমেদ, মো: শাহীন ও মেহেদী হাসান নাঈম। প্রতিনিয়তই দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েও ওই চার অদম্য মেধাবীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন পূরণে অনেক বাঁধা। কীভাবে ভালো কলেজে ভর্তি হবে, কে যোগাবেন তাদের উচ্চ শিক্ষার খরচ, কোথায় থাকবে, কী খাবে, এই নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
দারিদ্র্যতা জয় করে ওই চার বন্ধু জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষাক মন্ডলি ও অভিাভাবকদের মুখে হাসি ফুটালেও এই দারিদ্র্যতাই এখন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাঁধার পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেও সকলেই সান্দিকোনা হলিচাইল্ড কিন্ডার গার্টেন এন্ড হাই স্কুলে প্লে গ্রুপ থেকে দশম শ্রেণি পড়াশোনা করেছে। সেক্ষেত্রে হলি চাইল্ড কিন্ডার গার্টেনের অনেক অবদান রয়েছে। চার মেধাবীর অর্থিক দৈন্যতা থাকলেও হলি চাইল্ড কিন্ডার গার্টেন তাদের বিনা পয়সায় লেখাপড়া করিয়েছে।
আব্দুল মামুন হৃদয়ের বাবা আব্দুল মান্নান স্ত্রী সন্তানদের কোন খুঁজ খবরই রাখেন না। হৃদয় দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। তার মা শহরের বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের বালুচর গ্রামের দিন মজুর নানার বাড়ি থেকেই মায়ের সহযোগীতায় চায়ের দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত হৃদয়। চরম দারিদ্র্যতার মাঝেও লেখাপড়া ছাড়েনি। অদম্য আগ্রহের ফলে সে জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েই জিপিএ-৫ পেয়েছে। আব্দুল মামুন হৃদয় তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, মায়ের স্বপ্ন পূরণে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে প্রকৌশলী হতে চাই। কিন্তু দারিদ্র্যতাই আজ বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে ভালো কলেজে ভর্তি হবো কোথায় থাকবো কি খাব সে চিন্তায় এখন হিমশিম খাচ্ছি। হৃদয়ের বাবার বাড়ি বড়গুনা জেলায় হলেও তার বাবা তাদেরকে ফেলে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে চলে যান।
রিমন আহমেদ কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের আটি গ্রামের কৃষি শ্রমিক আব্দুস ছাত্তারের ছেলে। অনেক অভাব অনটনের মধ্যেও জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে এবছর। রিমন ৫ম শ্রেণিতেও বৃত্তি পেয়েছিল। সেও প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রমিন আহমেদ জানায়, দারিদ্র্যতা জয় করে কীভাবে উচ্চ শিক্ষার পথে এগিয়ে যাবো সে কথাই এখন ভাবছি। তবে পেছন ফিরে তাকাব না। যদি আল্লাহ সহায় থাকেন কোথাও আটকাব না। রিমন তার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তশালী হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগীতা কামনা করে।
মো: শাহীনের বাবা একজন রিক্সাচালক। তার মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান। কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা গ্রামের রিপন মিয়ার ছেলে শাহীন। চার ভাই বোনের মধ্যে শাহীন সবার ছোট। বড় বোন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (প্রতিবন্ধী)। বাবার কোনো সহায় সম্পদ না থাকলেও একই গ্রামের নানার বাড়িতে সবাই বসবাস করে। তার নানাও একজন কৃষি শ্রমিক। মা-বাবা খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। শাহীনও জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সেও মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে প্রকৌশলী হয়ে দেশ ও দশের জন্য কাজ করতে চায়। কিন্তু শাহীন জানায় আগামীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অভাবই হয়তো তার বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
মেহেদী হাসান নাঈম। শত বাঁধা অপেক্ষা করে দারিদ্র্যতার সাথে পাল্লাদিয়ে জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের আটি গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল মিয়ার ছেলে নাঈম। সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও ভালো ফলাফল অর্জন করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। প্রকৌশলী হয়ে নাইমও দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করার ইচ্ছা তার। কিন্তু দারিদ্র্যতাই উচ্চ শিক্ষার গ্রহণের ক্ষেত্রে আজ তাকে ভাবিয়ে তুলছে। তবে নাঈমের ভাষ্য, আল্লাহ সহায় থাকলে কোন না কোন ভাবে আমি ও আমার মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করবই।
হলি চাইল্ড কিন্ডার গার্টেন এন্ড হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ইলিয়াস কাঞ্চন সুজন বলেন, ৪ মেধাবী আব্দুল মামুন হৃদয়, রিমন আহমেদ, মো: শাহীন ও মেহেদী হাসান নাঈমের ফলাফলে আমরা খুবই আনন্দিত। তাদের অভাব অনটন থাকায় আমরা বিনা পয়সায় তাদের পাঠদান দিয়েছি। এতে আমাদের কোন কষ্ট নেই। আমরা তাদেরকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। তারা চারজনই প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন দেখে। আল্লাহ যেনো তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তশালী ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করেন, সেই প্রার্থনা করছি।
জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মাহতাব উদ্দিন বলেন, চার মেধাবী ছাত্রকে নিয়ে তারাও গর্বিত। তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক কোন চাপ দেওয়া হয়নি। বরং সহযোগীতা করা হয়েছে। তিনিও তাদের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তশালী দেশ-বিদেশের হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগীতা কামনা করেন।
(এসবিএস/এএস/আগস্ট ০৭, ২০২৩)