ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

প্রচ্ছদ » লাইফস্টাইল » বিস্তারিত

এবারের দুর্গাপূজার সাজ-পোশাক কেমন হবে?

২০২৩ অক্টোবর ২২ ১৬:১৩:১৮
এবারের দুর্গাপূজার সাজ-পোশাক কেমন হবে?

লাইফস্টাইল ডেস্ক : সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব হলো দুর্গাপূজা। প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত বাঙালি হিন্দুরা দুর্গাপূজা পালন করেন। একসময় নারীরা দুর্গাপূজা এলে লাল পেড়ে সাদা গরদ কিংবা জামদানিতে সেজে একে অপরের পায়ে আলতা দিয়ে মেতে উঠতো পূজার কাজে।

হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, আলতা ও সিঁদুর পবিত্রতার প্রতীক। ধারণা করা হয়, সিঁদুর আলতার লাল আর কাশফুলের সাদা- এই থেকেই এসেছে দুর্গাপূজায় লাল সাদার আধিক্য। তবে এখন পূজার ফ্যাশনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখনও পূজার ফ্যাশনে লাল, সাদার আধিক্য আছে, তবে এখন নারীরা দুর্গাপূজায় অন্য রঙের পোশাকও পরেন।

সুতি, ভয়েল, দোপিয়ান, মসলিন, গরদ ও বিভিন্ন ধরনের সিল্কের কাপড়ের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার কামিজের চাহিদা আছে। আধুনিক, সনাতনী, ঐতিহ্যবাহী যে কোনোভাবেই নিজেকে সাজিয়ে তোলার জন্য বাঙালিদের কাছে দুর্গাপূজা একটি অন্যতম মাধ্যম।

আজ শারদীয় দুর্গা উৎসবের মহা অষ্টমী। এই পূজা খুব জাঁকজমকপূর্ণ হয়। অষ্টমীতে সন্ধি পূজা ও কোথাও কোথাও কুমারী প‚জা হয়। সন্ধিপূজার থালা সাজায় মেয়েরা। ফল, নাড়ু, সন্দেশ, মিষ্টি, ফুল আলতা ও সিঁদুরের কৌটা দিয়ে সন্ধি পূজার থালা সাজানো হয়। তাই অষ্টমীর সাজ হওয়া উচিত একেবারে নিজস্ব ঢঙে।

সকালের অঞ্জলিতে কিংবা সন্ধিপূজায় সাধারণত লাল শাড়ি মানানসই। কাতান সাদার সাথে লাল পাড়ের শাড়ি পরার প্রচলন আছে অষ্টমীতে। আঁচলে বেশি কাজ আছে এমন লাল পাড়ের শাড়ি একপ্যাঁচ করেও পরতে পারেন। কপালে বড় লাল টিপ, গাঢ় লাল লিপস্টিক, চোখে কাজল ও হাতের পলায় নিজেকে সাজাতে পারেন।

শাখা পরলে সঙ্গে সোনার গয়নাও ভালো মানাবে। চুল সামনের দিকে সেট করে পেছনে কার্ল করে ছেড়ে রাখলে ভাল দেখাবে। কানের পেছনে গুঁজে দিতে পারেন বেলি ফুলের মালা। অষ্টমীর রাতে কমবেশি সবাই ঘুরতে যান। রাতের সাজটা হয় জমকালো। রাতের সাজে ভারী কাজের সিল্ক, কাতান ও মসলিনের কাপড় বেছে নিতে পারেন।

রাতের সাজের গয়নাও ভারি হতে হবে। যেহেতু পূজায় ঘুরতে বের হলে অনেক হাঁটতে হয়, তাই আরামদায়ক স্যান্ডেল পরতে হবে। এজন্য বেছে নিতে পারেন স্লিপার। শাড়ি পরতে না চাইলে সালোয়ার কামিজ কিংবা হাতের কাজের নকশা করা কুর্তা ও ফতুয়ার সঙ্গে লেগিংস বা জিনস পরতে পারেন।

রাতের সাজে ছেলেরা পাঞ্জাবির সাথে ধুতি, চুরিদার ও জিনস পরলে ভাল লাগবে। পায়ে মোকাসিন, দুই ফিতার স্যান্ডেল ছাড়াও স্টাইলিশ চটি পরতে পারেন। ইচ্ছেমতো চুল সাজাতে মাঝারি আকারের চুল ছাঁট ভালো। অল্প জেল দিয়ে চুল ভেজা ভেজা রাখলেও ভালো লাগবে। তাছাড়া সিল্কের পাঞ্জাবি পরলে চুলটা ব্যাক ব্রাশ করেও নিতে পারেন।

নবমীর দিন সকালে মন্দিরের পূজা অর্চনা শেষ করে অনেকেই বাইরে ঘুরতে বের হন। কারণ দশমীতে প্রত্যেকের বাসায় অনেক কাজ থাকে। ফলে বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়না। বিকেলে ঘুরতে বের হলে অবশ্যই পোশাকে থাকবে রঙের আধিক্য।

রং বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক, ভারি গহনা, ভারি মেকআপ, বাহারি চুলের সাজ ও তাজা ফুল এদিনের সাজের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। তাই প্রতিদিন একই ধরনের বা ডিজাইনের পোশাক না পরে একটু ভিন্নতা আনতে পারেন নবমীতে। যেমন বিভিন্ন প্যাটার্নের ব্লাউজ ও শাড়ি পরার ঢঙে আনতে পারেন পরিবর্তন।

একইভাবে সালোয়ার কামিজের ক্ষেত্রে কামিজটা ঠিক রেখে ওড়না ও সালোয়ারের পরিবর্তনে সাজে আসতে পারে ভিন্নতা। আজকাল নবমীর সাজে মেকআপের চেয়ে গয়নাকে প্রাধান্য দেন অনেকেই। এথনিক জুয়েলারি এদিন ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক আমেজ আনবে।

দুর্গাপূজার বিশেষ আকর্ষণ থাকে দশমীর দিনে। দশমীতে ঐতিহ্যবাহী পোশাক প্রাধান্য পায়। দশমীর সাজ মানে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, লাল রঙের শাড়ি কিংবা সাদা জামদানী আর হাতে নকশা করা গাঢ় লাল ব্লাউজ। গরদের লাল, সাদা শাড়িতেও ফুটে ওঠে আভিজাত্য।

গতানুগতিক লাল ব্লাউজের বদলে অন্যান্য রং ও ডিজাইনের ব্লাউজও পরতে পারেন। দশমীতে সোনা পরতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। ভারি রূপার গয়নাও সাজে এনে দিতে পারে আভিজাত্য। সিথির সিঁদুর একটু গাঢ় রাখলেই ভালো মানাবে।

দশমীতে এক প্যাঁচে শাড়ি পরার প্রচলন আছে। সামনের দিকের চুলগুলো পেঁচিয়ে পেছনে নিয়ে খোঁপা করতে পারেন। এছাড়া লাল, সাদা শাড়ির সঙ্গে মানাবে ঘাড়ের কাছে আলগা হাতখোঁপা।

খোঁপায় জড়িয়ে নিতে পারেন সাদা ফুল। দশমীর সাজে একটু নতুনত্ব আনতে চান অনেকেই। তবে সেটা যেন বেশি জমকালো না হয়। চোখে যাতে আরাম লাগে সেই দিকটি বিবেচনা করে সাজতে হবে।

দশমীতে হয় প্রতিমার বিসর্জন। এই দিনেও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে পূজার থালা সাজানো হয়। অঞ্চলভেদে থালা সাজানোর উপকরণে ভিন্নতা থাকলেও আলতা, সিঁদুর ও মিষ্টি থাকেই।

প্রতিমাকে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নারীরাও মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। এই সিঁদুর খেলা শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাই নয়, এর মধ্য দিয়ে বাড়ে সামাজিকতাও।

শেষকথা ষষ্ঠী থেকে দশমী- দুর্গাপূজা পাঁচদিন হওয়ায় মনের মতো সাজার সুযোগ থাকে। তবে সাজতে হবে আপনার রুচি, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২২, ২০২৩)