ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

শুকনো মৌসুমের কাজ বর্ষা মৌসুমে, লক্ষ লক্ষ টাকার বালু বিক্রি

২০২৩ সেপ্টেম্বর ১৮ ২০:১২:২৭
শুকনো মৌসুমের কাজ বর্ষা মৌসুমে, লক্ষ লক্ষ টাকার বালু বিক্রি

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরবে ভেকু দিয়ে মাটি না কেটে লোড ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দেন ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের গোছামারা, রাজাকাটা, কান্দিপাড়া ও চাঁনপুর গ্রামের সংযোগ স্থল কোদালকাটি খাল কাটতে ব্যবহার করছে লোড ড্রেজার। ড্রেজার স্থাপন করেছেন মেসার্স মমিনুল হক এন্ড হাসান কনস্ট্রাকশন। ভেকু দিয়ে মাটি কাটার নিয়ম থাকলেও নেই ভেকুর কোন চিহ্ন। অবৈধ লোড ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ ঘনফুট বালু তুলে বিক্রি করছে অন্যত্র। এতে করে ঠিকাদার হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। অপরদিকে ক্ষতি হচ্ছে খাল ঘেঁষা কৃষকের শত শত বিঘা ফসলি জমি। জমিগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় জমি নির্ধারণ করে কাটা হচ্ছে না মাটি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আমরা আরওআর, সিএস, বিএস অনুযায়ী মালিক। প্রভাবশালী মহল স্থানীয় কিছু দুস্কৃতিদের সাথে নিয়ে আমাদের হুমকি ধামকি দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। সরকার নদী খননে ব্যাপক প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। এতে আমরা কৃষকরা অনেক খুশি। কিন্তু ঠিকাদাররা আমাদের সাথে কোন আলোচনা না করে নদী খননের জায়গা নির্ধারণ না করে ইচ্ছেমতো আমাদের জমি থেকে বালু উত্তোলন করছে। এতে করে নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে আমাদের শত শত একর জমি। নদী খননে আমাদের জমির নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে অনেক জমি।

এই কাজে সহযোগিতা করছেন, শিমুলকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সভাপতি আব্দুল আজিজ ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া, ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আল আমিন, শিমুলকান্দি মোছামারা গ্রামের বিএনপি নেতা ফরিদ মিয়া ও মুতি মিয়া।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ শিশু মিয়া বলেন, আমার বাবা বেঁচে নেই। নদীর পাড় ঘেঁষা আমাদের জমি। এই জমিতে চাষ করে আমাদের সংসার চলে। সরকারের নিয়ম অমান্য করে কতিপয় ব্যক্তিরা লোড ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করে অন্যান্য জমিতে ফেলছে ও বিক্রি করছে। আমাদের জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন এর নির্দেশে মেসার্স মুমিনুল হক এন্ড হাসান কন্ট্রাকশন জেভি নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্রীনগর ইউনিয়নের মোমেনুল হক সেলিম কে দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগ এনে একটি খোলা চিঠি লেখেন উক্ত গ্রামের ভোক্তভোগী ফসলী জমির মালিকগণ।

ভূক্তভোগী বাবুল মিয়া জানান, নদী খননের পক্ষে আমরা রয়েছি। তবে তা বর্ষাকালে নয়, শুকনা মৌসুমে করতে হবে। ঠিকাদাররা যদি মাটি কাটে তাতে আমাদের কোন বাধা নেই। এখন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে এতে আমাদের জমির নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আমাদের জমি নদীর গর্ভে বিলিন হলে আমরা না খেয়ে মরবো।

মো. শানু মিয়া, জসিম উদ্দিন, খোকন মিয়া, জাকির মিয়া, নূরুল ইসলাম, দ্বীন ইসলাম ও কুদ্রত আলী বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মাটি কাটবে আমাদের কোন বাধা নেই। ভৈরব শিমুলকান্দি ইউনিয়নে কোদালকাটি খাল আমাদের বাব দাদার আমলের। কোদালকাটির খালের পানি দিয়ে বাপ দাদারা জমিতে পানি দিত। এখন ওই খালে কিছু অসাধু ব্যক্তি ভেকু দিয়ে মাটি না কেটে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। আমরা তাদের বাধা দিলে তারা দা, বল্লম, লাঠি সোটা নিয়ে আমাদের উপর তেড়ে আসে। ড্রেজার দিয়ে বালু কাটলে শুকনা মৌসুমে আমরা জমি খুঁজে পাবো না। নদী খননের পক্ষে আমরা রয়েছি। বালু উত্তোলনকারীরা বিভিন্ন নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে হুমকি ধামকি দেয় আমাদের। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।

আমরা ভৈরব উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীর মাধ্যমে এও জানতে পারি যে, খালটির ৭০% মাটি ভেকু দিয়ে এবং ৩০% মাটি লেবার দিয়ে কাটার কথা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা না করে আমাদের ফসলি জমি হতে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে করে আমরা সাধারণ কৃষকদের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের জীবনের ভয় রয়েছে তাই প্রশাসনে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শিমুলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ভূইয়া রিপন সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুনেছি এলজিইডি থেকে কোদালকাটি খাল খননের টেন্ডার হয়েছে। ইতিমধ্যে কোদালকাটি খাল থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয় কৃষকদের দাবী শিডিউল অনুযায়ী মাটি কাটুক। আমিও চাই কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মধ্যেচর, কান্দি পাড়া ও গোছামারার শতাধিক কৃষকের অভিযোগ রয়েছে বালু উত্তোলনের বিষয়ে। ড্রেজার ব্যবহার না করে শুকনা মৌসুমে ভেকু দিয়ে মাটি কাটলে কৃষক বাঁচবে। সরকার মাটি কাটার জন্য টাকা দিয়েছে। মাটি কেটে বিক্রি করার কোন নিয়ম নেই।

উপজেলার কান্দিপাড়ার শেখ আজিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে যেভাবে বালু উত্তোলন করছে তাতে করে আমরা আমাদের জমিই খোঁজে পাবো না। নদী গর্ভে আমাদের জমি বিলিন হয়ে যাবে। ভেকু দিয়ে মাটি কাটুক তাতে আমাদের বাধা নেই। কিন্তু ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটলে আমাদের আপত্তি রয়েছে। কোদালকাটি নদীর উপর চারটি ব্রীজ রয়েছে। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন হলে যে কোন মুহুর্তে ব্রীজ ভেঙ্গে পড়বে। এতে করে এ অঞ্চলের মানুষের সাথে শহরের মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

ঠিকাদার মোমেনুল হক সেলিম এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, কিশোরগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর আমির হোসেন এর নির্দেশে আমরা ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করছি।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, এলজিইডি টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। খাল খননের নামে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া আমি এলজিইডি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবো।

কিশোরগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, কোদালকাটি খালে ভেকু দিয়ে শুকনা মৌসুমে খাল কাটার টেন্ডার দেয়া হয়েছে। বালু উত্তোলনের সাথে খাল খনন করার কোন সম্পর্ক নেই। শুকনো মৌসুম ছাড়া খাল কাটার কোন অনুমতি নেই। বর্ষা মৌসুমে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। ঠিকাদারদের বলা হয়েছে শুকনা মৌসুমে নকশা অনুযায়ী ডিজাইন করে ভেকু দিয়ে মাটি কাটতে হবে। মাটি কেটে খালের পাড় দেয়া যাবে, কিন্তু মাটি বিক্রি করা যাবে না। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় প্রশাসন নজরদারী করবে। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি অবগত নয়।

(কেএইচএফ/এএস/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩)